রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম ::
খেলাধুলার মাধ্যমে মাদককে সমাজ থেকে বিতাড়িত করতে হবে-মাফরুজা সুলতানা মাইলস্টোন কলেজে নবম শ্রেণির বালিকাদের অংশগ্রহণে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত বিদেশি প্রভুদের নিয়ে বিতাড়িত স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে: তারেক রহমান সরাসরি ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুপারিশ  ‘বিবেচনায় রয়েছে’: বদিউল আলম ১৬ বছর বঞ্চিতদের এবার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বইমেলয় স্টল বরাদ্দের দাবি ইসির অগাধ ক্ষমতা থাকলেও প্রয়োগে সমস্যা ছিল: বদিউল আলম আমাদের শিক্ষা কর্মসংস্থান খোঁজার মানুষ তৈরি করছে, যা ত্রুটিপূর্ণ: প্রধান উপদেষ্টা সেন্টমার্টিন: ‘স্থানীয়দের জীবিকা বনাম পরিবেশ রক্ষা’ আ. লীগ-জাপা নিষিদ্ধের দাবিতে ঢাবিতে কফিন মিছিল ১৫ বছরের জঞ্জাল সাফ করতে সময় লাগবে: মির্জা ফখরুল

বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

ডিপিআইআইটির বরাতে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা গেছে, সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা রয়েছে এমন দেশ থেকে বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে, যার অধিকাংশই চীনের। এছাড়া কিছু বিনিয়োগ প্রস্তাব গিয়েছে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ থেকেও। এ দেশগুলোর প্রস্তাবিত বিনিয়োগের খাতগুলো হলো ভারী যন্ত্র উৎপাদন, অটোমোবাইল, অটো কম্পোনেন্টস, কম্পিউটার সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যার, বাণিজ্য, ই-কমার্স, হালকা প্রকৌশল ও ইলেকট্রিক্যাল। গত বছর এপ্রিলে ভারত সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী স্থলসীমানা থাকা দেশগুলো থেকে আসা বিনিয়োগে অনুমোদন নেয়া বাধ্যতামূলক। ওই ঘোষণার পর থেকে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বিভিন্ন খাতে ৪০টিরও বেশি প্রস্তাব জমা পড়েছে, যা যাচাই-বাছাইয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত খাতগুলোতে ভারতীয় কোম্পানির বিদ্যমান বিনিয়োগ রয়েছে। উল্লেখ্য, চলতি বছর এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত ১৭ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ (এফডিআই) পেয়েছে ভারত।
বিদেশের মাটিতে বাংলাদেশীদের বিনিয়োগের পথকে মসৃণ করতে চূড়ান্ত হওয়ার অপেক্ষায় আছে একটি নীতিমালা। যদিও বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ পুরনো। এরই মধ্যে যা বাস্তবায়ন হয়েছে আফ্রিকার একাধিক দেশসহ মালয়েশিয়া ও ভারতে। সম্প্রতি ভারতে আবারো বাংলাদেশীদের বিনিয়োগ আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। দেশটির শিল্প ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য প্রচারণাবিষয়ক বিভাগ ডিপার্টমেন্ট ফর প্রমোশন অব ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ইন্টারনাল ট্রেড (ডিপিআইআইটি) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তবে নীতিমালা প্রণয়ের আগেই অনুমোদন নিয়ে ভারতে বিনিয়োগ করেছে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। ভারতের সেভেন সিস্টার্স অঞ্চলে গ্রুপটির রফতানির একটি বড় বাজার রয়েছে। এ বাজার আরো সম্প্রসারণের সুযোগ রয়েছে। ভারতের কাস্টমস ও বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের আরোপকৃত বিভিন্ন নন-ট্যারিফ ব্যারিয়ারের কারণে বাংলাদেশ থেকে ভারতে পণ্য রফতানি কার্যক্রম বিভিন্নভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় রফতানীকৃত খাদ্যপণ্যের ল্যাবরেটরি টেস্ট ও পণ্য পরিবহনের জন্য আনলোড-রিলোডিংয়ের কাজেও অনেক সময় ব্যয় হয়। এজন্য প্রাণ ফুডস লিমিটেড তাদের স্বল্পায়ু পণ্য যেমন রুটি, কেক ইত্যাদি ভারতে রফতানি করতে পারছে না।
এ প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠানটি এখন ভারতে একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি স্থাপনের মাধ্যমে স্বল্পায়ু পণ্য উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য পণ্যগুলোর আংশিক প্রস্তুতকৃত কাঁচামাল ভারতে রফতানি করা হবে। এরপর সেখানে ওই কাঁচামাল প্রক্রিয়াজাত করে খাদ্যপণ্য তৈরি করা হবে। এসব পণ্য ভারতের বাজারেই ‘মেড ইন ইন্ডিয়া’ স্লোগানসহ বাজারজাত করা যাবে। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, প্রস্তাবিত সাবসিডিয়ারি প্রতিষ্ঠা করা গেলে এর মাধ্যমে অশুল্ক বাধার সমস্যা থেকে পরিত্রাণের পাশাপাশি ভারতে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এজন্য কোম্পানিটির রফতানি প্রত্যাবাসন কোটার (ইআরকিউ) হিসাব থেকে ২০ লাখ ৬২ হাজার ৬৬৫ ডলার মূলধন হিসেবে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভারতে পিনাকেল ফোরএস কোম্পানি লিমিটেড নামে একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি স্থাপনের অনুমতি চাওয়া হয়েছে। বাংলাদেশী মুদ্রায় এ বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭ কোটি ৪৯ লাখ ১৩ হাজার ৯৯২ টাকা।
ডিপিআইআইটি পরিসংখ্যান বলছে, ২০০০ থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৮০ হাজার ডলারের এফডিআই পেয়েছে ভারত। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগের পুঞ্জীভূত (এফডিআই স্টক) হিসাব বিবেচনায় বাংলাদেশের দশম শীর্ষ বিদেশী বিনিয়োগকারী দেশ ভারত। ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারতের এফডিআই স্টকের পরিমাণ ছিল বাংলাদেশে ৬৭ কোটি ডলারের কিছু বেশি।
ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারিত দেশটিতে বাংলাদেশীদের বিনিয়োগ প্রস্তাবের খবর অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয় বলে মত প্রকাশ করছেন বাংলাদেশের শিল্প ও বিনিয়োগসংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, এখন পর্যন্ত ভারতে বাংলাদেশীদের বিনিয়োগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। আর এ প্রতিষ্ঠানটির বিনিয়োগ সফলতা অনেক উদ্যোক্তাকেই ভারতে বিনিয়োগের দিকে ধাবিত করছে। সরকারি পর্যায় থেকে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। যার প্রতিফলন হিসেবেই বিনিয়োগ প্রস্তাবের খবর পাওয়া যাচ্ছে।
ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি আবদুল মাতলুব আহমাদ এ বিষয়ে বলেন, ভারতে প্রাণের সফলতা খাদ্য প্রক্রিয়াজাত খাতের অনেক উদ্যোক্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। তারা আগ্রহ প্রকাশ করছে ভারতে বিনিয়োগে। এছাড়া বস্ত্র খাতের উদ্যোক্তাদের আগ্রহ আরো আগে থেকেই ছিল। এখনো অনেক আগ্রহী আছে। ভারতের বাজার বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বড়। এ বিষয়টিই বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণের মূল। বিশেষ করে যারা খাদ্যপণ্য প্রক্রিয়াজাত করার সঙ্গে জড়িত তাদের আগ্রহ বেশি। ধারণা করছি, নতুন বিনিয়োগ প্রস্তাবও এ খাতেরই কোনো প্রতিষ্ঠানের। বাংলাদেশ-ভারত উভয় দেশের সরকারই একে অপরের দেশে বিনিয়োগের বিষয়টি ইতিবাচক মানসিকতা ধারণ করছে। ফলে ব্যবসায়ীরাও আগ্রহ প্রকাশ করছেন। এর আগে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত তৎকালীন ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা ঢাকায় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখানে দেয়া বক্তব্যে তিনি বলেন, ভারতে বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোতে বাংলাদেশী খাদ্যপণ্যের চাহিদা ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। ভারতের বাজারে বাংলাদেশী খাদ্য রফতানির সুযোগও বাড়ছে। বাংলাদেশী কিছু শিল্প-কারখানাও ভারতে গড়ে উঠেছে। দেশটিতে খাদ্যপণ্যের বড় বাজার থাকায় এ খাতে দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগের বড় সুযোগ রয়েছে বলেও জানিয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর পক্ষ থেকে ভারতে রিটেইল স্টোর স্থাপনের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। তবে তাদের শর্ত পূরণ না হওয়ার কারণে ওই প্রস্তাব আর আলোর মুখ দেখেনি।