রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪০ অপরাহ্ন

ইস্তিগফার ও কিফায়াত

ফাতিমা আজিজা:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১ জুলাই, ২০২১

সব চেয়ে ভালো হলো নিজেকে পাপ থেকে দূরে রাখা। কিন্তু মানুষ যেহেতু শয়তানের দ্বারা প্ররোচিত হয়ে বা না জানার কারণে অনেক সময় পাপ কাজে লিপ্ত হয়ে পড়ে তাই আল্লাহ ইস্তিগফারের পদ্ধতি চালু রেখেছেন। কারণ আল্লাহ চান তার বান্দা ভুল করার পর অনুতপ্ত হোক এবং তাঁর কাছে ফিরে আসুক। তাই আমাদের উচিত প্রথমে পাপ থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করা। এর পরেও কোনো ভুল হয়ে গেলে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। তবে ্একই ভুল ইচ্ছাকৃতভাবে বারবার করে শয়তানের ওপর দোষ চাপানো ভালো লক্ষণ নয়। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। ইস্তিগফার প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং তার দিকে প্রত্যাবর্তন করো। তিনি তোমাদেরকে একটি করে নির্দিষ্ট কাজের জন্য উত্তম জীবন উপভোগ করতে দেবেন’ (সূরা হুদ-৩)। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি তার আমলনামায় অধিক পরিমাণ ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ যোগ করতে পেরেছে, তার জন্য সুসংবাদ, আনন্দ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ-৩৮১৮)। খালেস তাওবার প্রতিদান অকল্পনীয়। তাওবার পর আল্লাহ এত বেশি খুশি হয়ে যান যে কেউ তাওবা করলে তার গুনাহসমূহ পুণ্য হিসেবে লেখা হয়। ‘তাদের পাপ পরিবর্তন করে দেবেন পুণ্যের দ্বারা। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। যে ব্যক্তি তাওবা করে ও সৎকর্ম করে সে সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অভিমুখী হয়’ (ফুরকান : ৭০-৭১)।
আল্লাহ ইস্তিগফারের পরিবর্তে অভাবনীয় নিয়ামত দান করে থাকেন। তিনি এমনভাবে রিজিক বৃদ্ধির পথ করে দেন যা কেউ কল্পনাও করে না। সব বাধা প্রতিবন্ধকতার পথ খুলে দেয়া হয় তাওবার কারণে। আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং বলেছি, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই তিনি মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। তিনি তোমাদেরকে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে সমৃদ্ধ করবেন এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন বহু বাগান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা’ (সূরা নূহ : ১০-১২)। ঈমান ও আনুগত্যের পথ অবলম্বন এবং প্রভুর কাছে নিজেদের বিগত পাপের ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য তাগিদ রয়েছে। তিনি তাদের জন্য বড়ই দয়াবান এবং মহা ক্ষমাশীল যারা শুদ্ধ নিয়তে তাওবা করে। উমার রা: একদা ইস্তিসকার সালাতের (বৃষ্টির নামাজ) জন্য মিম্বরে আরোহণ করে কেবল ইস্তিগফারের আয়াতগুলো পড়ে মিম্বর থেকে নেমে গেলেন এবং বললেন, বৃষ্টির সেই পথসমূহ থেকে বৃষ্টি কামনা করেছি, যা আসমানে রয়েছে এবং যেগুলো থেকে বৃষ্টি জমিনে বর্ষিত হয় (ইবনে কাসির)। হাসান বসরি রা:-এর ব্যাপারে বর্ণিত আছে যে, তার কাছে এসে কেউ অনাবৃষ্টির অভিযোগ জানালে, তিনি তাকে ইস্তিগফার করার কথা শিক্ষা দিতেন। আরেকজন তার কাছে দরিদ্রতার অভিযোগ জানালে, তাকেও তিনি এই (ইস্তিগফার করার) কথাই বাতলে দিলেন। অন্য একজন তার বাগান শুকিয়ে যাওয়ার অভিযোগ জানালে, তাকেও তিনি ইস্তিগফার করতে বললেন। এক ব্যক্তি বলল যে, আমার সন্তান হয় না, তাকেও তিনি ইস্তিগফার করতে বললেন। যখন কেউ তাকে প্রশ্ন করল যে, আপনি