সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৭ অপরাহ্ন

রাসূল সা:-এর অনুসৃত পথেই মুক্তি

শায়খ আবদুল্লাহ বুয়াইজান:
  • আপডেট সময় রবিবার, ২৪ অক্টোবর, ২০২১

মসজিদে নববীর জুমার খুতবা

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, সব প্রশংসা বিশ্ব প্রতিপালক আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের, যিনি আমাদের জন্য শরিয়তকে পরিপূর্ণ করেছেন ও তার নিয়ামতগুলোকে আমাদের ওপর সম্পূর্ণ করেছেন। আমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে, ধর্ম হিসেবে বাছাই করেছেন।
আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনো মাবুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো অংশীদার নেই। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাথে কাউকে অংশীদার বানায় সে তো সুস্পষ্টই পথভ্রষ্টতায় লিপ্ত হয়। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হজরত মুহাম্মদ সা: তাঁর বান্দা ও রাসূল। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর প্রেরিত রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা:, তাঁর পরিবারবর্গ এবং সব সাহাবায়ে কেরামের ওপর শান্তি, রহমত ও বরকত নাজিল করুন। অতঃপর, সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কিতাব, আর সর্বোত্তম পথ হচ্ছে রাসূল সা:-এর পথ। সর্ব নিকৃষ্ট কাজ হলো দ্বীনের মাঝে বিদ’আত সৃষ্টি করা আর প্রত্যেক বিদ’আতই ভ্রষ্টতা, যার পরিণতি ভয়াবহ জাহান্নাম। হে আল্লাহর বান্দাগণ! আমি আমার নিজেকে এবং আপনাদেরকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের যথাযথ তাকওয়া অবলম্বনের অসিয়ত করছি। কেননা এটি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ পূর্ববর্তী এবং পরবর্তীদের ওপর। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, তোমাদের পূর্ববর্তী যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকেও নির্দেশ করছি যে, আমার ওপর পরিপূর্ণ তাকওয়া অবলম্বন করো। (সূরা নিসা, আয়াত-১৩১) হে আল্লাহর বান্দাগণ! আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আদম সন্তানদেরকে বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে সম্মানিত করেছেন। তাদের ওপর নানাবিধ দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। তাদের জন্য শরিয়ত প্রণয়ন করেছেন এবং বিধি-বিধান আবশ্যক করেছেন।
তিনি তোমাদের জন্য হালাল ও পবিত্র বস্তুকে বৈধ করেছেন, হারাম ও অপবিত্র বস্তুকে নিষিদ্ধ করেছেন। যারা তার হুকুমের আনুগত্য করবে তাদের জন্য নেকি ও স্থায়ী আবাস জান্নাত প্রস্তুত রেখেছেন আর যারা তাঁর অবাধ্যতা করবে তাদের জন্য রয়েছে শাস্তি ও আজাবের আবাস জাহান্নাম। তিনি নবী ও রাসূল প্রেরণ করে মানুষের ওপর অকাট্য প্রমাণ দাঁড় করিয়েছেন এবং নবী-রাসূলকে প্রেরণ করেছেন সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। যাতে নবী-রাসূলগণ আসার পরে আল্লাহর বিরুদ্ধে মানুষের কোনো অভিযোগ না থাকে। তিনি নবী-রাসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শন হেদায়েত ও অকাট্য প্রমাণসহ প্রেরণ করেছেন। তাদের সাথে কিতাব ও ন্যায়ের মানদ- অবতীর্ণ করেছেন, যেন মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করতে পারে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, অবশ্যই আমি রাসূলগণকে পাঠিয়েছি সুস্পষ্ট প্রমাণসহ এবং তাদের সাথে দিয়েছি কিতাব ও ন্যায়ের মানদ- যেন তারা সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে। (সূরা হাদিদ, আয়াত-২৫)
