আওয়ামী লীগের অভিমত
আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার কমিশনের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে। তাই দাবি উঠেছে, নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়োগে আইন করার। আইন করে নতুন নির্বাচন কমিশনের দাবিতে বিএনপি আন্দোলনে যাওয়ার কথাও বলেছে। অন্যদিকে শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ৫২ বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতির মাধ্যমে জানিয়েছেন, নতুন নির্বাচন কমিশন আইন করে গঠন করতে হবে। এক্ষেত্রে সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যাকে যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন ক্ষমতাসীন নেতারা। বলছেন সার্চ কমিটিও একটি আইনি প্রক্রিয়া।
সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদটিতে বিভিন্ন শব্দ ও টার্মের ব্যাখ্যা করেছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে ‘আইন’ অর্থ কোনও আইন, অধ্যাদেশ, আদেশ, বিধি, প্রবিধান, উপ-আইন, বিজ্ঞপ্তি ও অন্যান্য আইনগত দলিল এবং বাংলাদেশে আইনি ক্ষমতাসম্পন্ন যে কোনও প্রথা বা রীতি।
এখানে ‘বিজ্ঞপ্তি’-কে আইন বলা হয়েছে। সার্চ কমিটিও বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ কারণে এই বিজ্ঞপ্তিই আইন, এমনটাই বলছেন ক্ষমতাসীন নেতারা। আওয়ামী লীগ নেতারা আরও বলেন, সার্চ কমিটি গঠন করে ইতোমধ্যে দুই দফায় নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সার্চ কমিটির মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করায় কোনও মহল থেকেই ‘আজিজ মার্কা’ নির্বাচন কমিশন হয়েছে এমন দাবি তুলতে পারেননি। তাই দুই দফায় যেভাবে সার্চ কমিটি করা হয়েছে এবারও সেভাবেই নতুন কমিশন গঠন করা হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভাপতিম-লীর সদস্য ফারুক খান শনিবার দুপুরে তার সেনানিবাসের বাসায় বলেন, ‘সার্চ কমিটিও আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গঠিত হয়ে আসছে। এই পদ্ধতিটা আইনে পরিণত হতে পারে।’ সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ব্যরিস্টার আমির-উল ইসলাম শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ কমিটিও গ্রহণযোগ্য হতে পারে। কিন্তু সেই সার্চ কমিটি জনগণের আস্থা-বিশ্বাসের হতে হবে। সরকারের পছন্দের সদস্য দিয়ে কমিটি করে সেই কমিটির সুপারিশে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করলে জনমতের প্রতিফলন ঘটবে না।’
তিনি বলেন, সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে যেভাবে বলা হয়েছে এবং সেটার ওপর ভর করে আওয়ামী লীগ যে ব্যাখ্যা দিয়েছে সেটা যুক্তিযুক্ত নয়।
ব্যরিস্টার আমির বলেন, “নির্বাচন কমিশন গঠনে আইন করার সঙ্গে একমত আমি। এখানে সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদ প্রাসঙ্গিক নয়। নির্বাচন কমিশন গঠন প্রক্রিয়া নিয়ে সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদে যা বলা হয়েছে সেটাই প্রাসঙ্গিক। এতে বলা হয়েছে- ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে লইয়া বাংলাদেশের একটি নির্বাচন কমিশন থাকিবে এবং উক্ত বিষয়ে প্রণীত কোনও আইনের বিধানাবলী সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দান করিবেন।’”
এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগে অতীতের যেকোনও সময়ের চেয়ে স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে সরকার। আইন মেনে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির সুপারিশে কমিশন নিয়োগ দেওয়া হয়। এটি সংবিধান সম্মত।’ আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শনিবার রাতে বলেন, ‘সার্চ কমিটির মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রপতি সকলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠন করেন। সেটা আইন না হলেও আইনের কাছাকাছি। দাবি যতই উঠুক, এখন পর্যন্ত সরকারের সিদ্ধান্ত হলো নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন সার্চ কমিটির মাধ্যমেই হবে।’-বাংলাট্রিবিউন