চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরের (সিপিইসি) আওতায় পাকিস্তানে বিদ্যুৎ প্রকল্পে বিনিয়োগ করে বেইজিং। এরই মধ্যে এ প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ ৩১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। ঋণের কিস্তি হিসেবে ৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধের কথা রয়েছে পাকিস্তানের। তবে এ ঋণ পরিশোধে দেশটি ব্যর্থ হতে পারে এমন আশঙ্কায় তা পুনর্গঠনে অস্বীকৃতি জানিয়েছে চীন। খবর এশিয়া টাইমস।
চীনের কাছ থেকে ঋণ হিসেবে নেয়া বিপুল অংকের অর্থ ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার বা আইপিপি সমৃদ্ধ করার জন্য নেয়া হয়েছিল। টেক অর পে পাওয়ার জেনারেশন কন্ট্রাক্টের (হয় বিদ্যুৎ দেবে, না হয় ক্ষতিপূরণ দিতে হবে) আওতায় এ ঋণ নেয় ইসলামাবাদ। প্রকল্পটিতে মোট ১৯ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়।
খাতসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের কাছ থেকে তড়িঘড়ি করে নেয়া এ ঋণ যে উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছিল, সেটি ছিল মূলত পাকিস্তানের বিদ্যুতের স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদনক্ষমতা বাড়ানো। কিন্তু এ ঋণ প্রকল্পের আওতায় অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র পুরোদমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি। ফলে ক্যাপাসিটি চার্জ গুনতে হচ্ছে দেশটির পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডকে। একই সঙ্গে এ অর্থ দেশটির বিদ্যুৎ বোর্ড প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিদ্যুৎ চাহিদা পূরণে জাতীয় গ্রিডের উন্নয়নকাজেও ব্যয় করেছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে পাকিস্তানকে এখন পে অর টেক চুক্তির আওতায় ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে ৫৯০ কোটি ডলার দিতে হবে। চার বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৫ সালের মধ্যে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এতে বর্তমান বিদ্যুৎ ব্যবহারের তুলনায় বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হবে তাদের।
ইসলামাবাদের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক এবং জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ফারুক সালিম বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য চীনের কাছ থেকে নেয়া এ ঋণকে ‘সার্কুলার ডেবট’ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। বিদ্যুৎ খাতের মোট ঋণ বোঝাতে টার্মটি ব্যবহার করা হয়। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে পাকিস্তানের এ খাতের ঋণের পরিমাণ ছিল ৭২০ কোটি ডলার, ২০২১ সালে এসে যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৮০ কোটি ডলারে। সার্কুলার ডেবটের পরিমাণ ২০২৫ সালে ২ হাজার ৬৩০ কোটি ডলারে গিয়ে ঠেকতে পারে। দেশটির বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ ৪৪০ কোটি থেকে বেড়ে ৫৯০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, কয়েক বছরের মধ্যে যা বেড়ে ৯৮০ কোটি ডলারে পৌঁছবে। এ খাতে মোট ঋণের পরিমাণ এখন পাকিস্তানের জিডিপির ১১ শতাংশের মতো।
অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ঋণের ক্ষেত্রে পাকিস্তান বিপজ্জনক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। এরই মধ্যে দায় ও ঋণ ২৯৪ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে ঠেকেছে, যা দেশটির জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে। বিপুল পরিমাণ এ অর্থ পাকিস্তান সরকার দেশটির অভ্যন্তরীণ ঋণ, সরকারি সংস্থা ও বৈদেশিক দাতা সংস্থার কাছ থেকে নিয়েছে। এর মধ্যে ১৫৮ বিলিয়ন ডলার নিজ দেশের অভ্যন্তরীণ ঋণ, ১৫ বিলিয়ন ডলার দেশীয় বিভিন্ন সংস্থা এবং বাকি অর্থ বৈদেশিক দাতা সংস্থার কাছ থেকে নিয়েছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান গত বছর চীনের বেশ কয়েকটি আইপিপির সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয়সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে নতুন করে সমঝোতার চেষ্টা করেন। কিন্তু ব্যর্থ হন। মূলত তার দেশের বিদ্যুৎ খাতে ১০-১২ বছরের মধ্যে ৫ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ব্যয় সাশ্রয় করতে এ সমঝোতার চেষ্টা করেন তিনি।
তবে দেশটির গণমাধ্যমের তথ্য বলছে, ঋণের দায়মুক্তি পেতে বিদ্যুৎ ক্রয়সংক্রান্ত ইসলামাবাদের এ সমঝোতার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে বেইজিং। তারা বলছে, ঋণ থেকে যেকোনো দায়মুক্তির জন্য চীনের ব্যাংকগুলোকে ঋণের শর্ত ও সময় পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংক এ চুক্তির কোনো ধারা এ মুহূর্তে পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত নয়।