ইসলামী শরিয়ত ও সৃষ্টির সেরা নবী মুহাম্মদ সা:-এর মাধ্যমে অন্যান্য শরিয়ত ও আম্বিয়ায়ে কেরামের ধারাকে সমাপ্ত করেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন হজরত মুহাম্মদ সা:কে বিশ্ববাসীর জন্য আদর্শ, অনুকরণীয় ও রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছেন। মুহাম্মদ সা:কে শেষনবী ও সব নবী রাসূলের ইমাম হিসেবে প্রেরণ করেছেন। রাসূল সা: হচ্ছেন ন্যায়বিচারক, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশক্রমে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দিকে আহ্বানকারী ও উজ্জ্বল প্রদীপস্বরূপ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, অবশ্যই তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য থেকে একজন রাসূল প্রেরণ করেছি। যিনি তোমাদের দুঃখ-কষ্টে তিনিও ব্যথিত হন। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি করুণাশীল ও অতি দয়ালু। সূরা তাওবা, আয়াত-১২৮
হে মানব সকল! আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাঁর আনুগত্যকে রাসূলের আনুগত্যের সাথে সম্পৃক্ত করেছেন এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সাথে মুহাব্বতকে রাসূল সা:-এর আদর্শ ও সুন্নতের সাথে জড়িয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করো এবং তোমাদের আমলকে নষ্ট করো না। (সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত-৩৩)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, যে রাসূলের আনুগত্য করল সে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনেরই আনুগত্য করল। আর কেউ যদি মুখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে আপনাকে তো তার রক্ষক হিসেবে প্রেরণ করিনি। (সূরা নিসা, আয়াত-৮০) আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, হে নবী আপনি বলুন! তোমরা যদি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে ভালোবাসো তাহলে আমাকে অনুসরণ করো। তবেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের অপরাধকে ক্ষমা করবেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও পরম স্নেহশীল। (সূরা আলে ইমরান, আয়াত-৩১) কাজেই আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে ভালোবাসার দৃষ্টান্ত হচ্ছে রাসূল সা:-এর মতাদর্শ ও সুন্নতকে অনুসরণ করা এবং তা আঁকড়ে ধরা।
হে আল্লাহর বান্দাগণ! রাসূলে কারীম সা: হচ্ছেন একমাত্র আদর্শ ও অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব। রাসূল সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, অবশ্যই রাসূল সা:-এর মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ। (সূরা আহ্যাব, আয়াত-২১) তিনি আরো বলেন, রাসূল সা: তোমাদের যে আদেশ দেন তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকো। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের তাকওয়া অবলম্বন করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ শাস্তি প্রদানে খুবই কঠোর। (সূরা হাশর, আয়াত-৭)
যে ব্যক্তি নবী সা:-এর অনুসরণ করে সেই ব্যক্তি সরল সঠিক পথে অধিষ্ঠিত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, ইয়াসিন, শপথ প্রজ্ঞাময় কোরআনের, নিশ্চয়ই আপনি রাসূলদের অন্তর্ভুক্ত, সরল পথের ওপর প্রতিষ্ঠিত। (সূরা ইয়াসিন, আয়াত ১-৪)
আল্লাহর বান্দাগণ! নিশ্চয়ই নবীর সুন্নতের অনুসরণ করা ও তার প্রতি মান্যতা ও বশ্যতা স্বীকার করা, ইসলাম ও আত্মসমর্পণের অন্যতম দাবি এবং তা ঈমানের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকন ও আমল কবুলের পূর্বশর্ত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, কাজেই যে তার রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎ কাজ করে ও তার রবের ইবাদতে কাউকে অংশীদার না বানায়। (সূরা কাহাফ, আয়াত-১১০)
তিনি আরো বলেন, আপনার রবের শপথ, তারা মুমিন হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ না তাদের মধ্য ঝগড়া বিবাদের বিচারের ভার আপনার ওপর অর্পণ না করে, আপনার মীমাংসা সম্পর্কে তাদের মনে কোনো দ্বিধা না থাকে এবং সর্বান্তকরণে তা মেনে না নেয়। (সূরা নিসা,আয়াত-৬৫)