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম বলেন, ওই প্রস্তাব নিয়ে আর এগোনো যায়নি। কারণ আমরা ভারতের বাজারে পণ্য সরবরাহের একটি সুনির্দিষ্ট মাত্রা নির্ধারণ করেছিলাম। আর তাতে সম্মতি পাওয়া যায়নি বলে ওই প্রস্তাব নিয়ে আর অগ্রসর হইনি। দেশী উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত করে দিতে নতুন নীতিমালা করছে সরকার। এজন্য ‘বহির্বিশ্বে বাংলাদেশী বিনিয়োগ নীতিমালা ২০২১’ শিরোনামে একটি খসড়াও এরই মধ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে। খসড়াটি এখন চূড়ান্ত মতামত গ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। দেশের ব্যক্তি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ বেশ পুরনো। সরকারের অনুমোদনের ভিত্তিতে এরই মধ্যে বেশকিছু কোম্পানি বহির্বিশ্বে বিনিয়োগ করেছে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি দেশে বাংলাদেশী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ রয়েছে। তবে এসব অনুমোদনের প্রতিটিই দেয়া হয়েছে কেস টু কেস ভিত্তিতে। বর্তমানে গোটা বিষয়টিকে সাধারণ একটি কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসতে নীতিমালা প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
খসড়া নীতিমালায় বিদেশে বিনিয়োগের ন্যূনতম আর্থিক যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, টানা পাঁচ বছরের নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণী অনুযায়ী কোম্পানির নিট মূলধন হতে হবে অন্তত ৫০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ। আর্থিক যোগ্যতার এ মাপকাঠি পূরণ না হলে বিদেশে বিনিয়োগ করা যাবে না। নীতিমালায় আবেদনকারী কোম্পানির আর্থিক যোগ্যতা হিসেবে ৫০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ নিট মূলধনের বাধ্যবাধকতা রাখা হলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে ছাড় দেয়া হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ব্যাংক সচ্ছলতা সনদের ভিত্তিতে অনুমোদন দেয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে বিদেশে বিনিয়োগে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংশ্লিষ্ট খাতে কমপক্ষে তিন বছরের ব্যবসা বা উৎপাদনের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর বিবরণী অনুযায়ী কমপক্ষে দুই বছর লাভজনক হতে হবে বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে। তবে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তাদের ক্ষেত্রে যৌক্তিক ব্যাখ্যার পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি শিথিল করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান গন্তব্য দেশের বিধিবিধান মেনে সেখানকার পুঁজিবাজারেও তালিকাভুক্ত হতে পারবে বলে খসড়ায় উল্লেখ রয়েছে।
বিদেশে বিনিয়োগের ভিত্তিতে গড়ে তোলা প্রতিষ্ঠান প্রয়োজনে দেশে মূল প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিতে পারবে। এছাড়া দেশে বা বিনিয়োগ গন্তব্যে অবস্থিত ব্যাংক কিংবা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রয়োজনে ঋণ নেয়া যাবে। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ঋণ ও মূলধনের অনুপাত হতে হবে ৭০: ৩০। বিদেশে বিনিয়োগকৃত প্রকল্পে অর্থায়নের বিপরীতে দেশের করপোরেট বা ব্যক্তিগত অথবা অন্য কোনো স্থাবর সম্পত্তির গ্যারান্টি ব্যবহার করা যাবে।
নীতিমালায় বলা হয়েছে, অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বিদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী। তবে ভুল পদ্ধতি ও খাতে বিনিয়োগ করা হলে তা দেশে বৈদেশিক মুদ্রার ক্ষতি বা অপচয়ের কারণ হতে পারে। এমনকি সামগ্রিক অর্থনীতিতেও এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে। নীতিমালার চলতি হিসাব লেনদেন-সংক্রান্ত পদ্ধতিগত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ হবে ফরেন এক্সচেঞ্জ রেগুলেশন অ্যাক্ট ১৯৪৭ ও মূলধনি হিসাবে লেনদেন বিধিমালা ২০২১-এর মাধ্যমে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com