শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর রিট আরেক হত্যা মামলায় সাবেক বিচারপতি মানিককে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে মানহানির মামলায় খালাস পেলেন তারেক রহমান উৎপাদনে ফিরলো কর্ণফুলী পেপার মিল ২০৫০ সালের মধ্যে ৪ কোটি মানুষের মৃত্যু হবে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী সংক্রমণে দিল্লিতে মেয়ের সঙ্গে থাকছেন শেখ হাসিনা, দলবল নিয়ে ঘুরছেন পার্কে পিআইবির নতুন ডিজি ফারুক ওয়াসিফ, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আবদুল্লাহ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পোশাক শিল্প আইন আপনার হাতে তুলে নেয়ার কারো কোনো অধিকার নেই :স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা দেয়ার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বললেন মির্জা ফখরুল

মরণোত্তর জীবন : কবর

ফাতিমা আজিজা:
  • আপডেট সময় বুধবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

‘তবে কি সে এ সম্পর্কে অবহিত নয় যে, কবরে যা আছে তা কখন উত্থিত হবে? আর অন্তরে যা আছে তা প্রকাশ করা হবে? সেদিন তাদের কী ঘটবে, তাদের রব অবশ্যই তা সবিশেষ অবহিত।’ (সূরা আদিয়াত : ৯-১১) ঘুম থেকে উঠার পর স্বপ্নের জগতটা যেমন ঝাঁপসা মনে হয়, বাস্তবকে মনে হয় আসল সত্য। মৃত্যুর পরও মনে হবে পুরো জীবনটাই যেন ছিল একটা স্বপ্ন। ফেরেশতাদের সাথে অলৌকিক সব অভিজ্ঞার পর ফিরে আসতে হবে কবরে। কবরস্থান থেকে প্রস্থান করার শেষ মানুষটির পদধ্বনি কানে পৌঁছায়। এরপর সব নিশ্চুপ। একটি মুহূর্ত পার হলো নাকি সারাদিন পার হয়ে গেল বোঝা সম্ভব নয়। হঠাৎ করেই অনুভব হবে কবরটা ছোট হয়ে আসছে। মাটি চেপে ধরছে। চিৎকার করে উঠার আগেই মাটি এমনভাবে চেপে ধরবে মনে হবে দেহের প্রতিটি অঙ্গ মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে। নিজেকে কবরের আজাবপ্রাপ্ত মানুষের দলে ভাবতে শুরু হবে।
কিন্তু রাসূল সা: বলেছেন, ‘যদি মাটির এই চাপ থেকে কেউ বাঁচত সে হতো সাদ ইবনে মুআয রা:। যে সাদ ইবনে মুআয রা:-এর মৃত্যুতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছিল। যে সাদ ইবনে মুআয রা:-এর জানাজায় শরিক হতে ৭০ হাজার ফেরেশতা পৃথিবীতে নেমে এসেছিল। সেই সাদ ইবনে মুআয রা:কেও মাটি চেপে ধরেছিল। কারণ এটাই আল্লাহর হুকুম। আমরা মাটি থেকে এসেছি আমরা মাটিতেই মিশে যাব। মৃত ব্যক্তিকে উঠিয়ে বসানো হয় এবং মুনকার ও নাকির ফেরেশতা কঠোরভাবে প্রশ্ন করে। তারা প্রশ্ন করবে- আপনার রব কে? আপনার দ্বীন কি? আর রাসূল কে? সবগুলো উত্তর খুব সহজেই দিতে পারবে তারা যারা সারা জীবনে কখনো আল্লাহ ও রাসূলের অবাধ্য হয়নি এবং ইসলামকে জীবনের প্রতিটি কাজে মেনে চলেছে। সবসময় ‘তুমি সত্য বলেছ’ বলে ফেরেশতারা উত্তর দেবে এবং সাথে সাথে কবরটা প্রশস্ত হতে থাকবে।
