‘কর্জে হাসানা’ আরবি যৌথ শব্দ। কর্জ অর্থ হলো ধার, ঋণ। আর হাসানা অর্থ হলো উত্তম। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘কে আছে, যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দেবে, ফলে তিনি তার জন্য বহু গুণে বাড়িয়ে দেবেন? আর আল্লাহ সঙ্কীর্ণ করেন ও প্রসারিত করেন এবং তাঁরই কাছে তোমাদেরকে ফেরানো হবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২৪৫) কিন্তু আজকে অতিমারীতে দারিদ্র্যপীড়িত মানুষের দুঃখকষ্ট নিরসনের জন্য দানের হাত প্রশস্ত করে না এই কারণে যে, যদি ধনসম্পদ ফুরিয়ে যায়। বিপদগ্রস্ত মানুষকে কর্জে হাসানা প্রদান থেকে বিরত থাকে এই ভয়ে যে, যদি ফেরত না দেয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও, তিনি তা তোমাদের জন্য দ্বিগুণ করে দেবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করে দেবেন। আল্লাহ গুণগ্রাহী, পরম ধৈর্যশীল।’ (সূরা তাগাবুন, আয়াত-১৭) তবে রাসূল সা: সামান্য কারণে ঋণ গ্রহণের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছেন। কঠিন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে সুদের ওপর টাকা লেনদেন না করে পরস্পরের মধ্যে কর্জে হাসানার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা। রাসূল সা: বলেছেন, ‘হে মুসলমানরা! তালির ওপর তালি দেয়া ছিন্নবস্ত্র পরিধান করা ঋণ গ্রহণ অপেক্ষা উত্তম। যদি তা শোধ করার শক্তি না থাকে।’ (মুসনাদ আহমাদ) মুমিনদের ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে; যাতে ঋণদাতা ও ঋণগ্রহীতার মধ্যে কোনো মনোমালিন্য না হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পরস্পর ঋণের লেনদেন করবে, তখন তা লিখে রাখবে।’ (সূরা বাকারা, আয়াত-২৮২)
বাবা বিদেশগামী সন্তানের টাকা জোগাড় করতে দিশেহারা প্রায়। হঠাৎ বৃষ্টিতে মাথার উপর ছাতার মতো সুদের কারবারি মহাজনের ছায়া। গ্রামের একটা ছেলে বিদেশ যাবে কত খুশির সংবাদ। কত লাগবে? শুধু জমিজমার দলিল হলেই হবে। এনজিওতে বহু ঝামেলা আছে। আমি থাকতে তোমার এত চিন্তা কিসের?
মেয়ের বিয়েতে বরপক্ষের কোনো চাওয়া নেই। শুধু মেয়ের ঘর সাজিয়ে দিলেই হবে। বাবার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। মহাজন ক্লান্ত পথিকের বটবৃক্ষের ছায়া। আরে মিয়া এত ভাবনার কী আছে, পাত্র ভালো; কষ্ট করে দিয়ে দাও। তোমার তো বাড়ি ছাড়া কিছু নেই। আচ্ছা, বাড়ির দলিল দিলেই হবে। এভাবেই মানুষের বিপদে সুকৌশলে সুদের ফাঁদ এটে বসে কারবারিরা। যা একদম হারাম। কিন্তু যারা উত্তম ঋণের উদার হস্ত নিয়ে মানুষের পাশে থাকে আল্লাহ তার দুনিয়ায় কল্যাণ ও পরকালে মুক্তির পথ সহজ করে দেবেন। রাসূল সা: বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিম ব্যক্তির দুনিয়াবি বিপদ দূর করবে, আল্লাহ তায়ালা তার আখিরাতের বিপদ দূর করবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো অভাবীর কষ্ট সহজ করবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতে সহজ করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্য করেন যতক্ষণে বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করে।’ (সহিহ মুসলিম)
মহাজন, এনজিওর চক্রবৃদ্ধিহার সুদ জোঁকের রক্তচোষার মতো দ্বিমুখী শোষক। যা মধ্যবিত্ত মানুষদের নতুন দারিদ্র্য ও দুর্দশার মুখে ঠেলে দিচ্ছে। অনেকেই ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে সহায়সম্বলহীন হয়ে কেউ ঠাঁই নিয়েছে শহরের অলিতে-গলিতে, কেউ হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যা করেছে; এমন খবরও দেখা গেছে। এ ছাড়াও অভাব-অনটন, দুঃখকষ্ট, মানুষকে আল্লাহর ব্যাপারে উদাসীন করে তুলে। তাই সর্বাবস্থায় আল্লাহর কাছে দোয়া করা। আনাস রা: থেকে বর্ণিতÑ তিনি বলেন, রাসূল সা: এ দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই দুঃখ-দুশ্চিন্তা থেকে, অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, ভিরুতা ও কার্পণ্য থেকে, ঋণের বোঝা ও মানুষের প্রাবল্য (এর শিকার হওয়া) থেকে।’ (সহিহ বুখারি-৬৩৬৯)
মানুষের দুর্বলতাকে পুঁজি করে সুদ কারবারি মহাজন ও এনজিওগুলো প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছে। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা: বলেন, রাসূল সা: অভিশাপ করেছেন সুদদাতা, সুদগ্রহীতা, সুদের সাক্ষী ও সুদের লেখকের ওপর।’ (সুনানে আবু দাউদ-৩৩৩৩) আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তাতে তুমি আখিরাতের নিবাস অনুসন্ধান করো। তবে তুমি দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেও না। তোমার প্রতি আল্লাহ যেরূপ অনুগ্রহ করেছেন তুমিও সেরূপ অনুগ্রহ করো।’ (সূরা কাসাস, আয়াত-৭৭) -কবি ও প্রাবন্ধিক