নওগাঁর রাণীনগর উপজেলা জুরে প্রতিটি গ্রামে অপরিকল্পিতভাবে নানা রকম স্থাপনা নির্মান করার ফলে সংকুচিত হয়ে পরেছে গ্রামের মধ্যে বয়ে চলা রাস্তাগুলো। ফলে জরুরি প্রয়োজনে এ্যম্বুলেন্স বা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী কিম্বা মালামাল পরিবহন নিয়ে নিত্য দূর্ভোগে পরেছেন গ্রামের সাধারণ লোকজন।এছাড়া রাস্তাকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন অধিকাংশ গ্রামেই সামাজিকভাবে দ্বন্দ্ব বাড়ছে, অন্য দিকে সরকারের যোগাযোগ উন্নয় প্রকল্প বাধাগ্রস্থ্য হচ্ছে। জানাগেছে, রাণীনগর উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে দুই শতাধিক গ্রাম রয়েছে। এসব গ্রামে বসতি গড়ে ওঠার শুরু থেকেই অপরিকল্পিতভাবে বিভিন্ন রকম স্থাপনা নির্মান চলমান রয়েছে। গ্রামের মধ্যে চলাচলের জন্য রাস্তার জায়গা রেখে বসতি বা স্থাপনা নির্মানের নিয়ম নীতি থাকলেও তা তোয়াক্কা না করে গ্রামের মধ্যে প্রবেশ কিম্বা এক বাড়ী থেকে আরেক বাড়ীতে চলাচলে কোন মতে পায়ে হেটে চলার রাস্তা রেখে যে যার মতো বসতবাড়ী বা স্থাপনা নির্মান করছেন।
‘ ভ্যানগাড়ী বা জরুরী প্রয়োজনে এ্যাম্বুলেন্স অথবা কোন অগ্নিকান্ডের ঘঠনা ঘটলে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী চলাচলের রাস্তা রাখা হচ্ছেনা। ফলে অগ্নিকান্ড বা যে কোন বড় ধরনের দূর্ঘটনা অথবা প্রাকৃতিক দূর্যোগ হলে উদ্ধার কর্মীরা ফায়ার সার্ভিসের গাড়ী নিয়ে কিম্বা এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে পৌছাতে পারবেনা। এছাড়া গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা প্রধান প্রধান সড়ক,শাখা সড়ক থেকে কাঁধে করে উৎপাদিত কৃষিপন্য ও কৃষি পন্য উৎপাদনে মালামাল এবং স্থাপনা নির্মানে ব্যবহৃত ইট, বালু, সিমেন্ট, রডসহ বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করতে হচ্ছে গ্রামে বসবাসকারীদের। এতে করে একদিকে যেমন অতিরিক্ত শ্রম, অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে,অন্য দিকে নানাভাবে ক্ষতির সম্মখিন হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।এছাড়া অধিকাংশ গ্রামে চলাচলের রাস্তাকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন সামাজিক বা পারিবারিকভাবে মারা-মারিতে আইন শৃংখলার অবনতি ঘটছে,অন্য দিকে মামলা মর্কদমায় জড়িয়ে ক্ষতিগ্রস্থ্য হচ্ছে লোকজন। ফলে দিন দিন বেড়েই চলেছে রাস্তা কেন্দ্রিক দ্বন্দ্ব। এছাড়া গ্রামকে শহরে রুপান্তরিত করতে সরকারের যোগাযোগ উন্নয় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে ধাপে ধাপে বাধাগ্রস্থ্য হচ্ছেন সংশ্লিষ্ঠরা। কালীগ্রাম বড়িয়াপাড়া গ্রামের দুলাল হোসেন মৃধা বলেন, আমাদের গ্রাম প্রায় দেড় কিলোমিটার এড়িয়া। কিন্তু এতো বড় গ্রামের মধ্যে বয়ে চলা রাস্তা দিয়ে কোন মতে ভ্যানগাড়ী চলাচল করতে পারে। গ্রামের মধ্যে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটলে পুরো গ্রাম