আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে সূরা আন-নিসার ৭৮ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন; মৃত্যু কিন্তু তোমাদের পাকড়াও করবেই। যদি তোমরা সুদৃঢ় দুর্গের ভেতরেও অবস্থান করো।’
ইবনে মাজাহ শরিফে আছে, হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘স্বাদসমূহ বিনষ্টকারী মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করো’। পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরিফে প্রমাণিত, মৃত্যুর পর মানুষের কবরের জগত শুরু হয়। কবরের ফেরেশতাকে মুনকার ও নাকির বলা হয়। কবরে অন্ধকার, একাকিত্ব, মুনকার-নাকিরের ভয়ানক চেহারা দেখা সত্ত্বে¡ও মোমেন ব্যক্তি কোনো প্রকার ভয় অনুভব করবে না। বরং মোমেন ব্যক্তি ফেরেশতাদের প্রশ্নের উত্তর নির্ভয়ে দেবে।
বুখারি শরিফে আছে, রাসূল সা: বলেছেন, ‘মৃত্যুর পর ঈমানদাররা বলতে থাকে, আমাকে জলদি নিয়ে চলো, আমাকে জলদি নিয়ে চলো। আর নাফরমানরা বলতে থাকে, আফসোস, তোমরা আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ’। হজরত আবু কাতাদা রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, রাসূল সা:-এর সামনে দিয়ে একটি জানাজা যাচ্ছিল। তখন তিনি বললেন, ‘মুসতারিহুন ওয়া মুসতারাহুম মিনহু’Ñ এর অর্থ আরামপ্রাপ্ত না আরামদাতা? সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করলেন, আরামপ্রাপ্ত এবং আরামদাতার অর্থ কি? তখন রাসূল সা: বললেন, ‘মোমেন ব্যক্তি মৃত্যুর পর পৃথিবীর দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি পেয়ে আল্লাহর রহমতে আরামে থাকে আর নাফরমান মৃত্যুর পর মানুষ, শহর ও চতুষ্পদ জন্তু আরাম ভোগ করে’। (বুখারি)
পবিত্র কুরআনের সূরা সেজদাহর ১১ নং আয়াতে আছে, ‘বলুন, তোমাদের জান কবজ করার (প্রাণ হরণের) দায়িত্বে নিয়োজিত ফেরেশতা তোমাদের জান কবজ করবে। অতঃপর তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে প্রত্যাবর্তিত হবে।’
এ ছাড়া পবিত্র কুরআনের অন্য আয়াতে প্রমাণিত হয় যে, মৃত্যুর ফেরেশতা নির্ধারিত সময়ের আগে কারো রূহ কবজ করেন না। সূরা আলে ইমরানের ১৪৫ নং আয়াতে আছে, ‘আর আল্লাহর হুকুম ছাড়া কেউ মরতে পারে না- সে জন্য একটা সময় নির্ধারিত রয়েছে।’
হজরত আনাস রা: রাসূলুল্লাহ সা: থেকে বর্ণনা করেন, যখন কোনো বান্দাকে কবরে রেখে তার সঙ্গী-সাথীরা প্রত্যাবর্তন করে এমনকি তখনো সে (মৃত ব্যক্তি) তাদের জুতার আওয়াজ শোনতে পায়। এ সময় তার কাছে দু’জন ফেরেশতা এসে তাকে উঠিয়ে বসায় এবং তারা তাকে জিজ্ঞেস করে, এই মহান ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ সা: সম্পর্কে তোমার কী ধারণা ছিল? তখন সে বলে, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল। এরপর তাকে বলা হয়, জাহান্নামে তোমার বাসস্থানের দিকে তাকাও, এর পরিবর্তে আল্লাহ তোমাকে জান্নাতে বাসস্থান দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘তাকে উভয় ঠিকানাই দেখানো হয়। আর মৃত ব্যক্তি যদি কাফের বা মুনাফেক হয়, তাহলে সে বলে, আমি জানি না। লোকজন যা বলত আমিও তাই বলতাম। এ কথা শুনে ফেরেশতা তাকে জিজ্ঞেস করে, তুমি কি পড়াশোনা করোনি? অতপর তার কানের মাঝে লোহার হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। তখন সে খুব করুণভাবে কাঁদতে থাকে। আর তার কান্নার আওয়াজ জিন ও ইনসান ব্যতীত সব সৃষ্ট জীব শুনতে পায়।’ (বুখারি) আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে কবর আজাব থেকে রেহাই দান করুন, আমিন।
লেখক : মুহতামিম, জামিয়া মদিনাতুল উলুম ভাটারা, ঢাকা।