শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ১১:২৮ অপরাহ্ন

ভোলায় বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষের সম্ভাবনা

বাসস:
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ১৭ আগস্ট, ২০২১

জেলায় বাণিজ্যিকভাবে আদার চাষ শুরু হয়েছে। চলতি বছরের রবি মৌসুমের শেষের দিকে জেলার ৭ উপজেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে উন্নত জাতের পাহাড়ি আদার চাষ হয়েছে। অপেক্ষাকৃত উঁচু ও পতিত জমিতে আদা চাষে তেমন বেশি সারের প্রয়োজন এবং পরিশ্রম লাগেনা। তাই এ অঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ মসলা জাতীয় এ ফসল চাষে ব্যাপক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। নির্ধারিত জমি থেকে ৪২০ মেট্রিক টন আদা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। হেক্টরপ্রতি ১২ থেকে ১৩ মেট্রিক টন আদা উৎপাদন করা সম্ভব। ৭-৮ মাসব্যাপী আদা চাষে ৪’শ ৩২ জন কৃষককে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বীজ বিতরণ ও প্রশিক্ষণের আওতায় এনেছে কৃষি বিভাগ।
জেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবু মো: এনায়েতউল্লাহ বাসস’কে জানান, আদা মূলত দামি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় একটি মসলা। দেশে আদা চাহিদার তুলনায় বড় একটি অংশ অন্যদেশ থেকে আনতে হয়। এ জেলায় সুপারি ও নারকেল বাগান রয়েছে ১১ হাজার হেক্টর জমিতে এবং ৩ হাজার মিলিমিটারের উপরে বৃষ্টিপাত হয়। যা আদা চাষে অত্যন্ত উপযোগী। বিশেষ করে ছায়াযুক্ত জমিতে অন্য জমির চেয়ে ২০ ভাগ বেশি আদার উৎপাদন হয়। এমন ধারনা থেকে প্রথমবারের মতো বান্দরবন থেকে আদা এনে তা বিনামূল্যে কৃষকদের বীজ হিসেবে প্রদান করি।
তিনি জানান, জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি আদার চাষ হয়েছে লালমোহন উপজেলায় ২৯ হেক্টর জমিতে। মূলত সুপারী ও নারকেল বাগানের পতিত উঁচু জমিকেই আমরা আদা চাষের জন্য নির্ধারণ করেছি। বৃষ্টি হলেও পানিটা নেমে যায়। যা আদার জন্য অতি প্রয়োজন। ইতোমধ্যে জেলার সর্বত্রই অত্যন্ত ভালো মানের আদার গাছ হয়েছে। আমাদের মাঠ পর্যায়ের কৃষি অফিসাররা কৃষকদের সব ধরণের পরামর্শ সেবা দিয়ে আসছে। আশা করছি ব্যাপক ফলন আসবে।
কৃষকদের সাথে আলাপ করে জানা যায়, মার্চ-এপ্রিল মাসের দিকে তারা আদার বীজ রোপণ করেছেন। নভেম্বর-ডিসেম্বর দিকে ফলন ঘরে তুলবেন। পতিত ও পরিত্যক্ত জমিতে এর চাষ হওয়ায় জমির শতভাগ ব্যবহার নিশ্চিত হচ্ছে। এক শতাংশ জমির জন্য ৪ কেজি আদার বীজ প্রয়োজন হয়। আর একটি গাছ থেকে আড়াই কেজি বা তারচেয়ে বেশি আদা পাওয়া যায়। তাই পরিশ্রম কম হওয়াতে আদা চাষে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
উপজেলা সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের চর মনসা গ্রামের সবুজ বাংলা কৃষি খামারে এক বিঘা জমিতে আদা চাষ হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে দেওয়া হয়েছে ৩০০ কেজি বীজ বিনামূল্যে। খামারের মালিক কৃষক ইয়ানুর রহমান বিপ্লব মোল্লা বাসস’কে জানান, আদা চাষে তেমন পরিশ্রম করতে হয়না। পুকুরের উঁচু পাড় ও বিভিন্ন গাছ বাগানের ছায়াযুক্ত স্থানে তিনি আদার আবাদ করেছেন। জমি প্রস্তুত করার সময় মাটিতে সার দিতে হয়, এছাড়া কোন সার দিতে হয়না। বর্ষা মৌসুমে ছত্রাক আক্রমণ করার সম্ভাবনা থাকে তাই এ সময়টাতে ছত্রাক নাশক স্প্রে করতে হয়। আর তেমন কোন পরিশ্রম নেই। আশা করছেন ভালো ফলন পাবেন।
অপর কৃষক মনিরুল ইসলাম বলেন, তিনি এবছর ক্ষুদ্র পরিসরে আদার চাষ করলেও আগামীতে তা স¤প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে। এখান থেকেই তিনি বীজ সংরক্ষণ করে রাখবেন বলে জানান।
লালমোহন উপজেলা কৃষি অফিসার এ এফ এম শাহাবুদ্দিন বাসস’কে বলেন, তার উপজেলায় সবচেয়ে বেশি জমিতে আদার চাষ হয়েছে। মূলত সুপারির বাগানগুলোতেই বেশি আবাদ হয়েছে। এর মাধ্যমে এসব বাগানকে দুই ফসলী জমিতে রুপান্তর করা হলো। তারা কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করেছেন। ২৯ জন কৃষককে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জেলা কৃষি বিভাগের প্রধান কর্মকর্তার একান্ত উদ্যোগে চাষ হওয়া আদা প্রথম দিকে চ্যালেঞ্জ মনে হলেও তা এখন সফলতার দিকে ধাবিত হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।
উপ পরিচালক আবু মো: এনায়েতউল্লাহ আরো জানান, মাঠে আদার বর্তমান অবস্থা দেখে আমরা খুবই আশাবাদী। মনে হচ্ছে এখানে আদা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। গত বছর যেখানে মাত্র ৩ হেক্টর জমিতে আদা চাষ হয়েছে, যা এবার কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আমরা যদি সুপারি ও নারকেল বাগানের ২০ ভাগও আদার জন্য ব্যবহার করতে পারি, তবে এখানে ব্যাপক আদা উৎপাদন সম্ভব হবে। এতে করে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় আদা রপ্তানী করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com