“শেখের বেটি হাসিনা হ্যামাক অ্যাকটা পাঁকা ঘর দিছে। চোখে দেখপার না পারলেও ভিতরের চোখ দিয়া এই সুন্দর বাড়িখানা দেখপার পাই। আবার চাউল দিচ্ছে ট্যাকাও দিচ্ছে। হ্যামি এখন অনেক সুখে আছি। দোয়া করি হাসিনা বু ভালো থাকুক। আরো মানুষসক পাঁকা ঘর দিবার ক্ষ্যামতা আল্লাহ হাসিনাকে দেক” প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরের দুয়ারে বসে চোখের পানি ফেলতে ফেলতে আবেগঘন এই কথাগুলো বলছিলো অন্ধ ডলি বেগম। কথা হয় অন্ধ ডলি বেগমের সঙ্গে। ছোট বেলায় চোখ ভালো থাকলেও কোন এক সময় বালি পড়ে তার চোখে। এরপর অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পারায় দুই চোখ অন্ধ হয়ে যায়। স্বামী তৌহিদুল জীবন বাঁচানোর তাগিদে ডলিকে নিয়ে ভিক্ষা পেশায় নামে। কখনো কারো বারান্দায় আবার কখনো খালের পাড়ের ঝুঁপরি ঘরে থাকতো তারা। পরবর্তিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় দ্বিতীয় ফেজে প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ন-২ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার একডালা ইউনিয়নের ডাকাহার গ্রামের চৌধুরীপুকুর পাড়ে নির্মিত সেমিপাঁকা ঘরে এখন অন্ধ ডলি তার স্বামীকে নিয়ে বসবাস করছে। আরেক সুবিধাভোগী ভিক্ষুক আলেয়া বেগম জানান স্বামী অনেক আগেই মারা গেছে। ছেলেরা খবর নেয় না। তাই জীবন বাঁচানোর তাগিদে গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করেন তিনি। বাড়ি-ঘর না থাকায় তিনি আগে রতনডারী ডারার পাশে গড়ে ওঠা হঠাৎপাড়ায় একটি ঝুঁপরি ঘরে থাকতেন। এখন তিনি জমিসহ ইটের ঘরের মালিক। তিনি আরো বলেন আমি স্বপ্নেও কখনো কল্পনা করিনি যে এই রকম মজবুদ পাঁকা ঘরে থাকতে পারবো। এখানে আমরা বাড়ির সঙ্গে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, টিউবয়েল, মসজিদ, রাস্তা সবকিছুই পেয়েছি। আমিসহ অনেক গৃহহীন মানুষরা এখানে অনেক সুখে আছি। সূত্রে জানা গেছে, প্রথম ও দ্বিতীয় ফেজে উপজেলায় মোট ১২৩টি আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে একডালা ইউনিয়নের ডাকাহার গ্রামের চৌধুরী পুকুর পাড় ও মালিপুকুর পাড়ে ৯১টি, কালিগ্রাম ইউনিয়নের সিলমাদার পুকুর পাড়ে ১১টি, কাশিমপুর ইউনিয়নে ১৩টি ও বড়গাছা ইউনিয়নে ৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বর্তমানে এই আশ্রয়ন প্রকল্পগুলোতে সকল প্রকারের সুবিধা প্রদান সম্পন্ন করা হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন আমরা স্থানীয় সাংসদ ও জনপ্রতিনিধিদের সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে সাধ্যের মধ্যে গৃহহীন মানুষের এই ঘরগুলো মানসম্মত ভাবে নির্মাণ করার চেস্টা করেছি। আশা রাখি জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে এই উপজেলার ঘরগুলো বিশেষ নজরদারীর মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। এছাড়াও ছোট-খাটো মেরামত ও সংস্কার কাজগুলো অব্যাহত রাখা হয়েছে। ইতিমধ্যেই আশ্রয়ন প্রকল্পের সবগুলোতে আমরা সকল প্রকারের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ন প্রকল্প সারা বিশ্বের মধ্যে একটি মডেল। লাখ লাখ গৃহহীন মানুষের জন্য বাসস্থান তৈরি করে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বের মধ্যে একটি অনন্য দৃষ্টান্তর স্থাপন করেছেন। আমরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা দিন-রাত কষ্ট করে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষ্যে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরগুলো মানসম্মত ভাবে নির্মাণ করার চেষ্টা করেছি। আমি প্রতিনিয়তই আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসরত পরিবারগুলোর খোঁজ-খবর নেওয়ার চেষ্টা করি। এছাড়া জেলা প্রশাসক স্যারও এই প্রকল্প এলাকা মাঝে মধ্যেই পরিদর্শন করেন। বাসিন্দাদের সার্বিক খোঁজ-খবর নেন এবং সমস্যাগুলো সমাধানে সহযোগিতা প্রদান করেন। ঘরগুলোর কোথাও কোন উল্লেখ্যযোগ্য ত্রুটি-বিচ্যুতি এখন পর্যন্ত দেখা দেয়নি। মোট কথা উপজেলার আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরে গৃহহীনরা বর্তমানে খুব ভালো ও সুখে আছেন।