সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫৫ অপরাহ্ন

বেপরোয়া নারীবাদ

জাহিদ রহমান, বার এট ল’
  • আপডেট সময় রবিবার, ৩ অক্টোবর, ২০২১

নারীবাদ এক ধরনের মতাদর্শ যা সমাজে নারীর সমতা অর্জন, বিশেষ করে পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের যৌক্তিকতার ওপর গুরুত্বারোপ করে। নারীর সমতা অর্জন তথা সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের বিষয়টিতে আলোকপাত করা হয়। এর মূল লক্ষ্য সমাজে বিদ্যমান লৈঙ্গিক বৈষম্যের অবসান। ভোটাধিকার, রাজনীতি, ব্যবসায়, শিক্ষা, সমান কাজে সমান বেতন, সম্পত্তির অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বিয়েতে সমানাধিকার, মাতৃত্ব-অবসর ইত্যাদির স্বীকৃতি প্রদান তথা নারীর সার্বিক ক্ষমতায়নকে বোঝায়।

পশ্চিমা দেশগুলোতে যখন পুঁজিবাদ বিকশিত হওয়া শুরু করে, নারীবাদের উত্থান ঘটে ঠিক সেই সময়ে। পুঁজিবাদের জোয়ারে বাড়ছিল ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ, পুঁজিবাদ ভেঙে দিচ্ছিল পারিবারিক বন্ধন, মজুরি নির্ধারণের নামে শ্রমিককে ব্যাখ্যা করছিল একক সত্তা হিসেবে, নারীকে পণ্য বানিয়ে তুলছিল। সেই প্রেক্ষাপটে চালু হওয়া পশ্চিমা নারীবাদী স্লোগান দিয়ে এখন কি পশ্চিমারা আদৌ ভালো আছে? ধর্ষণের উচ্চহারের দেশগুলোর মধ্যে উপরের দিকে রয়েছে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, সুইডেনের মতো দেশগুলো। সেসব দেশে পরিবার প্রথা ভেঙে যাচ্ছে। বেড়েছে দূরত্ব, হতাশা, আত্মহত্যা।
নারীবাদ মানেই কি পুরুষবিদ্বেষী মনোভাব চর্চা? নোঙরা শব্দের ব্যবহারে অশ্লীল আক্রমণ, উগ্র ব্যবহার, আক্রমণাত্মক আচরণ, বেপরোয়া জীবনধারা? সন্তান জন্ম দিয়ে বাবার নাম প্রকাশ না করাই কি এখন নারী জাগরণ? নারীবাদ মানেই কি বিয়েবহির্ভূত অবাধ যৌন স্বাধীনতা? বর্তমান প্রজন্মের কিছু বিভ্রান্ত মেয়ে ইদানীং সোস্যাল মিডিয়ায় পুরুষবিদ্বেষী মনোভাব প্রমোট করে যাচ্ছে। নারীবাদ কাজে লাগিয়ে তাদের মূল লক্ষ্য বিতর্কিত মতাদর্শ তৈরি করে নিজেকে লাইমলাইটে নিয়ে আসা। এ ছাড়া উন্নত দেশে নিজেকে নারীবাদী হিসেবে উপস্থাপন করে অ্যাসাইলাম আবেদন করার সুযোগ খোঁজা। অনলাইনে পুরুষবিদ্বেষ এবং সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়িয়ে ইতোমধ্যে তাদের অনেকেই উন্নত পশ্চিমা দেশগুলোতে অ্যাসাইলাম পেয়ে গেছেন।
আজ যারা সন্তানের বাবার পরিচয় দেয়াকে নারীর অধিকারের বিরুদ্ধে দাঁড় করাচ্ছেন। তারা কি তাদের পাসপোর্টে বাবার নাম ব্যবহার করেন না? তবে কেন এ ধরনের কপটতা নারীবাদের নামে? যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল সমান কাজে সমান বেতন, সম্পত্তির অধিকার, শিক্ষার অধিকার, বিয়েতে সমানাধিকার, মাতৃত্ব-অবসরসহ অন্যান্য মৌলিক অধিকার নিয়ে। আজ কি সেই অধিকারের দাবিগুলো শতভাগ বাস্তবায়ন হয়ে গেছে? অথচ এখন সেগুলো বেমালুম চেপে গিয়ে নগ্ন হয়ে চলার অধিকার, বিয়ে বহির্ভূত সন্তান জন্মদানের অধিকার, প্রকাশ্যে নেশাদ্রব্য গ্রহণের অধিকার নিয়ে প্রপাগান্ডা চালাচ্ছে নব্য পুরুষবিদ্বেষীরা। যা আজ নারীবাদ আন্দোলনের মৌলিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। দেশের বাইরে নিরাপদে বসে সোস্যাল মিডিয়ায় নিজেদের নারীবাদী একটিভিস্ট পরিচয় দিয়ে এ দেশে ছড়াচ্ছে পুরুষবিদ্বেষী মনোভাব। আর এই মনোভাবের বহিঃপ্রকাশে গুরুত্ব ও গাম্ভীর্য হারাচ্ছে নারীবাদ আন্দোলন। যেখানে দাবি তোলা উচিত সমতা আর অধিকার রক্ষার, সেখানে তাদের এসব অসভ্য ও অযৌক্তিক কার্যকলাপ দেখে সত্যিকারের নারীবাদী ধারাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার সুযোগ পাচ্ছে একদল নারীবাদবিরোধী।
এ সব পুরুষবিদ্বেষী নারীবাদীরা এতটাই হিংস্র ও আক্রমণাত্মক যে, সা¤প্রতিক সময়ে একজন নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মীকে পতিতা হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রচার করেছে কিছু উগ্র বিভ্রান্ত পুরুষবিদ্বেষী নারীবাদী। কারণ সেই নারী বলেছিলেনÑ ‘পুরুষবিদ্বেষ ছড়িয়ে নারী অধিকার আন্দোলন সফল করা যাবে না’। এ ধরনের ভাষাগত ব্যবহার করে তারা একজন নারীকে আক্রমণ করে, তবে অনুমান করা যায়, তাদের মতের সাথে দ্বিমত পোষণ করলে এরা কতটা হিংস্র হয়ে ওঠে। জানার বয়সে, শেখার বয়সে আজ এই মেয়েগুলো ভাঙার নেশায় উন্মত্ত হয়ে সবকিছু ভাঙতে চেষ্টা করছে, সে কি আদৌ জানে ভেঙে ফেলার পর সেই ভাঙা স্থানে নতুন কি স্থাপন করবে? উগ্রপন্থীদের মতো এদেরকে ব্রেইন ওয়াশ করা হয়েছে।
প্রথা ভাঙার নামে বেপোরোয়া, বিদ্বেষী লেখা ও আচরণে সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে চায়। নিজ গৃহে জীবনসঙ্গীর প্রতি জঘন্য আচরণ ও বদমেজাজ দেখিয়ে নিজেকে নারীবাদী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। চিন্তা, বলায় ও কথায় নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার নামে পুরুষবিদ্বেষী উগ্র মনোভাব নিয়ে অশ্লীল শব্দের ব্যবহার করে সমালোচনা করে। এদের ভাবনায় আগের সব কিছু ভেঙে ফেলার নাম আধুনিকতা, সবকিছু অস্বীকার করাই প্রগতিশীলতা। এরা জানে না যে, শুধু ধ্বংস মানেই প্রগতিশীলতা নয়, বরং ধ্বংস করার পাশাপাশি নতুন উন্নত কিছু স্থাপন করার নাম প্রগতিশীলতা।
হ্যাঁ এটাও ঠিক যে, বেশির ভাগ নারী খুব শৈশবে পুরুষের দ্বারা শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের শিকার হন বা প্রত্যক্ষ করেন যেটা তার জীবনে প্রভাব ফেলে। মেয়ের বাবা-মায়ের সম্পর্ক ও মেয়ের প্রেমিক কিংবা কোনো বান্ধবীর প্রেমিকের প্রতারণার ঘটনাও মেয়েকে পুরুষবিদ্বেষী করে তুলতে পারে। যে মেয়ের বাবা ভালো সে মেয়ে পুরুষবিদ্বেষী হতে দেখা যায় না।
নারীবাদ বলতে, নারী-পুরুষ পাশাপাশি সমান অধিকার, আত্মমর্যাদা, দায়িত্ববোধ নিয়ে জীবনযাপন করা। সংবিধান, আইন, বিধি-বিধানবলে প্রতিটি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে তার প্রাপ্য অধিকার ভোগ করবে। একটি গণতান্ত্রিক সমাজে তার চিন্তাভাবনা, যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবে। সংসার সমাজ, রাষ্ট্রীয় জীবনে প্রতিটি নারী-পুরুষ অবশ্যই তার সমধিকার লাভ করবে। কিন্তু কোনো উগ্র আচরণ, অশ্লীল আক্রমণ ও নোঙরা জীবনধারা চর্চা গ্রহণযোগ্য নয়।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com