জেলার পার্বতীপুর উপজেলার সরকারি মৎস্য খামারে গলদা চিংড়ি উৎপাদনে সফলতা অর্জন করেছে। অর্জিত সফলতায় মৎস্য খামারটি সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। চিংড়ি চাষে সফলতার বিষয় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় মৎস্য খামারীরা এখানে এসে পরামর্শ নেয়াসহ মৎস্য চাষের আগ্রহ প্রকাশ করছে। ফলে এই অঞ্চলে মৎস্য চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জেলায় কর্মরত মৎস্য বিভাগে উত্তর-পশ্চিম মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারের ব্যবস্থাপক মুসা কলিমুল্লা বলেন, জেলার পার্বতীপুর উপজেলার শহরতলীতে ৫০ একর জমির উপর অবস্থিত উত্তর-পশ্চিম মৎস্য বীজ উৎপাদন খামারটি বিশেষ করে গলদা চিংড়ির উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা অর্জন করেছে। এখানে উৎপাদিত গলদা চিংড়ি বিদেশে রপ্তানী করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মতামত দিয়েছেন। এখানে প্রতিনিয়ত উৎপাদন হচ্ছে গলদা চিংড়ি।
এক সময় এমন ধারণা করা হয়েছিল, এই অঞ্চলটির মাটি ও পানি চিংড়ি চাষের উপযুক্ত নয়। চিংড়ির জন্য অধিক খারত্বযুক্ত মাটি ও পানি বেশী উপযোগী। কিন্তু এই অঞ্চল চিংড়ি চাষের জন্য একেবারে অযোগ্য এ কথা মাঠ পর্যায়ে পরীক্ষায় ভুল প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণায় সার্বিক বিষয় নিয়ে প্রতিষ্ঠিত ও প্রমাণিত হয়েছে যে, এই অঞ্চলে চিংড়ি চাষ সম্ভব। ২০০০ সালের ২৭ অক্টোবর প্রকল্প কমপ্লেক্সে গলদা হ্যাচারি উদ্বোধনের মাধ্যমে এ অঞ্চলে গলদা চিংড়ি চাষের সম্ভাবনাকে অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে।
শুরুতে গলদা চিংড়ি চাষের বিষয়টি ছিল পরীক্ষামূলক। দীর্ঘদিনে চিংড়ি চাষের সফলতা ব্যাপক স¤প্রসারিত করেছে এবং এর প্রসরতা এই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। চলতি বছর কর্ম পরিকল্পনায় এই খামারে ৪ লাখ ৫০ হাজার গলদা চিংড়ির পোনা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে। গলদা চিংড়ির পিএল উৎপাদনের ক্ষেত্রে জীবন চক্রের শুরুতে ব্রাইন ওয়াটার বা লোনা পানির প্রয়োজন হয় ।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে কক্সবাজারের পেকুয়া থেকে ব্রাইন ওয়াটার বা লোনা পানি সংগ্রহ করে স্বাদু পানি বা মিঠা পানির সাথে খাপ খাওয়ায়ে পিএল উৎপাদন করা হয়। উৎপাদনের ক্ষেত্রে বরগুনার আমতলীর পায়রা নদী থেকে গলদা চিংড়ির মা মাছ সংগ্রহ করা হয়। মা মাছ থেকে লার্ভা সংগ্রহ করে ২৮ থেকে ৩৫ দিনের মধ্যে পিএল উৎপাদন করা হয়। এছাড়াও এখানে বিভিন্ন প্রজাাতির মাছ উৎপাদন করা হচ্ছে।
১৯৬৪ সালে দিনাজপুর পাবর্তীপুরে স্থাপিত খামারটি কয়েক যুগ ধরে অযতœ অবহেলায় পড়ে থাকলেও বর্তমানে খামারটি দেশের অন্যতম আদর্শ খামারে পরিণত হবার পথে রয়েছে। এখানে রয়েছে মাছের পোনা উৎপাদনের জন্য ৪৬ টি পুকুর, প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স ও আবাসিক ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনা।
মুসা কলিমুল্লা বলেছেন, কিছু নিয়ম-কানুনের পরিবর্তন করা হলে এই মৎস্য খামারটি দেশের একটি আদর্শ খামারে পরিণত হতে পারে।
এ ব্যাপারে সাবেক মন্ত্রী এবং ওই এলাকার নির্বাচিত সাংসদ এ্যাড. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পার্বতীপুরে মৎস্য খামারটি গলদা চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির মৎস্য উৎপাদনের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করেছে। এখানকার মৎস্য চাষিরা এলাকায় মাছের চাহিদা মিটিয়ে এখানকার মাছ অন্যত্র সরবরাহ করছে। এই স্বনামধন্য মৎস্য খামারটিকে কেন্দ্র করে এখানে একটি মৎস্য পলিকেটনিক ইন্সটিটিউট নির্মাণের জন্য পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ এখন সময়ের ব্যাপার। এ ব্যাপারে তিনি সরকারের নীতি-নির্ধারণ মহলে কথা বলেছেন। বিষয়টি তিনি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বলে নিশ্চিত করেন।