জামালপুরের বকশীগঞ্জে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার প্রতিবাদকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিমল সাহা এখন মানবেতর জীবন যাপন করছেন। হৃদ রোগসহ নানা রোগ বাসা বেধেঁছে তার শরীরে। তার স্ত্রীও কিডনি রোগে আক্রান্ত। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছেন দেশের এই সূর্য সন্তান ও তার স্ত্রী। পৌর শহরের উত্তর বাজার এলাকায় এক চালা জরাজীর্ন ঘরে অনাহারে অর্ধাহারে মানবেতর দিন কাটছে তার। ভাগ্যে জুটেনি প্রধানমন্ত্রীর উপহার পাকা ঘর। জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের টানে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন পরিমল সাহা। স্বাধীনতা যুদ্ধের ঐতিহাসিক রনাঙ্গন ধানুয়া কামালপুর ১১ নং সেক্টরের অধীনে বিভিন্ন অঞ্চলে সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন এই সাহসী বীর। এছাড়াও টাংগাইল, ঘাটাইল, নাগরপুর, কালিহাতি, শেরপুর, ঝিনাইগাতী, নালিতাবাড়ী, নকলা, শ্রীবরদী এলাকায়ও তিনি যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধকালীন তার কমান্ডার ছিলেন কোম্পানি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ফরহাদ হোসেন। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে দেশ স্বাধীনের পর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ঘাতকরা স্বপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে। পৃথিবীর ইতিহাসে ন্যাক্কারজনক এই ঘটনার প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন পরিমল সাহা। বেশির ভাগ মানুষ যখন ভয়ে চুপ, তখন পরিমল সাহা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য সহ পাঠীদের সাথে দেয়ালে দেয়ালে হত্যার বিচার চেয়ে পোস্টার লাগান। মিছিল করেন। হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ করায় তিনি তৎকালীন সামরিক সরকারের রেষানলে পড়েন। বাধ্য হয়ে তিনি ভারতে পালিয়ে যান। তিনি কাদেরিয়া বাহিনীর অন্যতম সদস্য ছিলেন। ১৯৭৭ সালের ৩০ মে হালুয়াঘাট সীমান্তে সামরিক বাহিনীর হাতে আটক হন মুক্তিযোদ্ধা পরিমল সাহা। আটকের পর তার উপরে চলে অমানুষিক শারিরীক নির্যাতন। দুই বছর পর নির্যাতন সেল থেকে মুক্তি পান তিনি। সেই নির্যাতনে তিনি মানসিক ভাবে কাজের কর্মক্ষম হারিয়ে ফেলেন। এর পরেও বিভিন্ন সময়ে তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হন। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ছাড়া তার আর কোন সহায় সম্বল নেই। মুক্তিযোদ্ধার সম্মানি ভাতাই তার একমাত্র ভরসা। ভাতার টাকায় চলে তার চিকিৎসা ও চারজনের সংসার। এতে করে সংসারে অভাব অনটন লেগেই থাকে। তার স্ত্রীর দুটি কিডনিই বিকল। টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে পারছেন না তারা। তাই প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহার একটি ঘর ও আর্থিক অনুদান চান তিনি। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিমল সাহা বলেন,মুক্তিযোদ্ধাদের বিরল সম্মান দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জীবনের শেষ সময়ে তাই আমার আর চাওয়ার কিছু নেই। একটি ঘরের জন্য আবেদন করেছিলাম কিন্তু পাইনি। এক চিলতে ভিটে রয়েছে আমার। সেই বসত ভিটায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার একটি পাকা ঘর আর কিডনি রোগে আক্রান্ত আমার স্ত্রী জুনি সাহার চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগীতা চাই। বকশীগঞ্জ পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম সওদাগর বলেন, অভাব অনটনের মধ্যদিয়েই জরাজীর্ন ঘরে দিন কাটে মুক্তিযোদ্ধা পরিমল সাহার। তিনি ও তার স্ত্রী দুজনেই অসুস্থ্য। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তারা। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার একটি পাকা ঘর পেলে তার জন্য অনেক ভালো হবে। এছাড়াও পৌর সভার পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব পাশে থাকার কথা জানান তিনি। বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুনমুন জাহান লিজা বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্যই আমরা লাল সবুজের পতাকা পেয়েছি। তাই প্রধামন্ত্রীর উপহারসহ সব ধরনের সহযোগীতা তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পাবেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিমল সাহার ব্যাপারে সার্বিকভাবে খোঁজ খবর নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দেন তিনি।