সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২৮ পূর্বাহ্ন

স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্ব ও কর্তব্য

মেহেরুন ইসলাম:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০২১

স্বামী স্ত্রী একে অন্যের সঙ্গী, সহচরী, সহযাত্রী। একজন আরেকজনের সাথে পবিত্র কালেমার বাঁধনে বাঁধা। দুটি মনের একটি আত্মা, একটি বন্ধন। একজন আদর্শ স্ত্রী যেমন স্বামীর অহঙ্কার, তেমনি একজন আদর্শ স্বামীও স্ত্রীর অহঙ্কার। স্ত্রীর কাছে আদর্শ স্বামী হওয়াটাও পরম সৌভাগ্যের। তাই আদর্শ স্বামী হতে হলে তার কিছু গুণাবলি থাকতে হবে। স্ত্রীর প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো সঠিকভাবে পালন করতে হবে। স্ত্রীর সাথে ভালো আচরণ করতে হবে, মিষ্টভাষায় কথা বলতে হবে। সর্বোপরি, অন্তর থেকে স্ত্রীকে ভালোবাসতে হবে। মহান আল্লাহ কুরআনে বলেন, ‘তোমরা তাদের (স্ত্রী) সাথে উত্তম আচরণ করো। আর যদি তাকে তোমার অপছন্দও হয়, তবুও তুমি যা অপছন্দ করেছ হয়তো আল্লাহ তাতে সীমাহীন কল্যাণ দিয়ে দেবেন।’ (সূরা নিসা, আয়াত-১৯)
স্ত্রীর প্রতি কোনো রাগ-দ্বেষ করা যাবে না। কারণে-অকারণে গায়ে হাত তোলা যাবে না। এ বিষয়ে রাসূল সা: বলেছেন, ‘কোনো মুমিন পুরুষ মুমিন নারীর প্রতি রাগান্বিত হবে না। কেননা, যদি তার কোনো কাজ খারাপ মনে হয়, তাহলে তার এমন গুণও থাকবে, যার জন্য সে তার ওপর সন্তুষ্ট হতে পারবে।’ (সহিহ মুসলিম-১৪৬৯)
স্ত্রীরা মা-বাবা অর্থাৎ নিজের আপনজন ছেড়ে চিরতরে স্বামীর বাড়ি চলে আসে। একটা নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নেয়। আর তখন স্বামীর পরিবারটাই তার নিজের করে নেয়। স্ত্রী একটা সংসারের মূল দায়িত্ব পালন করে। তার অক্লান্ত পরিশ্রম, আদর-যত্ন, স্নেহ-মমতা, ভালোবাসা দিয়ে সবাইকে আগলে রাখে। আর তাকে আগলে রাখে স্বামী। পরিবারের সবাই যদিও খারাপ হয়, তাতেও তার দুঃখ থাকে না। একমাত্র স্বামী তার প্রতি অনুরাগী থাকলেই যথেষ্ট। স্বামীর একটু সাহচর্যে সে সব কষ্ট ভুলে থাকে। নীরবে সয়ে নেয় সব যাতনা। তাই স্বামীকে অবশ্যই স্ত্রীর প্রতি বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। তার প্রতি যেসব দায়িত্ব রয়েছে তা যথাযথভাবে পালন করতে হবে।
প্রথম দায়িত্ব হিসেবে স্ত্রীর মোহরানা পরিশোধ করতে হবে। মোহরানা পরিশোধ করা অতীব জরুরি। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর তোমরা নারীদের তাদের মোহরানা স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে পরিশোধ করবে। সন্তুষ্টচিত্তে তারা মোহরানার কিছু অংশ ছেড়ে দিলে তোমরা তা স্বাচ্ছন্দ্যে ভোগ করবে।’ (সূরা নিসা, আয়াত-৪)
স্ত্রীর থাকার জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস করো তাদেরও (স্ত্রীদের) সেরূপ গৃহে বাস করতে দাও। তাদের কোনো কষ্ট দেবে না, তাদের (জীবন) সঙ্কটে ফেলার জন্য।’ (সূরা তালাক,
আয়াত-৬)
স্ত্রীর ভরণপোষণের দায়িত্বও স্বামীর। স্ত্রী ঘরে থাকবে, ইবাদত করবে আর সন্তানাদি পালন করবে। খুব প্রয়োজন ব্যতিরেকে বাইরে বের হবে না। আর চাকরি না করাটাই ভালো। তবে একান্তই যদি করতে হয় পর্দার সাথে করতে হবে। মূলত স্ত্রীর যাবতীয় ভরণপোষণের দায়িত্ব তার স্বামীর। মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘পিতার কর্তব্য যথারীতি তাদের (সন্তান ও তার মায়ের) ভরণপোষণ করা।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২৩৩)। অন্যত্র রাসূল সা: পুরুষদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, ‘তুমি যখন খাবে, তাকেও খাওয়াবে, তুমি যখন পরিধান করবে, তাকেও পরাবে। তার চেহারায় কখনো প্রহার করবে না। তার সাথে অসদাচরণ করবে না।’ (আবু দাউদ-২১৪২, মুসনাদে আহমাদ-১৮৫০১)