এরপর সামনে একটি চিত্র তুলে ধরা হয়। সেখানে একটি ভয়ানক জায়গা দেখানো হচ্ছে, যেখানে চারিদিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে এবং হিংস্র সব জীব কারো জন্য অপেক্ষা করছে। জানানো হলো- এটাই আপনার গন্তব্য হয়ে যেত যদি আপনি আল্লাহর আদেশ অমান্য করতেন। এরপর অন্যদিকে আরেকটি চিত্র তুলে ধরা হবে যেখানে জীবনের সবচেয়ে সুন্দর জিনিস দেখবেন। এটাই হবে আপনার সর্বশেষ গন্তব্যস্থল। একপর্যায়ে আপনার সাথে দেখা করতে আসবে আপনার আত্মীয়স্বজনরা। যারা পৃথিবী ছেড়ে অনেক আগে পরকালের পথ পাড়ি দিয়েছিলেন, অত্যন্ত আন্তরিক হবে সেই মিলন। বারজাখের জীবনে এসে তাদের সাথে সাক্ষাৎ হবে এবং গল্পের এক পর্যায়ে কোনো এক বন্ধু সম্পর্কে জানতে চাইবে। কিন্তু সেই বন্ধু অনেক আগেই মারা গেছে এবং ঈমান নিয়ে মরতে পারেনি বলে বেহেশতবাসীদের সাথে কবরে সাক্ষাৎ হয়নি। কবরের আজাব থেকে নিজেকে মুক্ত করতে পারেনি।
যে ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করতে পারেনি। মৃত্যু থেকে শুরু করে জাহান্নাম পর্যন্ত তার পরিস্থিতি ক্রমাগত খারাপ হতে থাকে। তাকে সেই তিনটি প্রশ্ন করা হলে সে কোনো উত্তর দিতে পারে না, তখন মুনকার আর নাকির বলবে, তুমি মিথ্যা বলেছ। তার মাথায় শক্ত লোহা দিয়ে এত জোরে আঘাত করা হবে যে, তার চিৎকার শুনতে পারবে আশপাশের প্রতিটি সৃষ্টি, শুধু মানুষ আর জ্বীন ব্যতীত। তাকে জান্নাতের একটি দৃশ্য দেখিয়ে বলা হবে এটাই তার গন্তব্য হতে পারত যদি সে আল্লাহর আহ্বানে সাড়া দিত। জাহান্নামের দৃশ্য দেখিয়ে বলা হবে, সে নিজেই নিজের জন্য এই গন্তব্যটি বেছে নিয়েছে। জান্নাতে সে কী পেতে পারত আর জাহান্নামে তার জন্য কী অপেক্ষা করছে।
হাদিসের আলোকে মৃত্যুর পর থেকে বারজাখ বা কবরের জীবনের বর্ণনা এ রকম, ‘মুমিন বান্দা দুনিয়ার জীবন শেষ করে পরকালের দিকে যখন ফিরে চলে তখন আসমান থেকে খুবই আলোকোজ্জ্বল চেহারার কিছু ফেরেশতা তার কাছে যান। তাদের চেহারা যেন দীপ্ত সূর্য। তাদের সাথে (জান্নাতের রেশমী কাপড়ের) কাফন ও জান্নাতের সুগন্ধি থাকে। তারা তার দৃষ্টির দূর সীমায় বসবে। তারপর মালাকুল মাওত আসবেন, তার মাথার কাছে বসবেন ও বলবেন, হে পবিত্র আত্মা। আল্লাহর মাগফিরাত ও তার সস্তুষ্টির কাছে পৌঁছার জন্য দেহ থেকে বেরিয়ে আসো। রাসূলুল্লাহ সা: বলেন, এ কথা শুনে মুমিন বান্দার রূহ তার দেহ থেকে এভাবে বেরিয়ে আসে যেমন মশক থেকে পানির ফোঁটা বেয়ে পড়ে। তখন মালাকুল মাওত এ রূহকে নিয়ে নেন। তাকে নেয়ার পর অন্যান্য ফেরেশতাগণ এ রূহকে তার হাতে এক পলকের জন্যও থাকতে দেন না। তারা তাকে তাদের হাতে নিয়ে নেন ও তাদের হাতে থাকা কাফন ও খুশবুর মধ্যে রেখে দেন। তখন এ রূহ হতে উত্তম সুগন্ধি ছড়াতে থাকে যা তার পৃথিবীতে পাওয়া সর্বোত্তম সুগন্ধির চেয়েও উত্তম। তারপর ওই ফেরেশতা এ রূহকে নিয়ে আকাশের দিকে রওনা হন সাক্ষাৎ হওয়া ফেরেশতার কোনো একটি দলও এ ‘পবিত্র রূহ কার’ জিজ্ঞেস করতে ছাড়েন না। তারা বলেন, অমুকের পুত্র অমুক। তাকে তার উত্তম নাম ও যেসব নামে তাকে দুনিয়ায় ডাকা হতো, সে পরিচয় দিয়ে চলতে থাকেন। এভাবে তারা এ রূহকে নিয়ে প্রথম আসমানে পৌঁছেন ও আসমানের দরজা খুলতে বলেন, দরজা খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক আসমানের নিকটবর্তী ফেরেশতাগণ এদের সাথে দ্বিতীয় আসমান পর্যন্ত যান। এভাবে সাত আসমান পর্যন্ত, পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। আল্লাহ ফেরেশতাগণকে বলেন, এ বান্দার আমলনামা ইল্লিয়িনে লিখে রাখো আর রূহকে জমিনে পাঠিয়ে দাও সওয়াল জবাবের জন্য যেন তৈরি থাকে। কারণ আমি তাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। আর মাটিতেই তাদেরকে ফেরত পাঠাব। আর এ মাটি হতেই আমি তাদেরকে আবার উঠাব। এরপর আবার এ রূহকে নিজের দেহের মধ্যে পৌঁছিয়ে দেয়া হয়। তারপর তার কাছে দু’জন ফেরেশতা (মুনকির নাকির) এসে তাকে বসিয়ে নেন। তারপর তাকে প্রশ্ন করেন, তোমার রব কে? সে উত্তর দেয়, আমার রব আল্লাহ। আবার তারা দু’জন জিজ্ঞেস করেন, তোমার দ্বীন কি? তখন সে উত্তর দেয়, আমার দ্বীন ইসলাম। আবার তারা প্রশ্ন করেন, এ ব্যক্তি কে? যাকে তোমাদের কাছে পাঠানো হয়েছিল। সে ব্যক্তি উত্তর দেবে, ইনি হলেন রসূলুল্লাহ সা:। তারপর তারা দু’জন বলবেন, তুমি কিভাবে জানলে? ওই ব্যক্তি বলবে, আমি আল্লাহর কিতাব পড়েছি, তাই আমি তাঁর ওপর ঈমান এনেছি ও তাঁকে সত্য বলে বিশ্বাস করেছি। তখন আকাশ থেকে একজন আহ্বানকারী (আল্লাহ) আহ্বান করে বলবেন, আমার বান্দা সত্যবাদী। অতএব তার জন্য জান্নাতের বিছানা বিছাও, তাকে পরিধান করাও জান্নাতের পোশাক-পরিচ্ছদ, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হবে।
সে দরজা দিয়ে তার জন্য জান্নাতের হাওয়া ও খুশবু আসতে থাকবে। তারপর তার কবরকে দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত প্রশস্ত করে দেয়া হবে। তারপর একজন সুন্দর চেহারার লোক ভালো কাপড়-চোপড় পরে সুগন্ধি লাগিয়ে তার কাছে আসবে। তাকে বলবে, তোমার জন্য শুভ সংবাদ, যা তোমাকে খুশি করবে। এটা সেদিন, যেদিনের ওয়াদা তোমাকে দেয়া হয়েছিল। সে ব্যক্তি বলবে, তুমি কে? তোমার চেহারার মতো লোক কল্যাণ নিয়েই আসে। তখন সে ব্যক্তি বলবে, আমি তোমার নেক আমল। মুমিন ব্যক্তি বলবে, হে আল্লাহ! তুমি কিয়ামত কায়েম করে ফেলো। আমি যেন আমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদের কাছে যেতে পারি।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com