ভয়াবহ রূপে করোনা ফিরে আসার শংকা
স্বাস্থ্যবিধি অবহলোয় আসন্ন শীতে ভয়াবহ রূপে ফিরতে পারে করোনা। এমন আশংকা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এমন আশংকা প্রকাশ করে সবাইকে সতর্ক থাকার আহবান জানিয়েছন। তিনি বলেছেন, শীতের আগমনে দেশে আবারো করোনাভাইরাস যাতে মাথাচারা দিয়ে উঠতে না পারে সেজন্য সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং মাস্ক ব্যবহারের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘দেখা যাচ্ছে যখনই আবার শিতকাল আসছে পৃথিবীর সবদেশেই কিন্তু আবার করোনাভাইরাস দেখা দিচ্ছে। ইউএসএ, ইংল্যান্ড বা ইউরোপের দেশগুলোতে এর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কাজেই বাংলাদেশের সবাইকে সতর্ক থাকার জন্য আমি অনুরোধ করছি।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘শীতকাল আসলেই একটু ঠান্ডা লাগে, সর্দি, কাশি হয়। আর এটা হলেই এই করোনাভাইরাসটা আমাদের সাইনাসে গিয়ে বাসা বানাতে পারে। কাজেই, সেইদিকে সবাইকে একটু সতর্ক থাকতে হবে। সবাইকে মাস্ক পড়তে হবে এবং খাদ্য তালিকায় ‘ভিটামিন সি’ যাতে একটু বেশি থাকে এবং যাতে ঠান্ডা না লাগে সেদিকে নজর দিতে হবে।’ তিনি এ সময় মৌসুমি ফলমূল, শাকসবজী এবং তরিতরকারি বেশি করে খাবার পরামর্শ দেন।
বাংলাদেশ করোনা সংক্রমণের এক বছর ৮ মাস পার করলো। ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে কয়েকদফা কড়া লকডাউনও দেওয়া হয়। সংক্রমণ কমার পর শিথিল করা হয় লকডাউন। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে শুরু করে মানুষ। তবে যেকোনও সময় করোনা ভয়াবহ রূপ ধরণ করতে পারে এমন আশঙ্কা আছে। এ জন্য হাট-বাজার, গণপরিবহনসহ সব জায়গায় সরকারিভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথাও বলা হচ্ছে। কিন্তু সবখানেই তা উপেক্ষা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, সাধারণ মানুষ যেন করোনাকে ভুলতে বসেছে। করোনা যেন আবারও ভয়াবহ আকারে ফিরে না আসে এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানার পরামর্শ দিয়েছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতারা গায়ে গা ঘেঁষে চলছেন। পাশাপাশি দাঁড়িয়ে বাজার করছেন। একই দ্রব্য একাধিক ক্রেতা ছুঁয়ে দেখছেন। একজনের টাকা একাধিক মানুষের হাত ঘুরে যাওয়াটাও স্বাভাবিক চিত্রে পরিণত হয়েছে। বাজারে আসা বেশিরভাগ ক্রেতাই মানছেন না স্বাস্থ্যবিধি। বেশিরভাগের মুখে মাস্ক নেই। কেউ কেউ পরে এলেও তা থুতনিতে লাগিয়ে রেখেছেন। কেউবা হাতের ভাঁজে মাস্ক নিয়ে ঘুরছেন।
বাজারে আসা ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের বেশিরভাই বিশ্বাস করেন না যে করোনা এখনও আছে। থাকলেও প্রভাব কম। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আগ্রহ নেই। অনেকেই সচেতন থাকাটাকে (মাস্ক পরা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার) অতিরিক্ত ঝামেলা মনে করেন। মিরপুর-১১ নম্বরের একটি বাজারে সবজি বিক্রি করেন আলম। তিনি বলেন, ‘দোকানে দৈনিক ২০০-৩০০ ক্রেতা আসেন। বেশিরভাগ ক্রেতার মুখে মাস্ক থাকে না। মানেন না স্বাস্থ্যবিধি।’
আরেক বিক্রেতা শাহেদ বলেন, ‘এই বাজারে ৭২টি দোকান। কোনও দোকানিই স্বাস্থ্যবিধি মানেন না। মাস্ক পরে কথা বলতে সমস্যা হয় তাদের। বাজার করতে আসা লোকদের মধ্যেও বিক্রেতাদের উদাসিনতা নিয়ে কোনও অভিযোগ নেই।’ক্রেতা রাসেল বলেন, ‘বাজার তো করতেই হবে। আমার একার পক্ষে তো স্বাস্থ্যবিধি মানা সম্ভব নয়। আমি একা মেনেও লাভ নেই। এসে এই ভিড়ের মধ্যেই বাজার করতে হবে।’ বাউনিয়াবাঁধ বাজারে আসা সেতারা বেগম বলেন, ‘৯ দিন পর বাজারে আসছি। সহজে আসতে চাই না। আমি তো মাস্ক নিয়ে আসছি, অনেকেই মাস্ক নিয়ে আসে না। এটা যার যার বিষয়।’
মানুষের স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতার পেছনে মূল কারণ কী জানতে চাইলে পাবলিক হেলথ অ্যাডভাইজার কমিটির সদস্য এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আবু জামিল ফয়সাল বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানাটা মানুষের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এই অভ্যাস পরিবর্তন করতে না পারার মূল কারণ আমরা মানুষের সঙ্গে সঠিকভাবে যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছি। যেভাবে বোঝালে মানুষ বুঝবে সেভাবে বোঝাতে পারিনি। এ ক্ষেত্রে অঞ্চলভেদে নিজস্ব ভাষা এবং মানুষের প্রকৃতি বুঝে যোগাযোগ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনা এক ধাপেই নির্মূল হওয়ার নয়। এটি কমবে, আবার বাড়বে। এ ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। প্রতিনিয়ত সচেতন থাকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। সবার টিকা প্রদান সম্পন্ন করতে পারলে এক সময় এর প্রভাব শেষ হয়ে যাবে।’
করোনা নিয়ন্ত্রণ ও মোকাবিলায় ২৩০০ কোটি ডলার প্রয়োজন : ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের ছোবল থেকে এখনো বের হতে পারেনি বিশ্ব। এই মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা এগিয়ে নিতে আগামী এক বছরে দুই হাজার ৩৪০ কোটি ডলার প্রয়োজন হবে। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে করোনার টিকা প্রদান, পরীক্ষা করা এবং চিকিৎসা নিশ্চিত করায় ব্যয় করা হবে এই অর্থ। একইসাথে চলমান মহামারির বিস্তার ঠেকাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সামগ্রীর উন্নয়ন, উৎপাদন, ক্রয় এবং বন্টনে এই অর্থ ব্যয় করা হবে। এ ছাড়া বিশ্বজুড়ে করোনার টিকা ব্যবস্থায় ব্যাপক বৈষম্য রোধেও এই অর্থ কাজে লাগবে। আরো বলা হয়, গত দেড় বছরের বেশি সময়ে করোনা মহামারির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। তার তুলনায় এই পরিমাণ অর্থ খুবই নগন্য। এই অর্থ বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে ভূমিকা রাখবে। বিশেষত করোনাভাইরাসের কারণে অধিক ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোকে এটা সহায়তা করবে। ডব্লিউএইচও’র প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেন, ‘বিশ্ব থেকে করোনা মহামারী দূর করতে সরকার, সহায়তা প্রতিষ্ঠান এবং দাতাগোষ্ঠীকে অর্থ সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে। এর মাধ্যমে করোনার টিকা, পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় বিদ্যমান অসংগতি দূর করা সম্ভব হবে।’