দেশে বাড়ছে কাজুবাদামের চাহিদা। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে দেশে কাজুবাদাম আমদানি বেড়েছে ৩২ গুণ। আছে কফিরও চাহিদা। কফি ও কাজুবাদাম দুটি-ই আমদানির মাধ্যমে দেশের চাহিদা পূরণ হয়। সম্প্রতি পাহাড়ে এ দুই ফসল চাষে দারুণ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকারও পার্বত্য এলাকায় কফি ও কাজুবাদাম চাষের জন্য বিস্তর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। নেওয়া হয়েছে ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ শীর্ষক প্রকল্প।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমীক্ষা বলছে, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান-এই তিন পার্বত্য জেলায় অন্তত পাঁচ লাখ হেক্টর জমি অনাবাদি পড়ে আছে, যেগুলো কফি ও কাজুবাদাম চাষের জন্য উপযুক্ত। এর মধ্যে ন্যূনতম দুই লাখ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম আবাদ করা গেলে বছরে একশ কোটি ডলারের বেশি আয় করা যাবে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় দাঁড়াবে প্রায় নয় হাজার কোটি টাকা। বাকি জমির মধ্যে এক লাখ হেক্টরে কফি আবাদ করা গেলে তা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা যাবে। এক লাখ হেক্টরে দুই লাখ টন কফি উৎপাদন সম্ভব, যার বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও কফি-কাজুবাদামের চাহিদা রয়েছে। আমরা যেসব পণ্য রপ্তানি করি, সেগুলো থেকে এ দুই পণ্যের দামও বেশি। সেজন্য এসব ফসলের চাষাবাদ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বাড়াতে হবে। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে
কফি-কাজুবাদাম উৎপাদনের সম্ভাবনা নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও কফি-কাজুবাদামের বিশাল চাহিদা রয়েছে। আমরা যেসব পণ্য রফতানি করি, সেগুলো থেকে এ দুই পণ্যের দামও বেশি। সেজন্য এসব ফসলের চাষাবাদ ও প্রক্রিয়াজাতকরণ বাড়াতে হবে। সরকার উদ্যোগ নিয়েছে।’তিনি বলেন, ‘পাহাড়ে কাজুবাদাম ও কফির উন্নত জাত ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং এসব ফসলের চাষ আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে কাজ করছি। এটি করতে পারলে ওই এলাকার অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটবে। মানুষের জীবনযাত্রার মানের দৃশ্যমান উন্নয়ন হবে।’ মন্ত্রী আরও বলেন, ‘কাজুবাদাম ও কফির মতো অর্থকরী ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। আমরা বিনামূল্যে উন্নত জাতের চারা, প্রযুক্তি ও পরামর্শসেবা দিচ্ছি। গত বছর কাজুবাদামের এক লাখ ৫৬ হাজার চারা বিনামূল্যে কৃষকদের দেওয়া হয়েছে; এ বছর তিন লাখ চারা দেওয়া হবে।’
হিসাব মতে, দেশের আয়তনের এক-দশমাংশ পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চল। এর তিনটি জেলার মোট আয়তন ১৩ হাজার ২৯৫ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু আবাদযোগ্য ফসলি জমি মোট ভূমির মাত্র ৫ শতাংশ। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৯২ শতাংশ উঁচুভূমি, ২ শতাংশ মধ্যম উঁচুভূমি এবং ১ শতাংশ নিচুভূমি আছে। সমতল জমির অভাবে এখানে ফসলের আবাদ সম্প্রসারণের সুযোগ খুবই সীমিত। কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বলছে, বর্তমানে পার্বত্য এলাকার মোট ভূমির প্রায় ২২ শতাংশ আবাদের আওতায় আনার সম্ভাবনা আছে। এ এলাকার ভূ-প্রাকৃতিক অবস্থান ও আবহাওয়া বিবেচনায় কফি ও কাজুবাদাম এবং মসলাজাতীয় ফসল আবাদের অনেক সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দেশের বরেন্দ্র অঞ্চলসহ অন্যান্য অঞ্চলের পার্বত্য বৈশিষ্ট্য অনুরূপ জমিও কাজুবাদাম ও কফি চাষের উপযোগী। সংশ্লিষ্টদের ভাষ্যে, দেশে কাজুবাদামের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। এ চাহিদার জোগানে দ্রুত বাড়ছে আমদানির পরিমাণ। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১৮ হাজার কেজি কাজুবাদাম আমদানি হয়েছিল। শেষ তথ্য পর্যন্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে কাজুবাদাম আমদানি হয়েছে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার কেজি। অর্থাৎ চার বছরে পণ্যটির আমদানি বেড়েছে প্রায় ৩২ গুণ। ‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ’ প্রকল্পের প্রস্তাবনা সূত্রমতে, বিশ্বে কাজুবাদামের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বে কাজুবাদামের বাজার রয়েছে ৯.৮ বিলিয়ন ডলার মূল্যের। এর মধ্যে ভিয়েতনাম একাই প্রায় ৩.৩৪ বিলিয়ন ডলার রফতানি করে। বাকি দেশগুলোর মধ্যে ভারত সর্বোচ্চ ৬৭৪ মিলিয়ন ডলার কাজুবাদাম রফতানি করে। ভারতে উৎপাদন বেশি হলেও অভ্যন্তরীণ চাহিদার কারণে রফতানি কম হয়।
এদিকে আন্তর্জাতিক কয়েকটি সংস্থার তথ্য বলছে, বর্তমানে বিশ্বে প্রতি বছর ৩৫ লাখ টন কাজুবাদাম উৎপাদন হয়। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হচ্ছে পার্শ্ববর্তী ভারতে, সাত লাখ ৪৬ হাজার টন। এছাড়া ভিয়েতনামে চার লাখ ও আফ্রিকার দেশগুলোতে ১২ লাখ টন কাজুবাদাম উৎপাদিত হয়। গত বছর পর্যন্ত বাংলাদেশে কাজুবাদাম উৎপাদন হয়েছে মাত্র দেড় হাজার টন।