কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে শোভা পাচ্ছে কাউনের আবাদ। দিন বদলের ধারায় ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে কাউন চাষ। একসময় উপজেলার ছয় ইউনিয়ন জুড়ে ব্যাপকভাবে কাউন চাষ হলেও বর্তমানে প্রত্যন্ত চরাঞ্চল ছাড়া এ ফসলটি আর চোখেই পড়ে না। সহজ চাষ পদ্ধতি ও খুব কম খরচে এ ফসলটি ঘরে তোলা গেলেও আগ্রহ নাই কৃষকের। কাউন অত্যন্ত সুস্বাদু একটি ফসল। আগেকার দিনে কৃষকের ঘরে হালকা নাস্তা হিসেবে থাকতো কাউন ভাজা। কাউন থেকে নানানরকম পিঠা, ক্ষীর, পায়েস, পোলাও, মলা ইত্যাদি মুখরোচক খাবার তৈরি করা হতো। এছাড়াও চালের সাথে অথবা শুধু কাউনের ভাত রান্না করা হতো। চৈত্র মাসে শুকনো জমিতে চাষ দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিয়ে বীজ বপন করতে হয়। কোনো প্রকার সেচ ছাড়াই জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের দিকে এ ফসল ঘরে ওঠে। বিঘাপ্রতি ১০-১২ মণ পর্যন্ত ফলন হয়ে থাকে। ফসল ঘরে তোলার পর অবশিষ্ট খর জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হতো। অন্যান্য ফসলের মতো কাউন বিক্রয় করেও আর্থিকভাবে লাভবান হতো কৃষক। উপজেলার প্রত্যন্ত চরাঞ্চল শিমুলবাড়ি ইউনিয়নের জ্যোত-ইন্দ্র নারায়নে গিয়ে কয়েক খন্ড জমিতে কাউন ফসলটি দেখা গেছে। নির্মল বাতাসে কাউনের শীষের দোলন হৃদয় কারে। সেখানকার বেশ কয়েকজন কৃষক বলেন, একসময় অন্যসব ফসলের মতো ব্যাপকভাবে কাউন চাষ করতাম। কাউন বিক্রি করেই অনেকের সংসার চলতো। কাউন দিয়ে বিভিন্ন আকৃতির মলা তৈরি করে বাজারে বিক্রি করে জীবন চালাত অনেকে। বর্তমানে তেমন আর নাই। দেশীয় জাতের এ ফসলটিকে আমাদের স্বার্থেই সংরক্ষণ করতে হবে। তা না হলে পরবর্তী প্রজন্ম জানবেই না কাউন কি। ঐতিহ্যের এ ফসলটি যেন একেবারেই হারিয়ে না যায় এজন্য আমাদের সকলকেই এগিয়ে আসা উচিৎ। উপজেলা কৃষি অফিসার মাহবুবুর রশিদ বলেন, এ বছরে ফুলবাড়ী উপজেলার নদী তীরবর্তী চার ইউনিয়ন (নাওডাঙ্গা, শিমুলবাড়ি, বড়ভিটা, ভাঙ্গামোড়) মিলে প্রায় ৮০/৯০ বিঘা জমিতে কাউন চাষ হয়েছে। ফসল উত্তোলন করে ঘরেও তোলা শুরু হয়ে গেছে। ফলনও বেশ সন্তোষজনক। তবে বর্তমানে চরাঞ্চলের কৃষকরা অন্যান্য ফসলের প্রতি বেশি আগ্রহী। চরাঞ্চলের পতিত জমিগুলোতে ভূট্টা, কাউন, তরমুজ, মিষ্টিকুমড়া সহ উপযোগী ফসলসমূহ চাষাবাদের সুপরামর্শ দিচ্ছি। কৃষিবিভাগ সর্বদা কৃষকদের সাথেই থাকবে।