রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১২ পূর্বাহ্ন

শিক্ষাগুরু সফিউল হকের জীবনাবসান এক সোনালী অধ্যায়ের ইতি

এম কে মনির সীতাকুণ্ড :
  • আপডেট সময় সোমবার, ১২ জুলাই, ২০২১

কথাকলি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক তথা সীতাকুণ্ডের অন্যতম জনপ্রিয় ও খ্যাতিমান ইংরেজি শিক্ষক, অজস্র ছাত্রছাত্রীর শিক্ষাগুরু, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সহকারী সচিব এস এম সফিউল হক ইন্তেকাল করেছেন। ৭ জুলাই বুধবার সকাল দশটায় চট্টগ্রামের পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। ১৯৩৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর মীরসরাই উপজেলার হাইতকান্দি ইউনিয়নের পূর্ব বালিয়াদী মহালঙ্কা গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এস এম সফিউল হক ভ্ূঁইয়া। তাঁর পিতার নাম আখেরুজ্জামান ভূঁইয়া। ব্রিটিশ শাসনামলে জাফর নগর অর্পণাচরণ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে মেট্রিকুলেশন পাস করেন তিনি। যুবক বয়সেই ১৯৫৩/৫৪ সালে চাকরী নেন পাকিস্তান পার্লামেন্টে। পাকিস্তান পার্লামেন্টে ভাষা অনুবাদকের চাকরীকালেই করাচী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তৎকালীন আএসসি (বর্তমান বিএ) পাশ করেন। পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে পূর্ব পাকিস্তানের যুদ্ধ বাঁধলে তিনি পশ্চিম পাকিস্তান ত্যাগ করেন। সেসময় পশ্চিম পাকিস্তান ত্যাগ ছিল বর্তমান আমেরিকা ত্যাগের মতো। দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের অধীনে থাকতে নারাজ ছিলেন তিনি। পূর্ব বাংলায় ফিরে এসে শিক্ষায় মনোনিবেশ করেন। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলে আবারও পুরাতন সরকারী চাকরীজীবীদের ডাক পড়ে। স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংসদে শুরু করেন চাকরী জীবন। ১৯৯২ সালে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সহকারী সচিব পদ থেকে অবসর নিয়ে ফিরে আসেন নিজ গ্রাম মহালঙ্কায়। পাকিস্তানে থাকাকালীন গ্রামের দায়িত্বশীলদের বারবার স্কুল প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়েছিলেন সফিউল হক ভূঁইয়া। দেশ ও সমাজের উন্নয়নে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই সেই কথা তিনি আঁচ করেছিলেন সেসময়ে। তিনিই মহালঙ্কা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রথম উদ্যোক্তা। বিদেশে থেকেও নানাভাবে স্কুল প্রতিষ্ঠায় রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অবসরের পর তিনি কথাকলি উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ১৯৯৬ সালে স্কুল প্রতিষ্ঠালগ্নেই। সেই থেকে দীর্ঘ পনোরো বৎসর এই স্কুল তথা পুরো সীতাকুণ্ডে ইংরেজি শিক্ষার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাঁর কাছে ইংরেজি শিখে বহু ছাত্রছাত্রী ইংরেজিতে হয়েছেন সিদ্ধহস্ত। কেবল ইংরেজি নয় ইতিহাস, ভূগোল, গণিত ও মনোবিজ্ঞানে হক স্যারের দক্ষতা ছিল প্রশংসনীয়। প্রখর মেধার অধিকারী, শিক্ষানুরাগী আদর্শ এ শিক্ষক ৮৩ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। ৭ জুলাই বাদে এশা নামাজে জানাজা শেষে মহালঙ্কা ফিতুর মোহাম্মদ ভূঁইয়া জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি পাঁচ পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন তাঁর হাতে গড়া বহু শিক্ষার্থী, রাজনীতিবিদ, সমাজসেবক, শিক্ষক, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। সফিউল হক স্যারের অন্যতম ছাত্র মহালঙ্কা উচ্চ বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক ওয়াহিদুন্নবী বলেন, স্যার ছিলেন আমাদের জীবনের একটি অংশ। স্যারকে ছাড়া কখনো কিছুই কল্পনা করতে পারতাম না। তাঁর অবদানে আজ আমরা প্রতিষ্ঠিত। তাঁর কাছেই ইংরেজির হাতেখড়ি। স্যারের শেখানো ইংরেজি দিয়ে আজ আমরা শিক্ষকতা করছি। ছাত্রছাত্রীদের ইংরেজি শেখাচ্ছি। এসব কৃতিত্ব স্যারেরই। স্যার ছিলেন একজন মানবিক, বন্ধুসুলভ, আদর্শ শিক্ষক। স্যারের সাথে বহু স্মৃতি জড়িত। খুবই মজার মানুষ ছিলেন স্যার। স্যারের সান্নিধ্যে আমরা শিখেছি পাঠ্যবিদ্যা ছাড়াও জীবনে চলার কিছু মৌলিক শিক্ষা। অত্র অঞ্চলের শিক্ষায় হক স্যারের অবদান অসামান্য। আমরা কোনদিনও তাকে ভুলতে পারব না। এমন শিক্ষকের মৃত্যু নেই, তিনি আমাদের মাঝে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল। তাঁর কর্মই আমাদের স্মরণ করিয়ে দিবে তাঁর কথা। হক স্যারের আরেক ছাত্র জাহেদুল ইসলাম বলেন, আহা! স্যার ছিল আমাদের অমূল্য সম্পদ। জীবনকালে আমরা তাঁর উপযুক্ত সম্মান দিতে পারিনি। হক স্যারেরা এভাবেই নিঃস্বার্থ হয়ে সমাজ ও দেশের জন্য ত্যাগ দিয়ে যায়। স্যারকে আল্লাহ বেহেশতে নসিব করুক।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com