পুরে ভস্মিভূত হলেও ফায়ার সার্ভিস আর এ্যম্বুলেন্স গাড়ী পৌছতে পারবেনা। সিম্বা গ্রামের সাইদুজ্জামান সাগর বলেন,আমাদের গ্রামে প্রায় সাড়ে তিন হাজার লোকের বসবাস। কিন্তু গ্রামের মধ্যে চলাচলের রাস্তা সংকীর্ণ হওয়ায় প্রায় এক কিলোমিটার দুরে গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা প্রধান সড়ক থেকে কখনো কাঁধে কখনো ভ্যানগাড়ী দিয়ে বিভিন্ন মালামাল পরিবহন করতে হয়। তিনি আরো বলেন, শুধু অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মানে উপজেলার প্রায় অধিকাংশ গ্রামেই রাস্তা নিয়ে সবচাইতে বেশি দ্বন্দ্ব চলছে। সরকারের নিয়ম নীতি মেনে স্থাপনা নির্মান করলে বা স্থাপনা নির্মানে সংশ্লিষ্ঠরা নজরদারী করলে এমন সমস্যা হতো না। ফলে গ্রাম এলাকার দ্বন্দ্বও কমে যেত। এতে সবাই শান্তিতে বসবাস করতে পারতো। রাণীনগর উপজেলা ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন লিডার খন্দকার দেলোয়ার হোসেন নতুন যোগদান করেছেন জানিয়ে বলেন, এই উপজেলার গ্রামের রাস্তাগুলো খুবই সংর্কীণ। গত কয়েক দিনে ২টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা পেয়েছেন এবং রাস্তা সংলগ্ন হওয়ায় কাজ করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে এসব অগ্নিকান্ডের ঘটনা গ্রামের মধ্যে হলে কাজ করা মস্কিল হয়ে যেত। এক্ষেত্রে অধিকাংশ গ্রামই ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে বলে জানান তিনি। রাণীনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদি হাসান বলেন, গ্রামীন রাস্তা-ঘাট নির্মানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাধাগ্রস্থ্য হতে হচ্ছে। অনেক জায়গায় রাস্তার জায়গা সংকুলান হওয়ায় কাজই করা যাচ্ছেনা। সরকার যেভাবে যোগাযোগ খাতে অর্থ বরাদ্ধ দিয়ে গ্রামীন যোগাযোগ ব্যবস্থাকে উন্নত করার চেষ্টা করছেন কিন্তু রাস্তার জায়গা সংকুচিত হওয়ায় তা অনেকাংশেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছেনা। রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার মাহাতো দূর্ভোগের কথা স্বীকার করে বলেন, উপজেলার একডালা ইউনিয়নের বড়িয়াপাড়া মানিপুকুরে গুচ্ছ গ্রামে কাজ পরিদর্শনে গেলে মেইন রাস্তায় গাড়ী রেখে গ্রামের মধ্য দিয়ে প্রায় দেড় কিলোমিটার রাস্তা পায়ে হেটে যেতে হয়। এতো বড় একটি গ্রাম অথচ অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে ওঠায় রাস্তা সংকুচিত হয়ে পরেছে। ফলে গাড়ী চলাচল করতে পারছে না। আগে থেকেই নিয়ম নীতি মেনে স্থাপনা নির্মান করলে এমন জটিলতার সৃষ্টি হতোনা। তিনি বলেন,প্রতিটি গ্রামে কিভাবে রাস্তা প্রসস্ত করে গ্রামের লোকজন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারে এবং এ্যাম্বুলেন্স বা ফায়ারসার্ভিসের গাড়ী চলাচল করতে পারে সে ব্যপারে জনপ্রতিনিধি ও এলাকার গন্যমান্য লোকজনদের সাথে কথা বলে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো।