তৃতীয় নগর পরিচালনা অবকাঠামো উন্নতিকরন প্রকল্পের আওতায় ৩য় পর্যায়ে ২০১৯-২০ অর্থবছরে নওগাঁ পৌরসভার আওতাধীন স্যানেটারী ল্যান্ডফিল উন্নয়ন ও ৬টি পাবলিক টয়লেট নির্মানের কাজে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ওই প্রকল্পের দরপত্র ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রায় ৫ মাস পর সিদ্ধান্ত আসে (নটিফিকেশন অব আওয়ার্ড) ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল। পরদিন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান বিল্ডার্স-ইথেন এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিঃ (জেভি) কে কার্যাদেশ দেয় পৌরসভা। ওই কাজে ব্যয় ধরা হয়েছে ১১ কোটি ৭৫ লাখ ৯২ হাজার ২৪৭ টাকা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ; যথাযতভাবে পৌরসভা সাইট বুঝে না দেয়ায় তারা কাজ করতে পারছে না। কোমাইগাড়ী মৌজায় স্যানেটারী ল্যান্ডফিল উন্নয়নের স্থান নির্ধারন করে পৌরসভা। স্থানটিতে দীর্ঘদিন থেকে শহরের ময়লা-অবর্জনা ফেলে আসছে তারা। ওইস্থান থেকে ময়লা আবর্জনা সরিয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেয়ার চুক্তি রয়েছে বলেও জানায় তারা। কিন্তু সেখান থেকে এখন পর্যন্ত কোন ময়লা-আবর্জনা সরানো হয়নি। প্রতিদিন ফেলা হচ্ছে ১০-১২টন ময়লা। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও পৌরসভার মধ্যে বেশ কয়েকটি চিঠি চালাচালি হলেও এর সমাধান হয়নি। ওই প্রকল্পের আওতায় নওগাঁ সরকারী ডিগ্রী কলেজের মোড়, বাজারের কিচেন মার্কেট, মুক্তির মোড়, সুপারীপট্টি, তুলশীগঙ্গা ও দয়ালের মোড়ে একটি করে মোট ৬টি গনসৌচাগার স্থাপন করা হবে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সুত্রে জানা যায়, গত ২০২১ সালের ১৩ এপ্রিল কার্যাদেশ পাওয়ার ১৫ দিন অপেক্ষার পরও পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সাইট বুঝিয়ে না দেয়ায় তারা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীকে ২৭ এপ্রিল চিঠি দেয়। কিন্তু চিঠির পরও সাইট বুঝে না পেয়ে ৫ মে পুনরায় তারা পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর চিঠি পাঠায়। প্রতিটি চিঠিতে অনুলিপি পাঠানো হয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক বরাবর। এরপর ৬জুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান জরুরী ভিত্তিতে সাইট বুঝে দেয়ার জন্য নিবার্হী প্রকৌশলী বরাবর আরো একটি চিঠি পাঠায়। ওই চিঠির পর ১৩জুন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সামগ্রিক এষ্টিমেট, ড্রয়িং এবং ডিজাইন বুঝে দেয়ার জন্য আরো একটি চিঠি পাঠায় নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর। এরই প্রেক্ষিতে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে এ সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় বুঝিয়ে দেয়ার জন্য ২১জুন দিন নির্ধারন করে ১৭জুন তারিখে একটি চিঠি প্রেরন করে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অভিযোগ; এরপরও পৌরসভার নির্ধারিত তারিখে টিবিএম না দেওয়ার ফলে গত ২৭ জুলাই তারিখে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ইকবাল শাহরিয়ার পিপিআর-২০০৮ অনুযায়ী জিসিসি ক্লোজ ৮৯.১ (এ) ধারা মতে উপরোক্ত কাজের চুক্তি বাতিল করে পারফরমেন্স সিকিউরিটি ফেরত দিতে পৌরসভার প্রকৌশলী বরাবর চিঠি পাঠায়। চিঠি পাওয়ার পর ১১ আগষ্ট পৌরসভার মেয়রকে নির্বাহী প্রকৌশলী সাইট থেকে স্তপকৃত ময়লা-আবর্জনা সমূহ অপসারন পূর্বক কাজের পরিবেশ সৃষ্টির জন্য চিঠি দেন। চিঠিতে নির্বাহী প্রকৌশলী বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন; অন্যথায় প্রকল্প বাস্তবায়নে বিঘœ সৃষ্টি হলে অত্র পৌরসভাকে দায়ভার বহন করতে হবে। এ বিষয়ে নওগাঁ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে যথাযথভাবে স্যানিটারী ল্যান্ডফিলের স্থান ও ৬টি গনশৌচাগারের স্থান নির্ধারন করে দিয়েছি। একটি গনশৌচাগারের জায়গা নিয়ে কিছু সমস্যা থাকায় জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। সেটিরও ব্যবস্থা হয়ে যাবে। আমাদের কোন বিষয়ে গাফিলতি নেই। সিডিউল অনুযায়ী স্যানিটারী ল্যান্ডফিলের স্থানে আগের থেকে যে ময়লা-আবর্জনা রয়েছে তা ঠিকাদারকেই সরিয়ে নিতে হবে। সম্প্রতি যে ময়লা-আবর্জনা পৌরসভা ফেলেছে তা মেয়র অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স খান বিল্ডার্স-ইথেন এন্টারপ্রাইজ প্রাইভেট লিঃ (জেভি) এর স্বত্বাধিকারী ইকবাল শহরিয়ার বলেন, সাইট থেকে চুক্তি অনুযায়ী ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে নেয়া হয়নি। এখনো প্রতিদিন পৌরসভা ১০-১২ টন ময়লা-আবর্জনা ফেলছেন। ওই স্থানে সমতল যেটুকু জায়গা ছিল সেখান থেকেও পৌরসভা বিপুল পরিমান মাটি কেটে সরিয়ে নেয়ায় বিরাট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে অনেকগুলো গাছ আছে সেগুলো কেটে সরানো হয়নি। এছাড়াও পানি উন্নয়ন বোর্ডের সীমানা নিয়েও সমস্যা রয়েছে। বারবার এ বিষয়ে পৌরসভার নিবার্হী প্রকৌশলীকে চিঠি দেয়া হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এদিকে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদকালের স্বল্পতার সৃষ্টি হয়েছে। আমার ধারনা; কাজটি বাস্তবায়ন ও উন্নয়নের গতিকে ত্বরান্বিত করতে পৌরসভা অনাগ্রহ প্রকাশ করছে। এসব কারনে আমি চুক্তি বাতিলের জন্য চিঠি দিয়েছি।