সোমবার, ০৬ মে ২০২৪, ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
চাঁদপুর সেচ প্রকল্প বাঁধের মাটি ইটভাটায় ব্যবহারের অভিযোগ বরিশালে ৮ ঘন্টা বন্ধ থাকার পর অভ্যন্তরীন ও দুরপাল্লার বাস চলাচল শুরু : অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন আপনাদের সহায়তায় সুস্থ জীবন চাই শ্রীমঙ্গলে সদ্যপ্রতিষ্ঠিত নূরে মদিনা মাদরাসার শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা ও লেখাপড়ার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা ফুলপুরে চেয়ারম্যান প্রার্থী হাবিবের মিছিল সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর নিঃশর্ত মুক্তির দাবীতে ফরিদপুরে যুবদলের বিক্ষোভ মিছিল বাবা ছিলেন বাসচালক মা দরজি, ছেলে লন্ডনের মেয়র ওবায়দুল কাদেরের ভাই শাহাদাতের মনোনয়ন বাতিল হাওরের প্রায় শতভাগ ধান কাটা শেষ অপারেশনের নামে ‘টর্চার সেলে’ পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন: হারুন

দেশে শনাক্ত করোনার অপরিচিত ধরন নিয়ে উদ্বেগ

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় শনিবার, ৫ জুন, ২০২১

করোনাভাইরাসের জিনোম সিকোয়েন্সিং নিয়ে এক গবেষণার পর সরকারের রোগ তত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট আইইডিসিআর জানিয়েছে, রাজধানীসহ দেশের পাঁচ জেলায় করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভেরিয়েন্ট বা ডেল্টা ভেরিয়েন্ট বহুলাংশে বেড়ে গেছে। পাশাপাশি করোনার আরও দুটো অপরিচিত ধরন বা ভেরিয়েন্ট পাওয়া গেছে। অপরচিত ধরন দুটোর সংক্রমণের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে নিশ্চিত কোনো ধারণা না পাওয়ায় তৈরি হয়েছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা।
আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ মে থেকে দোসরা জুন পর্যন্ত দেশের কয়েকটি এলাকা থেকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের মধ্য থেকে ৫০ জনের নমুনা সিকোয়েন্সিং করে এর মধ্যে ৮০ শতাংশ বা চল্লিশটির নমুনায় ডেল্টা ভেরিয়েন্ট বা ভারতের ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া ১৬ শতাংশ বা আটটি নমুনায় বিটা ভেরিয়েন্ট বা সাউথ আফ্রিকান ভেরিয়েন্ট এবং বাকি ৪ শতাংশ বা দুটি নমুনায় অপরিচিত দুটি ভেরিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। বিষয়টিকে আইইডিসিআর উদ্বেগজনক হিসেবে অভিহিত করে মানুষকে অধিকতর সতর্ক থাকার এবং সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। আইইডিসিআর ও বেসরকারি সংস্থা আইদেশি মিলে ওই পঞ্চাশ নমুনার জিনোম সিকোয়েন্সিং করেছে। এ প্রসঙ্গে আইইডিসিআরের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড এ এস এম আলমগীর গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা যেগুলো নমুনা সিকোয়েন্সিং করেছি অবশ্যই এর বাইরে ও এসব ভেরিয়েন্ট আরো ছড়িয়ে থাকতেই পারে। তবে সেটি কোথায় কতটা ছড়িয়েছে সেটা এখনই বের করা সহজ নয়। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে দেশে ডেল্টা ভেরিয়েন্ট আছে এবং সামাজিকভাবে এটি সংক্রমিত হয়েছে তাই সবাইকে বিষয়টি জানা দরকার এবং সেই অনুযায়ী সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা দরকার।
করোনা রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছে রামেক হাসপাতাল:বর্তমানে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণের হার বেড়েই চলেছে। সংক্রমণের হার ক্রমান্বয়ে ঊর্ধ্বমুখির প্রেক্ষিতে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতাল রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ব্যাপক চাপ বেড়েছে। ঈদের পর থেকে হাসপাতালে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হওয়ার হার যেমন বেড়েছে, তেমনি সংক্রমণের পাশাপাশি বেড়েছে মৃত্যুও। এ অবস্থায় দেখা দিয়েছে চিকিৎসক সংকটও। করোনা রোগীদের সামাল দিতে গিয়ে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা পুরো রাজশাহী অঞ্চলে করোনার ভারতীয় ধরন সংক্রমণের আশংকা করছেন। এতে করে বাড়ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি। রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা: সাইফুল ফেরদৌস জানান, ঈদের পর থেকে হাসপাতালে রোগীর চাপ বাড়তে শুরু করেছে। বেশ কিছুদিন ধরেই চাপ বেড়েই চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ও করোনা উপসর্গে এক দিনে সর্বোচ্চ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুক্রবার সকাল ৮টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়। রামেক হাসপাতালে ২৪ ঘণ্টায় অর্থাৎ এক দিনে করোনায় এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে গত ৩০ মে সর্বোচ্চ ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। উপ-পরিচালক ডা: সাইফুল ফেরদৌস জানান, মৃত্যু হওয়া ১৬ জনের মধ্যে ১০ জন করোনা পজিটিভ রোগী ছিলেন। আর বাকি ছয়জন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। তারা সবাই করোনা ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছিলেন। মৃতদের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৯ জন, রাজশাহীর ৬ জন এবং নওগাঁ জেলার একজন রয়েছেন। তাদের মধ্যে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) পাঁচজন, হাসপাতালের ৩ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন করে, ২২ ও ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে দু’জন করে এবং ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে একজন মারা গেছেন। তিনি আরো জানান, ঈদুল ফিতরের পর থেকে উদ্বেগজনক হারে মৃত্যু ও সংক্রমণ বাড়ছে। গত ২৪ মে দুপুর থেকে ৪ জুন পর্যন্ত রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে করোনা সংক্রমিত ছিলেন ৫৬ জন। অন্যদের করোনার উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে।ডা: সাইফুল ফেরদৌস জানান, হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ভর্তি হয়েছেন ৩২ জন। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ১৫ জন, রাজশাহীর ১৩ জন, নওগাঁর ৩ জন ও নাটোরের ১ জন রয়েছেন। এ নিয়ে শুক্রবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ভর্তি আছেন ২২৫ জন রোগী। এদিকে, দিন দিন করোনা ইউনিটে রোগী বেড়ে যাওয়ায় রামেক হাসপাতালে দেখা দিয়েছে চিকিৎসক সংকট। করোনা রোগীদের সামাল দিতে গিয়ে সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। রামেক হাসপাতালের একটি সূত্র জানায়, কর্তৃপক্ষ ৩০ জন চিকিৎসকের চাহিদা দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরে চিঠি পাঠিয়েছে। কিন্তু এখনো কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় করোনা রোগীদের জন্য হাসপাতালের বেড সংখ্যা ২৩২ থেকে বাড়িয়ে ২৬৪টি করার পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, রামেক হাসপাতালে রাজশাহী ছাড়াও চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, জয়পুরহাট, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলার রোগীরা চিকিৎসা নিতে আসেন। এখানে মোট শয্যা সংখ্যা ১ হাজার ২০০টি। এর মধ্যে ২৩২টি কোভিডের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। এতেও জায়গা সংকুলান না হওয়ায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা রাজশাহী সদর হাসপাতালটি চালুর প্রস্তাব দিয়েছে রামেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সদর হাসপাতালে রামেক হাসপাতালের কয়েকটি ওয়ার্ড পাঠিয়ে দেয়া গেলে এখানে কোভিডের ওয়ার্ড বাড়ানো যাবে। এ জন্য বৃহস্পতিবার দুপুরে বিভাগীয় কমিশনার ড. হুমায়ুন কবীর সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করতে যান। এসময় তার সাথে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল, রামেক হাসপাতালের পরিচালকসহ গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। এই হাসপাতালটি এবার চালু হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তারা আরো বলেন, রামেক হাসপাতাল ছাড়া রাজশাহীতে আর কোনো হাসপাতালে ওয়ার্ডে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ লাইন নেই। থাকলে সেটাকে করোনার চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা যেত। তাই সব রোগীর চাপ রামেক হাসপাতালে। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের রোগীরা এখানে আসছেন চিকিৎসা নিতে। এখন জায়গা সংকুলানই বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে।
এদিকে, উদ্ভূত এ পরিস্থিতিতে সব করোনা রোগী রামেক হাসপাতালে ভর্তি হতে পারছেন না। এ প্রসংগে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, সব করোনা রোগীকে ভর্তি নেয়া হচ্ছে না। কারণ যেসব রোগীর অক্সিজেন সাচুরেশন কম বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা বেশি কেবল তাদেরই ভর্তি করা হচ্ছে। অন্য রোগীদের বাড়িতেই আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিতে হবে। এছাড়া এখন কোনো উপায় নেই।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে পুরো রাজশাহী অঞ্চলে করোনার কমিউনিটি সংক্রমণের আশংকা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। এ ব্যাপারে বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের সহকারী পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা: নাজমা আক্তার সাংবাদিকদের জানান, যেহেতু এই এলাকার লোকজন চিকিৎসার জন্য রাজশাহীতে আসছেন, জীবিকার তাগিদে রাজশাহী হয়ে বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছেন এদের মাধ্যমে কমিউনিটি সংক্রমণের আশংকা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। সংক্রমণ এড়াতে সবাইকে লকডাউন মেনে চলতে হবে। একইসাথে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার তাগিদও দেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ আসছেন রাজশাহীতে। নানা কৌশলে তারা এসে উঠছেন নগরীতে। এ ক্ষেত্রে প্রধান রুট রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহাসড়ক। তাছাড়া চাঁপাই থেকে রাজশাহী প্রবেশে এলাকার গ্রামীণ সড়কগুলোও নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছেন তারা। আমনুরা-তানোর আঞ্চলিক সড়ক হয়েও লোকজন আসছেন রাজশাহীতে। কিছু মানুষ ধানসুরা-নিয়ামতপুর, আড্ডা-পোরশা আঞ্চলিক সড়ক হয়েও চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়ছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে যাওয়া এসব লোকজনের অধিকাংশই শ্রমজীবী। তাদের অধিকাংশই যাচ্ছেন রাজধানী ঢাকায়। কিছু অংশ যাচ্ছেন সিলেট ও চট্টগ্রামে। তারা বাড়িতে এসেছিলেন ঈদ করতে। কিন্তু লকডাউনে আটকা পড়ায় চরম বিপাকে পড়েন। আয় রোজগার না থাকায় বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে পথে নেমেছেন এসব লোকজন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com