সদকা শুধু সম্পদ বিসর্জন বা অন্যকে খাদ্য খাওয়ানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির মাধ্যমেও সদকা করা যায়। এর মাধ্যমে অন্যের হৃদয়ে ভালোবাসা ও সম্প্রীতি তৈরি হয়। অনুভূতির সদকার মূলমন্ত্র হলো পরোপকার, কোমল ব্যবহার ও বিনম্র ভাষায় কথা বলা। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেন, ‘দয়াময় আল্লাহ দয়াশীল বান্দাদের প্রতি অনুগ্রহ করেন। সুতরাং তোমরা জমিনবাসীর প্রতি দয়া-প্রদর্শন করো, যিনি আকাশে আছেন (আল্লাহ), তিনি তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৪১)
সংক্ষেপে অনুভূতির সদকা করার কিছু উপায় তুলে ধরা হলো—
হাসিমুখে কথা বলা : মানুষকে আনন্দিত করার একটি বিশেষ উপায় হলো ছোট-বড়-নির্বিশেষে সবার সঙ্গে সর্বদা হাসিমুখে কথা বলা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজ সদকাস্বরূপ। তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা এবং তোমার বালতির পানি দিয়ে তোমার ভাইয়ের পাত্র ভর্তি করে দেওয়াও নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭০)
অন্যত্র রাসুল (সা.) বলেন, ‘হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)
সালাম দেওয়া : ছোট-বড়, পরিচিত-অপরিচিত-নির্বিশেষে সব মুসলিমকে সালাম দেওয়া ইসলামী শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। রাসুল (সা.) বলেন, ‘সেই সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যে পর্যন্ত না তোমরা ঈমানদার হবে। আর ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন একটি কাজের কথা বলে দেব না, যা করলে তোমাদের মাঝে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে? তোমরা একে অপরের মাঝে সালামের প্রসার ঘটাও।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫৪)
এতিমের মাথায় হাত বোলানো : এতিমদের মাথায় হাত বুলিয়ে, আদর ও সেবা দিয়ে তাদের হৃদয়ে সুখানুভূতি সঞ্চার করা যায়। যেসব মুমিন বান্দা এতিমদের আদর করে এবং তাদের রক্ষণাবেক্ষণ করে, তারা রাসুল (সা.)-এর সঙ্গে জান্নাতে বসবাস করার সৌভাগ্য হাসিল করতে পারবে। (বুখারি, হাদিস : ৫৩০৪)
বড়দের সম্মান করা এবং ছোটদের স্নেহ করা : বড়দের সম্মান করা ও ছোটদের স্নেহ করার মাধ্যমে সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ নির্মিত হয়। ইসলাম এ ব্যাপারে জোর তাগিদ দিয়েছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘ওই ব্যক্তি আমার দলভুক্ত নয়, যে আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দের সম্মান করে না।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১৯)
বিবাদ মীমাংসা করে দেওয়া : ইসলাম মানব জাতিকে সম্প্রীতি বজায় রেখে জীবন যাপনের নির্দেশ দেয়। একদিন রাসুল (সা.) সাহাবীদের বলেন, ‘আমি কি তোমাদের সালাত, সিয়াম ও সদকার চেয়েও উৎকৃষ্ট আমলের ব্যাপারে বলব না?’ সাহাবিরা বলেন, হ্যাঁ, বলুন। তখন তিনি বলেন, ‘পরস্পর সুসম্পর্ক স্থাপন করা। কারণ পরস্পর সুসম্পর্ক নষ্ট হওয়ার অর্থ হলো দ্বীন বিনষ্ট হওয়া।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯১৯)
মানুষকে সুসংবাদ দেওয়া : কাউকে কোনো বিষয়ে বা নেকির কাজের ব্যাপারে আশান্বিত করা এবং সুসংবাদ দেওয়া আমলে সালেহের অন্তর্ভুক্ত। রাসুল (সা.) যখন কোনো সাহাবিকে কোনো কাজে প্রেরণ করতেন, তখন তাকে নির্দেশ দিতেন, ‘তোমরা লোকদের সুসংবাদ দেবে, দূরে ঠেলে দেবে না। আর সহজ করবে, কঠিন করবে না।’ (মুসলিম, হাদিস : ১৭৩২)
রোগীর সেবা করা : অনুভূতির সদকা প্রকাশ করার অন্যতম উপায় হলো রোগীর সেবা করা এবং তাকে দেখতে যাওয়া। এই কাজের মাধ্যমে রোগী এবং রোগীর পরিবারের সঙ্গে যেমন আত্মিক হৃদ্যতা তৈরি হয়, তেমনি ফেরেশতাদের দোয়া লাভ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৯৭৬)
আত্মীয়-স্বজন ও অভাবীদের খোঁজ-খবর নেওয়া : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তি হচ্ছে, যারা বেশি বেশি মানুষের উপকার করে। আর আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় কাজ হচ্ছে কোনো মুসলিমকে খুশি করা অথবা কোনো মুসলিম ভাইয়ের বিপদ দূর করা অথবা কোনো মুসলিম ভাইয়ের ঋণ পরিশোধ করা অথবা কোনো ভাইয়ের ক্ষুধা নিবারণ করা। কোনো মুসলিম ভাইয়ের প্রয়োজন (অভাব) পূরণের জন্য তার সঙ্গে হাঁটা (সময় দেওয়া) আমার কাছে এক মাস মদিনার মসজিদে (মসজিদে নববী) ইতিকাফ করার চেয়েও অধিকতর প্রিয় কাজ।’ (তাবারানি, মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৬০২৬)
হাদিয়া দেওয়া : অন্যের সঙ্গে ভালোবাসা ও সুসম্পর্ক স্থাপনের অন্যতম সেতুবন্ধ হলো পরস্পর হাদিয়া বা উপহার দেওয়া। রাসুল (সা.) অন্যের হাদিয়া গ্রহণ করতেন এবং নিজেও হাদিয়া দিতেন। তিনি সাহাবিদের এ ব্যাপারে উৎসাহিত করে বলতেন, ‘তোমরা পরস্পর উপহার আদান-প্রদান করো, তাহলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি হবে।’ (তাবারানি, আল-মুজামুল আওসাত, হাদিস : ৭২৪০)