সল্প ব্যয় আর নিরাপদ যোগাযোগ হওয়ার কারনে নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার ব্রহ্মপুর বাজার হতে নৌপথে ঢাকায় যাচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির আম। ট্রাক বা কার্ভাড ভ্যানে আম বহনের সময় বেশির ভাগ আম পচে নষ্ট হয়। তাই নৌকাই হচ্ছে জনপ্রিয় ও সহজ যোগাযোগের মাধ্যেম। এখান থেকে প্রায় প্রতিদিন ৩৫ থেকে ৪০ টন আম যাচ্ছে ঢাকায়। স্থানীয় আম ব্যবসায়ীরা জানান, ট্রাক বা কুরিয়ারের চেয়ে নৌযোগে খরচ অনেক কম হয়। কুরিয়ার করতে খরচ হয় কেজি প্রতি ১৫ টাকা ও ট্রাকে কেজি প্রতি ৩-৪ টাকা। আর নৌকায় খরচ পড়ে ২ টাকার মতো। এছাড়া একটি মাঝারি ট্রাকে ৩ হাজার ৭৫০ কেজি থেকে ৫ হাজার কেজি, বড় ট্রাকে ১০ হাজার কেজি আম পরিবহন করতে পারে। এতে ঠাসাঠাসি কওে আম পরিবহন করতে গিয়ে অনেক আম নষ্ট হয়ে যায়। অপরদিকে নৌকায় ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার কেজি আম পরিহন করতে পারে। সেই সাথে আম নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কম। এ বিবেচনায় নৌকাই হচ্ছে আম পরিবহনের সহজ ও নিরাপদ যোগাযোগ মাধ্যম। ব্যবসায়ীরা আরো জানান, নদীতে পানি আসার পর গত দুই সপ্তাহ যাবৎ নৌকা চালু হওয়ার পর এপর্যন্ত ৪০০ থেকে ৪৫০ মেট্রিক টন আম ঢাকা গেছে। তবে পর্যাপ্ত পরিমান নৌকা ব্যবস্থা না থাকায় কোন কোন সময় পিকআপ গাড়ি কিংবা ট্রাকে কওে আম পরিবহন করা হচ্ছে স্থানীয় আম ব্যবসায়ী আবু-বক্কর সায়েম জানান, এ পর্যন্ত তিনি ১ হাজার মন আম ট্রাকে আর সমপরিমান আম নৌকায় করে পাঠিয়েছেন ঢাকায়। এতে নৌকার খরচ ট্রাকের চেয়ে আনুপাতিক ভাবে অনেক কম। এছাড়া ট্রাকে আম পাঠালে আঘাতজনিত কারনে অনেক আম নষ্ট হয়। আবার বিভিন্ন ধরনের টোল ও চাঁদা বাবদ বাড়তি ব্যয় যোগ হয়। একই কথা জানালেন ব্যবসায়ী আসাদুল ইসলাম। তিনি বলেন, নৌকাতে আম পরিবহনে খরচ ও ঝুঁকি দুটোই কম। ট্রাকে আম পাঠানোর সময় আমের ক্যারেট প্রায় ভেঙ্গে যায় আবার ট্রাকে পূর্নাঙ্গ আম ভর্তি না হলেও পূর্নাঙ্গ ট্রাক ভাড়া দিতে হয়। এতে কওে ট্রাকে ব্যয় অনেক বেশি হয়। তাই তারা নৌকাতে আম পাঠানো স্বাচ্ছন্দবোধ করছেন এবং খরচও তুলনামুলক তাদের কম হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, আম শেষ হওয়ার পর তারা কাঁঠাল, কলা ও বেল নিয়ে যাবেন নৌপথে। নৌকা মালিক দুলাল হোসেন জানান, সপ্তাহে দুইদিন দুইটি করে মোট চারটি নৌকা ব্রহ্মপুর থেকে ঢাকা ও নারায়নগঞ্জে যায়। প্রতি নৌকা ৬৫০ থেকে ৭৫০ মন পর্যন্ত আম পরিবহন করতে পারেন এবং একটি নৌকা ব্রহ্মপুর থেকে নারায়নগঞ্জ যেতে সময় লাগে প্রায় ২৪ ঘন্টা। ব্রক্ষ্মপুর ইউনিয়ন পরিষ (ইউপি) চেয়ারম্যান মোঃ হাফিজুর রহমান বাবু বলেন, আগে এই নদীতে বারো মাস পানি থাকতো। অনেক বড় বড় মাল বোঝাই নৌকা চলাচল করতো। কিন্তু এখন শুধু বর্ষাকালে কিছু নৌকা চলাফেরা করে। বর্তমানে স্থানীয় আম ব্যবসায়ীদের নদীপথে সুবিধার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, খরচ ও ঝুঁকি কম হওয়ায় এলাকায় অনেক নতুন উদ্যোগক্তা সৃষ্টি হয়েছে। নদীতে পানি থাকা পর্যন্ত বিভিন্ন ফল ও শস্য পরিবহন হবে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, সরকার যদি ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী খনন করে তাহলে নদীতে বারো মাস পানি থাকবে এবং নদী ফিরে পাবে নতুন যৌবন। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ফিরে পাবেন তাদের সেই সুযোগ সুবিধা।