সম্প্রতি ‘মডেল’ ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌ নামের দু’জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। তাদের বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ, ইয়াবা, সীসা খাওয়ার উপকরণ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে পিয়াসার নামে গুলশান থানায় ও মৌয়ের নামে মোহাম্মদপুর থানায় পৃথক দুটি মামলাও দায়ের করা হয়। অভিনয়শিল্পীদের বরাবরই অভিযোগ, খবরের শিরোনামে আসা অভিযুক্ত বেশিরভাগ মডেল-চিত্রনায়িকারই আসলে তেমন কোনো কাজ বা পরিচয় নেই। কোনো শিল্পী সংগঠনের সদস্যও নন, তবুও তিনি অপরাধ করে পুলিশের হাতে ধরা পড়লে বনে যান মডেল বা চিত্রনায়িকা! যা সত্যিকারের অভিনয়শিল্পী, চিত্রনায়িকা বা মডেলদের জন্য বিব্রতকর। এমন পরিস্থিতিতে নড়েচড়ে বসেছে টেলিভিশন তারকাদের নিয়ে গঠিত সংগঠন অভিনয়শিল্পী সংঘ। কাকে মডেল বা অভিনেত্রী বলা হবে আর কাকে নয়- এ সংক্রান্ত একটি পরিপত্র/বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে সংগঠনটি।
অভিনয় শিল্পী সংঘের সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবিব নাসিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ব্যক্তিগত পরিচয়, প্রভাব, বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং কিছু ক্ষেত্রে কপালের জোরে দুই একটি বিজ্ঞাপন বা নাটকে কাজ করলেই তাকে মডেল বা অভিনেত্রী বলা যায় কি না সেই ভাবনাটা এখন জরুরি হয়ে উঠছে।’ উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ‘অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কেউ কোনো টাইম পাসিং সোস্যাল প্লাটফর্মে, ফ্রেন্ডলি মেইড ভিডিওতে অভিনয় করেছে, মডেল হিসেবে হয়তো ছবি আছে বাসার পাশের কোনো টেইলরের দোকানে অথবা একটা দুটো বিলবোর্ডে, সেও সোস্যাল মিডিয়াতে নিজেকে এক্টর বা মডেল দাবি করছে। অথচ মডেল বা অভিনেতা/অভিনেত্রী হয়ে ওঠার জন্য যে নিষ্ঠা, একাগ্রতা, জ্ঞান, দর্শন, প্রস্তুতি, সামাজিক ও পেশাদার দায়বদ্ধতা প্রয়োজন সেসবের কিছুই তার নেই। আবার হুট করে এসেও কেউ মডেল বা অভিনেতা হয়ে ওঠে না, তাও না। সেক্ষেত্রে শতভাগ একাগ্রতার সঙ্গে নিজেকে তৈরি করতে হয় আরও ভালো কাজের জন্য এবং শিল্পী হিসেবে পরিপূর্ণতার দিকে এগিয়ে যাবার জন্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রচুর অভিনেতা-অভিনেত্রী, মডেল তাদের কাজ দিয়ে সম্মান অর্জন করেছেন, পরিবারের জন্য গর্ব হয়েছেন, পেয়েছেন মানুষের অকুণ্ঠ ভালোবাসা, সামাজিক ও জাতীয় স্বীকৃতি, হয়েছেন কোটি মানুষের আদর্শ।’
গণমাধ্যমের প্রতি নাসিমের অভিযোগ, ‘কোথাও পুলিশি অভিযানে ধর-পাকড় হলে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় হেডলাইন হয় অমুক মডেল বা অভিনেতা/অভিনেত্রী গ্রেফতার; যা অবধারিতভাবে হয়ে ওঠে আকর্ষণীয় সংবাদ। এ ধরনের হেডলাইন; সর্বজন শ্রদ্ধেয়, প্রথিতযশা অভিনেতা অভিনেত্রী, মডেলসহ বিনোদন মাধ্যমে নিষ্ঠার সঙ্গে কর্মরত সকলের জন্য সামাজিক ভাবে অত্যন্ত বিব্রতকর এবং অসম্মানজনক হয়ে ওঠে। এই পেশার মানুষ সম্পর্কে এক ধরনের অনাস্থা, অসম্মান তৈরি হয় সমাজে। যা হয়ে উঠতে পারে অপ্রত্যাশিত সোস্যাল ট্যাবু। অভিনয় শিল্পী সংঘ মনে করছে, গণমাধ্যম কাকে অভিনেতা/অভিনেত্রী বা মডেল বলবে তার উপরই নির্ভর করে এই পরিস্থিতি তৈরি হবে কি না? এত এত সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ, নানান প্রতিকূলতার মধ্যে স্বপ্নপূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া স্ট্রাগলার এবং ভবিষ্যতে বিনোদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করে নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতে উদগ্রীব নতুন প্রজন্মকে এই রকম বিব্রতকর প্রশ্নের সম্মুখীন যেন না হতে হয় সেটা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নিশ্চিত করার দায়িত্ব অনেকটাই আপনাদের।’ তাদের মতে, গণমাধ্যম যখন হেডলাইন করবেন, সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো থেকে যাচাই এবং সংশ্লিষ্ট কাজে তার নিষ্ঠা, তার অবদান প্রভৃতি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে তার তার পেশা উল্লেখ করবেন এটাই প্রত্যাশিত।’