করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতি যখন ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে তখন কোরবানির হাটে মানুষের ভীড়, জমায়েতকে অশনিসংকেত বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তবে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আজহার আনুষ্ঠানিকতা পালনে বিকল্প পদ্ধতি অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হাটে না গিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে কোরবানির পশু কেনাকাটাকেই করোনা পরিস্থিতির মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ মনে করছেন তারা। সরকারও সুযোগকে সারাদেশের মানুষের কাছে ছড়িয়ে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে অনলাইনে কোরবানির পশু বেচাকেনার জন্য ক্রেতা ও খামারিদের এক প্ল্যাটফর্মে আনতে চালু করা হয়েছে ‘দেশব্যাপী ডিজিটাল হাট’। সরকারের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) যৌথ উদ্যোগে এবং ‘এটুআই’-এর কারিগরি সহযোগিতায় এ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে ফরমরঃধষযধধঃ.হবঃ নামে এই অনলাইন প্ল্যাটফর্মের উদ্বোধন করা হয়। গত ৪ জুলাই চালু হওয়া ঢাকা মহানগরী কেন্দ্রিক ডিজিটাল হাটকে দেশব্যাপী স¤প্রসারণের লক্ষ্যে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। এতে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ১ হাজার ৮৪৩ টি অনলাইন শপের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের ২৪১টি হাট একটি প্লাটফর্মে যুক্ত হয়েছে। ডিজিটাল এই হাটে ক্রেতারা কোরবানির পশু লাইভ দেখতে পারবেন। প্রয়োজন মনে করলে বিক্রেতার সঙ্গে সরাসরি কথাও বলতে পারবেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, এই ডিজিটাল হাটের মাধ্যমে একদিকে বিক্রেতারা ন্যায্যমূল্য পাবেন অন্যদিকে ক্রেতারা পাবেন সঠিক পশু ক্রয়ের নিশ্চয়তা। হাটে না গিয়ে নিজেকে নিরাপদ রেখে ঘরে বসে কোরবানি পশু পাওয়ার এই সুবিধা আমরা পাচ্ছি কারণ বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বির্নিমানে কাজ করছে। আমরা যদি ডিজিটালি সক্ষম না হতাম তাহলে এই হাটের মাধ্যমে মানুষকে আজ এতটা সুরক্ষা দেয়ার জন্য এ ধরনের উদ্যোগ নেয়া হয়তো কঠিন হয়ে যেত।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ‘দেশব্যাপী ডিজিটাল হাট’ এর কলসেন্টারে (০৯৬১৪১০২০৩০) ফোন করে যে কোনো তথ্য জানা যাবে, দেওয়া যাবে অভিযোগ। ডিজিটাল হাট থেকে কেনা পশু ঈদের আগের দিনের মধ্যে ক্রেতার হাতে পৌঁছে দিতে হবে। একই শহরে হলে বিক্রেতারা ঈদের আগের দিন পর্যন্ত পশু বিক্রি করতে পারবেন। এই প্ল্যাটফর্ম থেকে ‘স্লটারিং সার্ভিসও’ নেওয়া যাবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, কৃষক এবং খামারিরা খাদ্য ও পশু উৎপাদন করে দেশকে খাদ্য ও পশু উৎপাদনে স্বাবলম্বি করে তুলেছে। দেশের ১ হাজার ৮৪৩ টি অনলাইন শপের মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ের ২৪১টি হাট একটি প্লাটফর্মে যুক্ত হয়েছে। তিনি ডিজিটাল হাটকে নিরাপদ সাশ্রয়ী এবং পরিবেশ বান্ধব বলে অভিহিত করে সবাইকে মহামারীর সময়ে এই হাট থেকে কোরবানির পশু ক্রয়-বিক্রয়ের আহ্বান জানান। পলক বলেন, ২৪১টি হাট সরকারের তত্ত্বাবধানে ভেরিফাই করা হয়েছে। জেলা-উপজেলা থেকে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, সহায়তা করেছে। আমরা সবাইকে অনুরোধ করছি এই হাটে ভিজিট করার জন্য। সবকটি ডিজিটাল হাটকে এক জায়গায় আনার জন্য এই উদ্যোগ। এটা সেন্ট্রাল ন্যাশনাল প্ল্যাটফর্ম। অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব রওনক মাহমুদ বলেন, গত বছর দেশে এক কোটি ১৮ লাখ কোরবানির পশুর চাহিদা ছিল, কিন্তু মহামারীর কারণে বিক্রি হয় ৯৪ লাখ পশু। চলতি বছর একে কোটি ১৯ লাখ কোরবানিযোগ্য পশু রয়েছে দেশে। এবছর ১ হাজার ৮৪৩টি অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে রেকর্ড সংখ্যক পশু অনলাইনে বিক্রি করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠান শেষে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক জামালপুরের এক নারী খামারির কাছ থেকে কোরবানির জন্য ৭০ হাজার টাকায় একটি দেশি জাতের ষাঁড় কেনেন। অন্যদের মধ্যে আইসিটি বিভাগের সচিব এনএম জিয়াউল আলম, ‘এটুআই’ প্রকল্প পরিচালক আব্দুল মান্নান, ‘ই-ক্যাব’ সভাপতি শমী কায়সার, ‘একশপ’ এর টিম লিডার রেজওয়ানুল হক জামি, ‘ই-ক্যাব’ সাধারণ সম্পাদক জেনারেল মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।