শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪০ পূর্বাহ্ন

সিরাতুন্নবী সা.এর আলোকে আমাদের জীবন গড়তে হবে

মোহাম্মাদুল্লাহ বিন আব্দুছ ছবুর
  • আপডেট সময় সোমবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২১

শ্রেষ্ঠ মানব হযরত মুহাম্মদ সা.। তিনিই আমাদের আদর্শ। প্রতিটি মুমিনের জীবনে, ব্যক্তি জীবনে , পারিবারিক জীবনে,সামাজিক জীবনে, সর্বোপরি জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় জীবনে সীরাতে-নবী করিম সা’ এক আলোকিত,সমুজ্জ্বল,পথনির্দেশক। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র আলোকিত করতে সিরাতে নবী করিম সা এর অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। সব দেশের সকল ভাষার সর্বস্তরের মুমিনের এই সিরাত অধ্যয়ন করা অপরিহার্য।কারণ সীরাতে নববীতে প্রত্যেক মুমিনের জীবন ব্যবস্থার সম্পূর্ণ এক রূপরেখা ও প্রয়োজনীয় সকল দিকনির্দেশনা এবং সকল সমস্যার সঠিক ও বাস্তবমুখী সমাধান রয়েছে। আর সীরাতের পাতায় পাতায় এর জীবন্ত উদাহরণও রয়েছে।আর কোন সন্দেহ নেই যে, সীরাতে নবী সা. আমাদের আখলাক,আফকারে এবং জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে, প্রতিটি কাজে,মানুষের সঙ্গে প্রতিটি আচরণে-উচ্চারণে মহত্ত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে জলজ্যান্ত উদাহরণ ও আমাদের জীবনে বাস্তবায়নে সবচেয়ে বড় সহোযোগী। কারণ কোরআনের পর, সীরাতুন্নবী সা.ই মানবতা, সভ্যতা, সুস্থ সংস্কৃতির বাস্তব নমুনা ও চিত্র রয়েছে যা থেকে আমাদের ব্যক্তি জীবন থেকে শুরু করে জাতীয় জীবনের সকল বিষয়ে দিকনির্দেশনা রয়েছে। সমাজ ব্যবস্থা,রাষ্ট্র ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা, রাজনৈতিক অবস্থাথএক কথায় মুমিনের জীবনে দুনিয়াবী যত বিষয় ও জটিলতা রয়েছে তার সবকিছুরই সর্বোত্তম সমাধান এবং সমুজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কোরআনের পরে রয়েছে সীরাতুন্ন নবী সা.।
কিন্তু দুঃখজনক হলেও বাস্তবতা এই যে, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ও পাঠ্যসূচিতে সীরাতুন্নবী সা.সহ আরো সকল ইসলামী শিক্ষার বিষয়বস্তুগুলো অত্যন্ত অবহেলা ও গুরুত্বহীনতার শিকার। অথচ সাইন্স-আর্টস্ নিয়ে পড়তে পড়তে রীতিমত মুখে ফেনা উঠে যায় আর মস্তিষ্কে বলক উঠতে শুরু করে। কোন সন্দেহ নেই যে এই অবহেলা যা এক পর্যায়ে গিয়ে অবজ্ঞায় পরিণত হয় তার সৃষ্টি হয় প্রয়োজনীয়তার অনুভূতির অভাবের কারণে। সুতরাং এ অনুভূতির উৎসটা খুঁজে বের করে সেটাকে নির্মূল করে সুস্থ চিন্তা এবং ধর্মীয় সঠিক অনুভূতিগুলো এমনভাবে গেঁথে ফেলা যেন কখনো ঐসব চিন্তা-চেতনার আড়ালে এগুলো প্রচ্ছন্ন-ঝাপসা না হয়ে যায়।আর একটু চিন্তা করলেই কিন্তু আমরা বুঝতে পারবো যে, আমাদের মুমিন মুসলমানদের শিষ্টাচার শিক্ষা ও ধর্মীয় জীবন ব্যবস্থার প্রধান উৎস কিন্তু কোরআন,এরপর বিরাট একটা অংশ জুড়ে রয়েছে হাদীস ও সুন্নাহ তথা সীরাতে নববীর ভূমিকা। আর একজন প্রকৃত মুমিনের জীবনে সীরাতের ভূমিকা অনস্বীকার্য।আর সীরাত অধ্যায়ন তো প্রত্যেক মুমিনের ঈমানী ও নৈতিক দায়িত্ব।
