১৪ জুন, সোমবার ‘বিশ্ব রক্তদান দিবস। রক্তের গ্রুপ নির্ণয়কারী বিজ্ঞানী কার্ল ল্যান্ডস্টিনারের জন্মদিনও এই বিশেষ দিনটি। নোবেলজয়ী কার্ল আবিষ্কার করেছিলেন রক্তের চারটি গ্রুপ-এ, বি, এবি এবং ও। জেনে নেওয়া যাক স্বেচ্ছা রক্তদান সম্পর্কে কয়েকটি তথ্য- রক্তদান করলে কি শরীর দুর্বল হয়ে যায়? রক্তদানের সময় সুচ ফোটালে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে কোনো জটিল রোগে? মনের মধ্যে জমে থাকা এমন সব প্রশ্নের উত্তরে শুনে নিন চিকিৎসকেরা কী বলছেন? চিকিৎসকেরা বলছেন, প্রতিটা মানুষের শরীরেই থাকে বাড়তি কিছুটা রক্ত। যা আমাদের কোনো কাজেই লাগে না। ফলে রক্তদান শিবিরে রক্তদান করে ওই বাড়তি রক্তটুকুই আপনি তুলে দিতে পারেন কোনো আর্তের হাতে। আসলে রক্তদান করলে শরীর দুর্বল হওয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠে না। আবার পুরনো রক্ত শরীর থেকে ঝেড়ে ফেলে নতুন রক্তকণিকার জন্ম দিতে সুযোগ করে দেওয়া যায় নিজের শরীরকে। হ্যাঁ, রক্ত দিতে হলে গায়ে সুচ ফোটাতে হয়। তবে সেটা থেকে রোগসংক্রমণের কোনো সম্ভাবনায় নেই। একশো শতাংশ সুরক্ষিত পদ্ধতিতে গ্রহণ করা হয় রক্ত। প্রতিটি রক্তদাতার জন্যই থাকে সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত আলাদা আলাদা সুচ।
রক্তদান করলে কি বিশেষ কোনো খাবার খেতে হয়? মোটেই না। রক্তদানের পর কোনো ওষুধ খেতে হয় না। খেতে হয় না কোনো বিশেষ খাবারও। রক্ত দেওয়ার ২ দিনের মধ্যেই রক্তের জলীয় অংশ তৈরি হয়ে যায় আপনা হতেই। আর ২১ দিনের মধ্যেই রক্তকণিকার ঘাটতিও মিটিয়ে ফেলে শরীর। যে জন্য রক্তদানের কম করে আধঘণ্টা পরেই স্বাভাবিক ভাবেই কাজকর্ম করা যায়। অন্য দিকে রক্তদান করলে পরীক্ষাগারে তার পরীক্ষাও হয়। সেখানে জন্ডিস, হেপাটাইটিস বি,সি, ম্যালেরিয়া, সিফিলিস, এইডস-এর পরীক্ষা হয়। কারও বয়স যদি হয় ১৮ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে তা হলে রক্তদান করতে তেমন কোনো অসুবিধা নেই। তেমনই মাত্র ৪৫ কেজি ওজন হলেই দেওয়া যায় রক্ত। সঙ্গে মনের সুস্থতা নিয়ে অনায়াসেই ভয়কে করা যায় জয়। নেওয়া হয় মাত্র সাড়ে তিনশো মিলিলিটার রক্ত।
রক্ত দেওয়ার সময় সুচ ফোটালে কি লাগে? মোটেই না। ইঞ্জেকশনের সুচ ফোটালে ঠিক যেমনটা অনুভূতি হয়, এখানেও তাই। না আছে বাড়তি কোনো ব্যথা, না আছে কোনো যন্ত্রণা। উল্টে সেই রক্তে যখন সুস্থ হয়ে উঠবে একটা প্রাণ, সেই অনুভূতি হাতছাড়া করে কী লাভ! মাথায় রাখা দরকার, রক্ত দেওয়ার পর চার ঘণ্টা পর্যন্ত বেশি করে জল খেতে হয়। স্বাভাবিক জীবনে যে কোনো ধরনের নেশা এড়িয়ে চলাই ভালো। তবুও নেশা ছাড়তে পারেন না অনেকেই। তবে রক্ত দেওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা এড়িয়ে চলা ভালো ধূমপান বা জর্দা পান খাওয়া। তবে হ্যাঁ, ছ’ঘণ্টা পর্যন্ত মদ্যপান থেকে বিরত থাকাই ভালো। একই সঙ্গে মনে রাখতে হবে, বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় হালকা কিছু খেয়ে নিতে হবে, ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে আর রক্ত দেওয়ার আগে দু’গ্লাস জল খেয়ে নিতে হবে। কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে বিশেষ সংযোজন: রক্তদাতা এবং ব্ল্যাডব্যাঙ্কের কর্মীদের ফেস মাস্ক, সার্জিক্যাল গ্লাভস পরতে হবে। তাপমাত্রা মেপে দেখা বাধ্যতামূলক। ৬০ শতাংশ অ্যালকোহল রয়েছে এমন স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। সমস্ত উপকরণ এবং বেড জীবাণুমুক্ত করতে হবে। ৬ ফুটের শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কোনো কোভিড-১৯ উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিকে শিবিরে প্রবেশ করতে দেওয়া যাবে না। আয়োজক এবং রক্ত সংগ্রহকারীদের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য জারি করা সমস্ত স্বাস্থ্যসুরক্ষা বিধি সম্বন্ধে অবহিত থাকতে হবে।