বর্ষা শুরুর পরপরই নগরীর বেশকিছু সড়ক বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। খানাখন্দে ভরা এসব সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হচ্ছে নগরবাসী। প্রায় প্রতিদিন যানবাহন উল্টে ছোট-বড় দুর্ঘটনা লেগেই রয়েছে। ভাঙা সড়কে লেগে থাকে যানজট। জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর বর্ষণে নগরীর বিভিন্ন এলাকার খানাখন্দের সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ফলে নগরীর বেশিরভাগ সড়কে জনদুর্ভোগ বেড়ে গেছে। বিসিসির দেওয়া তথ্য মতে, নগরীতে প্রায় ছয়শ’ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে পিচ-ঢালাই সড়ক প্রায় তিনশ’ কিলোমিটার। ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের পর প্রায় প্রতিদিনকার বর্ষনে জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশিরভাগ অলিগলির সড়ক। সরেজমিনে নগরীর পলাশপুর, হাটখোলা সড়ক, অক্সফোর্ড মিশন রোড, বিএম স্কুল লেন, নথুল্লাবাদ থেকে মধুমিয়ার পুল হয়ে সোবাহান মিয়ার পুল এবং মড়কখোলার পুল পর্যন্ত, কাউনিয়া হাউজিং সংলগ্ন সড়ক ও থানার গলি, শ্রীনাথ চ্যাটার্জী লেন, টিয়াখালি সড়ক, নিউ সার্কুলার রোড, সাগরদি জিয়ানগর, সহ বিভিন্ন সড়কে চলতি বর্ষায় খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। পশ্চিম কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা গৃহিনী শামিমা জাহান জানান, নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কাউনিয়া মড়কখোলার পুল পর্যন্ত খালপাড়ের অধ্যাপক ইউনুস খান সড়কটির অবস্থা অনেকদিন ধরে বেহাল। এটি এখন পুরোপুরি যানবাহন চলাচলে অনুপযোগী হয়ে পরেছে। পাশের খালটি পরিস্কারে উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এখনও শেষহয়নি। নগরীর ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের সড়কটিও চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পরেছে। এতে পথচারী এবং যানবাহন চলাচলে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এ সড়কে প্রায়ই ঘটছে ছোটবড় দুর্ঘটনা। স্থানীয়রা জানান, রাস্তার মধ্যে খানাখন্দের কারণে এ সড়ক দিয়ে রিকশা বা ইজিবাইকে চলাচল এখন চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ব্যাপ্টিস্ট মিশন রোডের এ সড়কটি দিয়ে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ তিনটি পথে যাতায়াত করেন নগরবাসী। বিসিসি’র ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মজিবর রহমান বলেন, ব্যাপ্টিস্ট মিশন সড়কটি বিগত মেয়র আহসান হাবিব কামালের আমলে প্রায় ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে সংস্কার করা হয়। তখনকার সংরক্ষিত কাউন্সিলর এ কাজের ঠিকাদার ছিলেন। তিনি নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী ব্যবহারের মাধ্যমে কাজ করায় আজ এলাকাবাসীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য সিটি কর্পোরেশনের তালিকাভূক্ত রয়েছে। নগরীর শ্রীনাথ লেনের বাসিন্দা কলেজ শিক্ষক মোঃ ওয়াহেদ জানান, বৃষ্টি হলেই তাদের এলাকার সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। ফলে পানিবন্দি অবস্থায় চরম দুর্ভোগের মধ্যে স্থানীয়দের চলাচল করতে হচ্ছে। নগরীর ২৪ নম্বর ওয়ার্ড জিয়ানগর এলাকার বাসিন্দা ফাইজুল ইসলাম সজল বলেন, সড়ক উঁচু করে নির্মাণ না করায় সামান্য বৃষ্টি বা কীর্তনখোলায় অস্বাভাবিক জোয়ার হলেই ওই এলাকার সড়কগুলো তলিয়ে যায়। ফলে এখানকার অলিগলি খানাখন্দে ভরে গেছে। একইচিত্র দেখা গেছে, সাগরদি ও রুপাতলী হাউজিং এলাকায়। এ বিষয়ে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলার সাধারণ সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিপলু বলেন, নগরীর অধিকাংশ সড়কের পাশে ড্রেন না থাকায় পানি নামতে পারছে না। খালের নাব্য না থাকায় এখন সড়কের বৃষ্টির পানিও আটকে যাচ্ছে। তিনি বলেন, খাল পরিস্কার করা যেমন দরকার, তেমনি খনন করা আরও জরুরি হয়ে পরেছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী সৈয়দ মোঃ ফারুক হোসেন বলেন, অতিবর্ষনে সড়কের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে বিসিসি থেকে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসনে সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীর খালগুলো পরিস্কারের কাজ অব্যাহত রয়েছে।