বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েও আজ পযর্ন্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা চানঁ মিয়া মোল্যার কপালে জোটেনি একখানা সরকারি ঘর। স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সরকারি ইট ভাটায় স্থান পেয়েছেন তিনি। সেখানেই তৈয়ারী করেন একটি ঝুপড়ি ঘর। সেটাও আজ পানিতে ভাসছে। কোন সাহায্য মেলেনি তার ভাগ্যে। জানাগেছে, কাশিয়ানী উপজেলার হাতিয়াড়া ইউনিয়নের হাতিয়াড়া গ্রামের জমির উদ্দিন মোল্যার ছেলে মোঃ চানঁ মিয়া মোল্যা ১৯৭১ সালে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। তিনি দেশকে শত্রুমুক্ত করতে ভারতের প্রশিক্ষণ শেষে যশোহর এবং নিজ এলাকা ভাটিয়াপাড়ায় সম্মুখ যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। যুদ্ধ শেষে কোন কর্ম না পেয়ে অবশেষে গ্রামে গ্রামে ভাংগাড়ি ফেরি করে জীবিকা নির্বাহ শুরু করেন। তিনি কিছু দিনের মধ্যে অসুস্থ্য হয়ে পড়েন। সে সময়ে পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া তিন শতক (ভিটা) জমি বিক্রি করে দেন। তিনি হয়ে যান ভূমিহীন। নিজের পরিবারের জীবিকা নির্বাহের জন্য আবার শুরু করেন পুরানো ভাংগাড়ি ব্যবসা। সহায় সম্বলহীন অসহায় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা চলে আসেন কাশিয়ানী উপজেলা সদরে। পনের ষোল বছর পূর্বে স্থানীয় লোকজনদের সহোযোগীতায় ফেরিওলা চানঁ মিয়া নামে পরিচিত এই মুক্তিযোদ্ধা সরকারি পরিত্যাক্ত চরপিংগলিয়া ইট ভাটায় স্থান পায়। সেখানেই কোন রকম একখানা টিনের ঘর তোলেন। চালে টিন থাকলেও অর্থের অভাবে পাটকাঠি দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়। কোন রকমে স্ত্রী তিন সন্তান নিয়ে বসবাস শুরু করেন সরকারি ইট ভাটার জায়গায়। তার দুই ছেলে মোঃ হেলাল মোল্যা ও আল আমিন দিন মুজুরের কাজ করে। মেয়ে চম্পাকে একজন পিকআপ চালকের সাথে বিয়ে দেন তিনি। ছেলেরা তাদের পরিবার নিয়ে কোন রকমে দিন পার করে। নিজেদের সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম খায় তারা। বাবা মাকে দেখার মত সুযোগ হয় না তাদের। মুক্তিযোদ্ধা ভাতার টাকা দিয়ে কোন রকমে স্ত্রী আলেয়া বেগমকে নিয়ে তাদের ছোট সংসার চালিয়ে নেয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা চাঁন মিয়া এ প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের স্বামী-স্ত্রীর প্রতিমাসে চার হাজার টাকার ওষুধ লাগে। আমি এক টুকরা সরকারি জমির জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরেছি। উপজেলা প্রশাসনের কাছে অনেক বার আবেদন নিবেদন করে কোন ফল পাইনি। অবশেষে চার বছর পূর্বে ভাতার অনুকুলে সোনালী ব্যাংক থেকে তিন লক্ষ টাকা লোন নিয়ে নিজ গ্রাম হাতিয়াড়ায় একটু জমি কিনেছি। আমার লোন এখনও পরিশোধ করতে পারিনি। তাই অভাবের কারণে কোন ঘরবাড়ি করতে পারিনি। একটি সরকারি ঘরের জন্য কতজনের কাছেই না গেলাম কোন ফল হয়নি। ইট ভাটায় সরকারি জায়গায় বসবাস করছি। জায়গাটা নিচুঁ তাই বর্ষার পানিতে ঘরবাড়ি ডুবে গেছে। কোন প্রকার সরকারি সাহায্য পযর্ন্ত পায়নি। অনেক সাধারন মানুষ সরকারি ভাবে ঘরবাড়ি পায়। আর আমি দেশের জন্য নিজের জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করে আমার এই অবস্থা!