স্ত্রীর সাথে সদ্ব্যবহার করতে হবে। স্ত্রীর সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তাদের সাথে সৎভাবে জীবন যাপন করবে।’ (সূরা নিসা, আয়াত-১৯)। আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত- রাসূল সা: বলেন, ‘তোমাদের আদেশ করা হচ্ছে, তোমরা নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে। কেননা, বুকের হাড় থেকে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। সবচেয়ে প্যাঁচানো বা বাঁকানো হচ্ছে বুকের ওপরের হাড়টি। যদি তা সোজা করতে চাও, তাহলে ভেঙে যাবে। আর যদি ছেড়ে দাও তাহলে ওরকম বাঁকা রয়েছে। অতএব, তোমাদের আদেশ করা হচ্ছে, তোমরা নারীদের সাথে সদ্ব্যবহার করবে।’ (বুখারি-৫১৮৬)
স্ত্রীদের দ্বীনদার হতে তাগিদ দিতে হবে। নামাজ-কালাম করতে কঠোর আদেশ দিতে হবে। একজন দ্বীনদার স্ত্রী স্বামীর অমূল্য সম্পদ। এ বিষয়ে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে ঈমানদাররা তোমরা নিজেদের ও তোমাদের পরিবার-পরিজনদের রক্ষা করো (জাহান্নামের) আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর।’ (সূরা-তাহরিম, আয়াত-৬)
স্ত্রীর প্রতি যত্নশীল হতে হবে। রোগে-শোকে তার পাশে থেকে মানসিক সাহস দিতে হবে। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক পবিত্র। তাই দুজন দুজনকে বিশ্বাস করতে হবে। বিশ্বাস ছাড়া কোনো সম্পর্কই টিকে না। স্বামীর যেমন সচ্চরিত্রবান হতে হবে, স্ত্রীকেও তেমন সচ্চরিত্রবান হতে হবে। অহেতুক ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়াঝাটি করা ঠিক নয়। এতে সংসারে অশান্তি সৃষ্টি হয়। স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের উচিত নিজ নিজ দৃষ্টিকে সংযত রাখা যাতে যিনা-ব্যভিচারের মতো ঘৃণিত কাজে লিপ্ত না হয়। যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হলেই সংসারে অশান্তি হয়, সন্দেহের রেখাপাত হয় দুটি মনে। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘যখন তারা এটি শুনল, তখন মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীরা নিজেদের লোকদের সম্পর্কে কেন ভালো ধারণা করল না? কেন তারা বলল না যে, এটা তো সুস্পষ্ট অপবাদ।’ (সূরা নূর, আয়াত-১২)
স্ত্রীকে সময় দিতে হবে। কাজের ফাঁকেও সময় করে তার সাথে গল্প গুজব করতে হবে। সারাদিন কাজের ব্যস্ততা থাকতেই পারে। তাই দিনে না পারলেও রাতে কিছু সময় স্ত্রীর সাথে গল্প করতে হবে, তাকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমাদের প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সা: এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি তাঁর বিবিদের সময় দিতেন। তাদের সাথে গল্পগুজব করতেন। এমনকি তিনি স্ত্রীদের সাথে রাত্রিবেলা দৌড় প্রতিযোগিতাও করতেন। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্য সর্বাধিক ভালো মানুষ তারাই, যারা তাদের স্ত্রীদের সাথে ভালো ব্যবহার করে।’ (সুনানে তিরমিজি-১১৬২)
একজন আদর্শ স্বামী অবশ্যই স্ত্রীর হক পালন করবে। কেননা, তার জাহান্নামের আগুনের ভয় আছে। আদর্শ স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের অহঙ্কার, গর্ব। আদর্শ স্বামীর সংস্পর্শেই দাম্পত্যজীবন সুন্দর ও সুখময় হয়ে ওঠে। লেখক : সিনিয়র স্টাফ নার্স , বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com