রবিবার, ০৫ মে ২০২৪, ১১:০৬ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞানের উৎস হিসেবে কুরআন

উম্মেহানি বিনতে আবদুর রহমান :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২১

কুরআন মুসলমানদের প্রকৃতি অধ্যয়নের এবং সত্যে পৌঁছতে অনুসন্ধান ও গবেষণার জন্য উৎসাহ দেয়। সূরা আল-বাকারার ২৩৫ আয়াতে বলা হয়েছে, ‘তিনি তোমাকে তাই শিখিয়েছেন যা তুমি জানতে না।’ এতে এটিই স্পষ্ট হয় যে, কুরআন নতুন জ্ঞানার্জনের জন্য উৎসাহ প্রদান করে। সত্যিকার অর্থে বিজ্ঞান অধ্যয়ন তাওহিদ বা একক সত্তার কর্তৃত্ব থেকে উৎপন্ন হয়েছে। মধ্যযুগীয় মুসলিম সভ্যতার বিজ্ঞানীরা (যেমন ইবনে আল-হায়থাম) আধুনিক বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে অনেক অবদান রাখেন। অনেক মুসলিম স্কলারের মতে, কুরআনে বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবনের বিষয়ে অনেক ভবিষ্যদ্বাণীমূলক বিবৃতি রয়েছে যা পরে বৈজ্ঞানিক গবেষণা দ্বারা নিশ্চিত করা হয়েছিল।
সাধারণত এটি গৃহীত হয় যে, কুরআনের প্রায় ৭৫০টি আয়াত প্রাকৃতিক ঘটনাগুলোর সাথে সম্পর্কিত। কুরআনের অনেক আয়াতে মানবজাতির প্রকৃতি অধ্যয়নের জন্য জোর দিয়েছে, বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের জন্য এটি উৎসাহ-উদ্দীপক। সত্যের অনুসন্ধান কুরআনের মূল বার্তাগুলোর মধ্যে একটি। ঐতিহাসিক মুসলিম বিজ্ঞানী আল-বেরুনি এবং আল-বাট্টানি কুরআনের আয়াত থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করেছেন।
বর্তমান আধুনিক বিজ্ঞানের তত্ত্বের সাথে কুরআনের কোনো সাংঘর্ষিকতা নেই, বিজ্ঞানের আবিষ্কারে যত উৎকর্ষ সাধিত হবে কুরআন যে বিজ্ঞানের উৎস তা দ্রুত বাস্তব উপলব্ধিতে আসবে। পদার্থবিজ্ঞানী আবদুস সালাম বিশ্বাস করেন, ইসলাম ও আবিষ্কারের মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই যা বিজ্ঞান মানবজাতিকে প্রকৃতি এবং মহাবিশ্বের ব্যাপারে ধারণা দিয়েছে; আর কুরআন অধ্যয়ন ও এর যুক্তিসঙ্গত প্রতিফলন ইসলামী সভ্যতা উন্নয়নের উৎস হিসেবে অসাধারণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রফেসর সালাম বিশেষ করে ইবনে আল-হায়থাম ও আল-বেরুনিকে হাইলাইটস করেছেন যারা গবেষণামূলক প্রবর্তক হিসেবে পরীক্ষামূলক পদ্ধতিটি চালু করেছিলেন। শুধু তাই নয়, অ্যারিস্টটলের প্রভাব থেকে এটিকে মুক্ত করেছিলেন এবং আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম দিয়েছিলেন।
বলার অপেক্ষা রাখে না, কালের যাত্রাপথে মুসলিম ইতিহাস অনেক পুরোনো এবং আমরা জাতি হিসেবে গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যের অধিকারী, অতীতে সারা বিশ্বের উলামায়ে কেরামের মধ্যে বহু বিজ্ঞানী ছিলেন, অনেকে অসংখ্য ভাষায় পারদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন, জ্ঞানচর্চায় তারা বিশ্বের বুকে আজো স্মরণীয় এবং বরণীয় হয়ে আছেন। জ্ঞান-বিজ্ঞান, মানব কল্যাণে যুগে যুগে মুসলিম বিজ্ঞানীদের যে অসামান্য অনন্য অবদান রয়েছে তা অন্যরা একত্র হয়েও অতিক্রম করতে পারবে না, কারণ মুসলিম বিজ্ঞানীদের এসব জ্ঞান এবং অবদানের পেছনে যে মূল নিয়ামক শক্তিরূপে কাজ করেছে তা হলো জ্ঞানের আধার কুরআনুল কারিম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘শপথ বিজ্ঞানময় কুরআনের’ (সূরা ইয়াসিন-২)।
