সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৫ পূর্বাহ্ন

বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবে যারা

মুফতি আবুল কাসেম :
  • আপডেট সময় সোমবার, ৩০ আগস্ট, ২০২১

মানুষের হায়াত নির্ধারিত। নির্দিষ্ট সময়ের বেশি এক মুহূর্তও কেউ এ পৃথিবীতে থাকতে পারবে না। এটাই আল্লাহ তায়ালার সুমহান বিধান। নির্দিষ্ট জীবনকাল অতিবাহিত হওয়ার পর তাকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। থাকতে হবে দীর্ঘকাল কবরজগতে। এরপর হাশরের ময়দানে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে তাকে। দিতে হবে সারাজীবনের হিসাব-নিকাশ। হাশরের মাঠের অবস্থা হবে খুব ভয়াবহ। সূর্য থাকবে তখন মাথার খুব কাছেই। যদ্দরুণ ঘামের স্রোত বয়ে যাবে। মানুষ হাবুডুুবু খাবে তাতে। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, ‘বিচার দিবসে সূর্যকে মানুষের কাছে আনা হবে, সেটি থাকবে তাদের থেকে এক মাইল দূরে।’
মানুষ তার আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে অবস্থান করবে। কারো ঘাম হবে টাখনু সমান, কারো হাঁটু সমান, কারো কোমর সমান, কারো হবে মুখ সমান।’ (মেশকাতুল মাসাবিহ-৫৫৩০)
সে কঠিন হাশরে কেউ কারো হবে না। সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকবে। সবার মুখে থাকবে ইয়া নাফসি, ইয়া নাফসি (আমাকে বাঁচান, আমাকে বাঁচান)। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘সে দিন মানুষ পালাবে নিজের ভাই, নিজের মা-বাবা, নিজের স্ত্রী ও সন্তানাদি থেকে। যে দিন প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর এমন অবস্থা এসে পড়বে, যা তাকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে।’ (সূরা আবাসা : ৩৪-৩৭)
হাদিস শরিফে এসেছেÑ ‘হাশরবাসী কষ্ট লাঘব হওয়ার জন্য নবীদের সুপারিশের জন্য ছোটাছুটি করবে; কিন্তু তারা সুপারিশ করতে অস্বীকৃতি জানাবেন এবং বলবেন, নাফসি-নাফসি। শুধু প্রিয় নবী মুহাম্মদ সা: তখন সুপারিশ করবেন।’ (সহিহ বুখারি-৩৩৪০)
এমন ভয়াবহ অবস্থা হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তায়ালা তাঁর কিছু প্রিয় বান্দাদের বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা: বলেন, একদিন রাসূল সা: বলেন, ‘আমার কাছে সব উম্মতের লোকদের পেশ করা হলো। আমি দেখলাম, দু’-একজন নবীর সাথে মাত্র অল্পক’জন উম্মত রয়েছে। কোনো কোনো নবীকে দেখলাম তার সাথে কোনো উম্মতই নেই! ইতোমধ্যে বিরাট একটি কাফেলা আমার সামনে আনা হলো। আমি মনে করলাম, এটাই বুঝি আমার উম্মত; কিন্তু আমাকে বলা হলো যে, এটা মুসা আ: ও তার উম্মত । আপনি অন্য দিগন্তে তাকান।
অতঃপর আমি সেই দিকে তাকাতেই আরো একটি বিরাট দল দেখতে পেলাম। আমাকে বলা হলো, এটি আপনার উম্মত। আর তাদের সাথে এমন ৭০ হাজার লোক আছে, যারা বিনা হিসাবে সরাসরি জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ কথা বলে তিনি (আল্লাহর রাসূল) উঠে নিজ ঘরে প্রবেশ করলেন। এ দিকে লোকেরা (উপস্থিত সাহাবিরা) ওই সব জান্নাতি লোকদের ব্যাপারে বিভিন্ন আলোচনা শুরু করে দিলেন, (কারা হবে সে সৌভাগ্যবান লোক) যারা বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবে?
কেউ কেউ বলল, আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছি এবং তাঁর রাসূল সা:-এর অনুসরণ করে থাকি। সুতরাং আমরাই তাদের অন্তর্ভুক্ত। কেউ কেউ বলল, তারা হলোÑ আমাদের সেসব সন্তান, যারা ইসলামী যুগে জন্মগ্রহণ করেছে। আর আমাদের জন্ম হয়েছে জাহেলি যুগে। নবী সা:-এর কাছে এ সংবাদ পৌঁছলে তিনি বেরিয়ে এলেন এবং বললেন, তারা হলো সেসব লোক, যারা অন্যের কাছে ঝাড়ফুঁক করে দিতে বলে না, কুলক্ষণ গণনা করে না, দাগকেটে চিকিৎসা করায় না; বরং তারা স্বীয় রবের ওপরই ভরসা রাখে। তখন উকাশা ইবনে মিহসান রা: বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমি কি তাদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন আরেকজন দাঁড়িয়ে বলল, আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বললেন, ‘উকাশা এ ব্যাপারে তোমার অগ্রগামী হয়ে গেছে।’ (সহিহ বুখারি-৫৭০৫)
ওই হাদিসের মূলত মানব রচিত নিয়ম-কানুনকে বাদ দিয়ে আল্লাহর নিয়ম-কানুন অনুসরণ ও আল্লাহর প্রতি সব বিষয়ে পূর্ণ আস্থা স্থাপনের দিকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। আর জীবনের সব ক্ষেত্রে আল্লাহতে যারা ভরসা করবে তারাই হবে বিনা হিসাবে জান্নাতি। আল্লাহ আমাদের সে সৌভাগ্যবান লোকদের অন্তর্ভুক্ত করুন! লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া ইসলামিয়া হামিদিয়া বটগ্রাম, সুয়াগাজী, সদর দক্ষিণ, কুমিল্লøা।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com