সবাইকে কেবল ইস্তিগফারই করতে কেন বললেন? তখন তিনি বললেন, ‘আমি নিজের পক্ষ থেকে এ কথা বলিনি, বরং উল্লিখিত সব ব্যাপারে এই ব্যবস্থাপত্র মহান আল্লাহই দিয়েছেন’ (আইসারুত তাফসির)। ঈমান ও আনুগত্যের কারণে শুধু আখিরাতের নিয়ামতই নয় বরং পার্থিব জীবনেও আল্লাহ মাল-ধন এবং সন্তান-সন্ততি দান করবেন। পাপ থেকে মুক্তির জন্য কিছু সহজ উপদেশ গ্রহণই যথেষ্ট যা নিজেকে নিজেই করতে পারি। বিখ্যাত সুফি ইবরাহিম ইবনে আদহামের কাছে এক ব্যক্তি এসে গুনাহ থেকে মুক্তির উপায় জানতে চান। তখন সুফি সেই ব্যক্তিকে পাঁচটি উপদেশ দিয়েছেনÑ ১. তোমার যদি গুনাহ করতে ইচ্ছা হয় তাহলে তুমি আল্লাহর দেয়া রিজিক থেকে আহার করবে না। ২. তোমার যদি গুনাহ করতে ইচ্ছা হয় তাহলে তুমি আল্লাহর সৃষ্টি এ জমিন ছেড়ে অন্যত্র চলে যাবে। ৩. তোমার যখন গুনাহ করতে ইচ্ছা করবে, তখন তুমি এমন স্থানে চলে যাবে যেখানে আল্লাহ তোমাকে দেখতে পাবে না। অতঃপর সেখানে তুমি আল্লাহর অগোচরে তার অবাধ্যতা করবে। ৪. মৃত্যুর ফেরেশতা যখন তোমার জান কবজ করতে আসবে তখন তুমি তাকে বলবে, আমি মৃত্যুবরণ করব না এবং ৫. যখন আজাবের ফেরেশতারা এসে তোমাকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে চাইবে, তখন তুমি তাদেরকে প্রতিহত করে জান্নাতে চলে যাবে। সব উপদেশ শোনার পর ব্যক্তিটি নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করে এবং আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণার পরে জানায়, ‘আমি আমার সমস্ত গুনাহ থেকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর কাছে তাওবা করছি।’ নবী-রাসূলদের শেখানো তাওবার মাধ্যম ও দোয়াসমূহ অনুসরণ করতে পারি। আদি পিতা ও প্রথম নবী হজরত আদম আ: যেভাবে প্রার্থনা করেছিলেন, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি। যদি তুমি আমাদেরকে ক্ষমা না করো, তাহলে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবো’ (সূরা আরাফ-২৩)। তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনার এ হলো সেই বাক্যসমূহ, যা আদম আ: বরকতময় মহান আল্লাহর কাছ থেকে শেখেন।
মূসা আ: তাওবা করেছেন এভাবে, ‘হে আমার রব! আমি তো আমার নিজের প্রতি জুলুম করেছি; সুতরাং আমাকে ক্ষমা করুন! অতঃপর তিনি তাকে ক্ষমা করলেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা কাসাস-১৬)।
হজরত সুলাইমান আ: যেভাবে প্রার্থনা করেছেন, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করো এবং আমাকে এমন এক রাজ্য দান করো, যার অধিকারী আমার পরে অন্য কেউ হতে পারবে না। নিশ্চয়ই তুমি মহাদাতা’ (সূরা সোয়াদ-৩৫)। হজরত নূহ আ: সম্পর্কে কুরআনে বলে হয়েছেÑ ‘হে আমার প্রতিপালক! তুমি ক্ষমা করো আমাকে, আমার মা-বাবাকে এবং যারা বিশ্বাসী হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করেছে তাদেরকে এবং বিশ্বাসী পুরুষ ও বিশ্বাসী নারীদের। আর অনাচারীদের শুধু ধ্বংসই বৃদ্ধি করো’ (সূরা নূহ-২৮)।
কাফেরদের জন্য বদদোয়া করার পর তিনি নিজের জন্য এবং মুমিনদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করলেন। এই বদদোয়া হলো কিয়ামত পর্যন্ত আগত সমস্ত জালেমের জন্য।
প্রতিদিনের আমল হোক তাওবার মাধ্যমেই। দিনের শুরু হোক ক্ষমা চেয়ে এবং আল্লাহর সাহায্য চেয়ে। কারণ রাসূল সা: নিজের পবিত্রতার ও পরিশুদ্ধতার প্রমাণ সত্ত্বে¡ও বলেছেন, ‘আল্লাহর শপথ! আমি প্রতিদিন আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও অধিক ইস্তিগফার ও তাওবা করে থাকি’ (সহিহ বুখারি-৬৩০৭)।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com