এ কারণে একসময় কুরআনের ধারক-বাহকরাই অর্ধ পৃথিবী শাসন করেছেন, যা আজও আমাদের সামনে আলোকিত পথ মেলে ধরে রেখেছে। আল্লাহ বলেন, অবিশ্বাসীরা কি ভেবে দেখে না যে, আকাশম-লী ও পৃথিবী ওতপ্রোতভাবে মিশে ছিল; অতঃপর আমি উভয়কে পৃথক করে দিলাম এবং জীবন্ত সব কিছু পানি থেকে সৃষ্টি করলাম; তবুও কি তারা বিশ্বাস করবে না’ (সূরা আম্বিয়া-৩০)?
পরিতাপের বিষয়, বর্তমান সময়ের মুসলিমদের একটি অংশ পরস্পরের সাথে হিংসার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। আজ আমরা কুরআনের নির্দেশ অমান্য করে বিশ্বব্যাপী নির্যাতিত হচ্ছি, জুলুমের প্রকোষ্ঠে আমাদের উম্মাহর বড় একটি অংশের জীবনের মূল্যবান সময় কেটে যাচ্ছে একেক করে। বর্তমানে দেশের ৯০ শতাংশ অভিভাবক তাদের সন্তানের আনুষ্ঠানিক রেজাল্ট কার্ডকেই জীবনের সাফল্য হিসেবে দেখছেন, তারা সন্তানদের মন-মস্তিষ্ক শুধু পাঠ্যবইয়ে সীমাবদ্ধ রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেন, অথচ এই অভিভাবকরা কোমলমতি শিশুদের হৃদয়কে পাঠ্যবইয়ের বাইরের দুনিয়া সম্পর্কে আগ্রহী করে তুলছেন না। বর্তমান তরুণ প্রজন্ম আগামী দিনের ভবিষ্যৎ, কিন্তু যদি এ প্রজন্ম তথ্যপ্রযুক্তির বিষয়ে অজ্ঞ থাকে, তারা কী করে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্বকে নেতৃত্ব দেবে? কিশোর বয়সে যদি মুহাম্মদ বিন কাসিমকে তার মা ছিটকে পড়ার ভয়ে ঘোড়ায় চড়তে বাধা দিতেন তবে কি তার পক্ষে ভারত জয় করা এবং জীবনের অল্প কয়েকটি দিনের অল্প সময়ে বিশাল গুরুত্বপূর্ণ কাজের আঞ্জাম দেয়া সম্ভব হতো? সেই মায়ের মনে যে শক্তি ছিল আর রাবের দ্বীনের প্রতি যে অফুরন্ত ভালোবাসা ছিল তার উৎসমূল অবশ্যই কুরআনুল কারিম। আল্লাহ বলেন, ‘প্রকৃত ঈমানদার তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের ওপর ঈমান এনেছে এবং এ ব্যাপারে পরে আর কোনো সন্দেহ পোষণ করেনি, তারপর প্রাণ ও অর্থ-সম্পদ দিয়ে জিহাদ করেছে, তারাই সত্যবাদী’ (সূরা আল হুজুরাত-১৫)।
দুনিয়ার জীবনে যারা সৎকর্ম করবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবে তারাই তো প্রকৃত সফলকাম। আর সফলকাম নারী-পুরুষের জন্য আরশে আজিমের মালিকের পক্ষ থেকে রয়েছে মহামূল্যবান পুরস্কার। আল্লাহ বলেন, ‘এ মুমিন পুরুষ ও নারীকে আল্লাহ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তাদেরকে তিনি এমন বাগান দান করবেন যার নির্দেশে ঝরনাধারা প্রবহমান হবে এবং তারা তার মধ্যে চিরকাল বাস করবে। এসব চিরসবুজ বাগানে তাদের জন্য থাকবে বাসগৃহ এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবে, এটিই সবচেয়ে বড় সাফল্য’ (সূরা আত তাওবা-৭২)।
উন্নত দেশগুলোতে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মেধাবীদের গুরুত্ব দেয়া হয়, তাদের চিন্তা এবং গবেষণার মূল্যায়ন করা হয় যা আমাদের দেশে অনেকটা আকাশকুসুম ভাবনা। সময় অতিবাহিত হচ্ছে, পরিবর্তন হচ্ছে পৃথিবীর অনেক কিছুই, অথচ আমাদের মতো দেশের নেতারা মূল বিষয়টিকে উপেক্ষা করে যাচ্ছেন। নতুন জেনারেশনকে উৎসাহ, সাহস এবং প্রযুক্তির সঠিক জ্ঞান দানই পারে এ যুগের জাবির ইবনে হাইয়ান (রসায়ন শাস্ত্রের পথিকৃৎ), ইবনে সিনা (দার্শনিক ও চিকিৎসাবিজ্ঞানী), মূসা আল খাওয়ারিজমি (গণিতবিদ), আল-রাজির (সর্ব প্রথম যিনি সালফিউরিক এসিড আবিষ্কার করেন) মতো বিশ্ববরেণ্য ইসলামিক ব্যক্তিত্বদের মতো সন্তান গড়ে তুলতে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা আমাদেরকে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে জ্ঞানচর্চায় অবদানের সৌভাগ্য এনায়েত করুন! আমীন




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com