তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে’- কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘তালগাছ’ কবিতার আকাশ ছুঁই-ছুঁই আর সারি-সারি তালগাছের দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। তবে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের সাতঘরিয়া এর ব্যতিক্রম। এটি যেন তালগাছের গ্রাম। সড়কের দুই পাশ ছাড়াও বাড়ির আঙিনায় দেখা মিলে পরিবেশ বান্ধব এ গাছ। ছোট-বড় তালগাছে ঘেরা মনোমুগ্ধ পরিবেশ যে কাউকে আকৃষ্ট করে। আর এ দৃশ্যটি ক্যামেরার ফ্রেমে বন্দি করতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসেন প্রকৃতি প্রেমী মানুষ।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, ভারতের সীমান্তঘেঁষা চৌদ্দগ্রাম উপজেলার জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নের সাতঘরিয়ায় গ্রাম। এ গ্রামের সড়কের দুই পাশে সারি সারি তালগাছ। দৃষ্টিনন্দন সেই সড়কে ছবি তুলছেন কয়েকজন প্রকৃতি প্রেমী। নোয়াখালী থেকে আসা কামরুল ইসলাম নামের এক যুবক বাসসকে বলেন, সড়কের দুই পাশে অগণিত তালগাছ সাতঘরিয়া গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। যা দেখতে আমাদের এখানে ছুটে আসা। প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য এটি চমৎকার একটি দৃশ্য।
সাতঘরিয়া গ্রামের এমরান হোসেন বাসসকে বলেন, আয়তনের দিক থেকে জগন্নাথদীঘি ইউনিয়নে আমাদের গ্রামটি বড়। এর প্রতিটি সড়কের দুই পাশে বজ্রপাত নিরোধক ও পরিবেশ বান্ধব সারি-সারি তালগাছ লাগিয়েছে বাপ-দাদারা। এমনকি বাড়ির আঙিনাতেও রয়েছে ছোট-বড় তালগাছ। সত্তর বছরের সাতঘরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. শফিকুর রহমান মোল্লা বলেন, এ গ্রামে আদিকাল থেকেই আমরা তালগাছ রোপণে যেমন আগ্রহী ছিলাম বর্তমান প্রজন্মও এর ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে। সারি সারি তালগাছে যেমন গ্রামের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে তেমনি প্রাকৃতিক দুর্যোগ (বজ্রপাত) মোকাবিলাও অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।
কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বাসসকে বলেন, মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য জেলার ১৭ উপজেলায় ৫০ হাজার তালের বীজ রোপণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এসব বীজ সড়কের পাশে না লাগিয়ে ফসলি মাঠের আইলে লাগানো হবে। তিনি আরো বলেন, তালগাছ বজ্রপাত নিরোধক ও পরিবেশ বান্ধব। নির্বিচারে এ গাছ উজাড় করার ফলে বর্তমান সময়ে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে গেছে। মাঠে কৃষকদের মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে কৃষি বিভাগ এ উদ্যোগ নিয়েছে।