অথচ এই বিষয়ে আমাদের গুরুত্বহীনতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে আমরা এই শিক্ষাগুলোর প্রয়োজনীয়তাই অনুভব করছি না। যার ফলে আমাদের মুসলিম সমাজের জীবনাচার, সভ্যতা-সংস্কৃতি পশ্চিমাদের থেকে ধার করে নিতে হচ্ছে আর আমরা ঐ সভ্যতাকেই সবচেয়ে উন্নত সভ্যতা মনে করি।
আর সীরাত অধ্যয়নের ক্ষেত্রে এই মর্মান্তিক অবহেলার কুফল আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রকাশ পাচ্ছে।আর বর্তমানে মুসলমানদের দুনিয়াবি যত সমস্যা তার পেছনে অনেক বড় একটা কারণ হচ্ছে সীরাতে নববী অধ্যায়ন এবং তা বাস্তব জীবনে অনুকরণের চেষ্টা পরিহার করা।এই কারণেই আমরা ধীরে ধীরে আমাদের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। আমাদেরকে অর্থাৎ মুমিন মুসলমানদেরকে কুরআন হাদীসে যেভাবে জীবন যাপন করতে বলা হয়েছে এবং যে নীতির উপর সমাজ ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিচালনা করতে আদেশ করা হয়েছে তার ধারেকাছেও আমাদের উপস্থিতি না থাকায় বর্তমানে মুসলমানদের দ্বীনী ও দুনিয়াবি সকল ইস্যুতে যারপরনাই দুর্গতিথআল্লাহ হেফাজত করুন-পোহাতে হচ্ছে।
আমাদের এ অবস্থার উন্নতি করার জন্য এবং জীবন যাপনের ক্ষেত্রে আমাদের পূর্ববর্তীদেরকে অনুসরণ করার জন্য এবং ন্যায়-সততা, সত্যবাদিতার সঙ্গে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করতে চাইলে অবশ্যই সীরাতে নববীর শিক্ষাগুলো আমাদের বাস্তব জীবনে বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে। কারণ কুরআন হাদীসের অনুসরণ-অনুকরণ ছাড়া একজন মুমিনের ধর্মীয় জীবন পূর্ণাঙ্গ ও আল্লাহ-রাসূলের সন্তুষ্ট অনুযায়ী হতে পারে না।আর যতদিন আমরা কুরআন হাদীস থেকে দূরে থাকবো ততদিন আমরা উন্নতির পরিবর্তে অবনতি ও গোমরাহী ও ভ্রষ্টতার পথে অগ্রসর হতে থাকবো। আর আমাদের তথাকথিত”ধর্মীয় অনুভূতির ও চিন্তার” মাঝে যে বিষয়টি বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, সীরাতের তথারীতি গুরুত্ব প্রদানের ক্ষেত্রে শুধু রবীউল আউয়াল মাসই নির্ধারিত করাথএগুলোই আমাদের ধর্মীয় জ্ঞানের সংকীর্ণতা ও সীমাবদ্ধতার প্রতিনিধিত্ব করে।কারণ বাঙালি মুসলমানদের ধর্ম হচ্ছে মসজিদ-মাদরাসা কেন্দ্রিক।আর ধর্মীয় অনুভূতিগুলো হচ্ছে দিবস কেন্দ্রিক। তো আমাদের উচিৎ,চিন্তা-চেতনার অগভীরতাগুলো দূর করে সুস্থ চিন্তার ধারক ও বাহক হওয়া। এবং ধর্মীয় অনুভূতির শিরোনামে সুস্থ অনুভূতি লালন করা। আর আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব হচ্ছে,নিজেদের এবং নিজেদের সন্তানদের তৃণমূল পর্যায় থেকে সীরাতের ধারাবাহিক অধ্যয়ন করানো যাতে করে আমাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সীরাতের দিকনির্দেশনাগুলো বাস্তবায়ন করতে পারি এবং তার মাধ্যমে আমাদের জীবনের অধ্যায়ের প্রতিটি পাতা আলোকিত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি। আর যেন সীরাতকে কোন নির্দিষ্ট দিনের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে না রাখি। আল্লাহ আমাদের সকলকে পরিপূর্ণ মুমিন হিসেবে কবুল করুন এবং তার পাক কালাম এবং নবীর সীরাত সঠিকভাবে বোঝার ও অনুধাবন করার এবং সে অনুযায়ী আমল করার এবং নিজেদের জীবনে পূর্ণাঙ্গভাবে বাস্তবায়ন করার তাওফীক দান করুন।আমীন।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com