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আরো বলেন, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিলে মুমিন পুরুষ অথবা মুমিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন কোনো সিদ্ধান্তের ইখতিয়ার সঙ্গত নয়। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা:কে অমান্য করল সে স্পষ্টভাবেই পথ ভ্রষ্ট হলো। (সূরা আহযাব, আয়াত-৩৬)
যে ব্যক্তি রাসূল সা:-এর আদর্শ ও সুন্নতের খেলাফ করে তার জন্য অপমান লাঞ্ছনা প্রস্তুত রয়েছে। মুসনাদে আহমাদের একটি হাদিস, ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সা: বলেছেন, অপমান ও লাঞ্ছনা রাখা হয়েছে আমার আদেশের বিরোধীদের জন্য।
হে মানব সকল! নবী সা:-এর আনুগত্য ও সুন্নত আঁকড়ে ধরার মধ্যেই হেদায়েত ও নাজাত নিহিত রয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো এবং আল্লাহর রাসূলের আনুগত্য করো। (সূরা নিসা, আয়াত-৫৯)
তোমরা রাসূলের আনুগত্য করলে সহজ ও সঠিক পথ পাবে। মূলত নবী-রাসূলগণের দায়িত্ব হচ্ছে স্পষ্টভাবে সঠিক পথ বাতলে দেয়া। মুশরিকরা রাসূল সা:-এর শত্রু হওয়া সত্ত্বেও যেহেতু রাসূল সা: তাদের মাঝে ছিলেন এজন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মুশরিকদের ওপর থেকে বিপথ ও আজাব সরিয়ে নিয়েছিলেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, আল্লাহ এমন নন যে, আপনি তাদের মধ্যে থাকবেন আর আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দিবেন। (সূরা আনফাল, আয়াত-৩৩)
ঠিক এমনিভাবে উম্মতের মধ্যে থেকে যারাই রাসূল সা:-এর সুন্নত ও মতাদর্শকে ভালোবাসবে এবং আঁকড়ে ধরবে তাদের ওপর থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নানাবিধ আজাব ও বালা মুসিবত দূর করে দেবেন। হে আল্লাহ! আমাদের রাসূলে কারীম সা:-এর সুন্নত ও মতাদর্শ আঁকড়ে ধরা লোকদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করুন। সহিহ মুসলিমের একটি হাদিস, আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, নবী করীম সা: বলেছেন, সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমি মোহাম্মদের প্রাণ, ইয়াহুদি হোক বা খ্রিষ্টানই হোক, যে ব্যক্তি আমার রিসালাতের খবর শুনবে অথচ আমার রিসালাতের ওপর ঈমান না এনে মৃত্যুবরণ করবে অবশ্যই সে জাহান্নামী হবে।
হে আল্লাহর বান্দাগণ! মুহাম্মদ সা:-এর সুন্নতের মধ্যে রয়েছে যাবতীয় কল্যাণ। রাব্বুল আলামিন তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ করেছেন আমাদের ওপর এবং আমাদের নবী মুহাম্মদ সা: তাঁর রিসালাতকে পৌঁছে দিয়েছেন সবার কাছে।
এমন কোনো কল্যাণকর বিষয় নেই যার দিকে তিনি আহ্বান করেননি এবং এমন কোনো অকল্যাণকর বিষয় নেই যা থেকে তিনি জাতিকে সতর্ক করেননি।
আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, আজ আমি তোমাদের জন্য দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করলাম আর তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে ইসলামকে পছন্দ করলাম। (সূরা মাইদা, আয়াত-৩)
অতএব, সর্বশ্রেষ্ঠ পথ হচ্ছে আমাদের নবী মুহাম্মদ সা:-এর পথ ও আদর্শ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিকট কামনা করি আল্লাহ যেন আমাদের এ পথে অটুট এবং অবিচল রাখেন।
আমি আল্লাহর নিকট কুরআনুল কারিম থেকে বরকত কামনা করছি। আমি আমার নিজের জন্য এবং আপনাদের জন্য আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
[২২ অক্টোবর ২০২১ মসজিদে নববীতে শায়খ আবদুল্লাহ বুয়াইজান হাফি.এর প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত অনুবাদ ] ভাষান্তর. ইসমাইল মাদানি, মদিনা মুনাওয়ারা, সৌদি আরব




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com