করোনা নিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এক মন্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘তারা (সরকার) যে করোনার চেয়েও শক্তিশালী, তাহলে এখন সেই শক্তি কোথায় গেল? ’
বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ মনে করেছিল, জনগণকে ডান্ডা মেরে ঠান্ডা রেখে কিংবা জনগণের বিরুদ্ধে র্যাব-পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলা করবে। তবে এতদিন পরে এসে অবশেষে ওবায়দুল কাদের সাহেবরা মনে হয় পরিস্থিতির ভয়াবহতা একটু আঁচ করতে পেরেছেন।
করোনা শুরুর দিকে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, আমরা করোনার থেকেও শক্তিশালী। আমরা করোনাকে জয় করবো। তার এমন বক্তব্যের প্রতি ইঙ্গিত করে রিজভী বলেন, গতকাল ওবায়দুল কাদের স্বীকার করেছেন, ‘দেশের করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। যেভাবে ক্রমশ বেড়ে চলছে আক্রান্তের সংখ্যা তাতে সামনের দিকে পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছি।’ তারা যে করোনার চেয়েও শক্তিশালী, তাহলে এখন সেই শক্তি কোথায় গেল? এখন কেনো তারা ঘরের ভেতর বসে শুধু অসত্য ও বিভ্রান্তির ধারাবিবরণী দিচ্ছেন?’
দেশে লকডাউন শিথিলের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ বিস্তার লাভের পর থেকেই স্বাস্থ্য সেবা ভেঙে পড়েছে। এর উপর লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। সরকার ব্যবসায়ীদের সাথে আপস করতেই শিথিল এই লকডাউন। এতে করোনা বিস্তারের পথ আরও প্রশস্ত করা হলো।
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, দেশজুড়ে করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা এখনো নড়বড়ে। একদিকে যেমন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীদের হাসপাতালগুলো ঠিকভাবে সেবা দিতে পারছে না, অন্যদিকে অন্যান্য জটিলতার রোগীরাও চিকিৎসা পেতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
রিজভী বলেন, করোনাভাইরাসে গোটা বাংলাদেশ এখন বিপর্যস্ত। লাফিয়ে বাড়ছে সংক্রমণ আর মৃত্যুর হার। মাত্র দুই মাসেই ‘এশিয়ার হটস্পটে’ পৌঁছে গেছে বাংলাদেশ। জনতত্ত্ব-ঘনবসতি ও আক্রান্তের হার হিসাবে সংক্রমণের এ সূচক ভয়ঙ্করভাবেই স্পষ্ট। আক্রান্তের হিসাবে দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত-পাকিস্তানের পেছনে থাকলেও সংক্রমণ হারে এশিয়ার অর্ধশতাধিক দেশের শীর্ষে এখন বাংলাদেশি।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা এক অচিন্তনীয় দুর্দিন পার করছি। মানুষের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে এক অজানা ভয় আর আতঙ্কে। একদিকে মরণঘাতী করোনাভাইরাসের ভয় অপরদিকে বেশুমার পরিবারে খাদ্যাভাব। চলছে নীরব দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতি। দেশে প্রতিদিনই বেড়ে চলছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। আরও অধিক সংখ্যক মানুষকে টেস্টের আওতায় আনা গেলে আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে এমনটাই মনে করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। টেস্ট করতে না পারায় প্রতিদিনই থাকছে করোনা উপসর্গ নিয়ে বহু মানুষের মৃত্যুর খবর।
রিজভী বলেন, মরণঘাতী করোনা ভীতির মধ্যেই আরেক আতঙ্ক সারাদেশে ‘ত্রাণ চুরি’। ক্ষমতাসীন দলের লোকেরা ত্রাণ চুরিতে মেতে উঠেছে। আমরা বলেছিলাম, এই ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়ার জন্য। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জনগণ প্রতিবাদ করলে আইসিটি আইনে মামলা করা হচ্ছে। ভার্চুয়াল মিডিয়ায় প্রতিবাদী মানুষকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। রাতের অন্ধকারে চোখ তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এই ভয়াবহ দুর্দিনেও ক্ষমতাসীনরা দেশকে মগের মুল্লুকে পরিণত করেছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কিছু বন্ধ কিছু খোলা, এই বন্ধ এই খোলা, সিদ্ধান্তহীনতা ও ঘন ঘন সিদ্ধান্ত বদলের অস্থিরতা, আয়হীন মানুষের হাতে খাদ্য ও বাঁচার উপকরণগুলো পৌঁছাতে ব্যর্থতা, ছুটি না লকডাউন তা নিয়ে ধোঁয়াশা এবং এসবের কারণে মানুষের বাইরে আসা। আর এই বাইরে আসার জন্য সরকারের সব ব্যর্থতার দায় জনগণের ওপর চাপাবার চালাকি করা হচ্ছে।
এমআর/প্রিন্স