দেশে এখন সরকারেরই ১৩টি কোম্পানি রয়েছে যারা বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ করছে। ফলে পিডিবিকে অনেকেই মাথাভারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তুলনা করছেন। জানতে চাইলে পিডিবির চেয়ারম্যান প্রকৌশলী বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘পিডিবির এখনকার যে জনবল কাঠামো তা পিডিবি গঠনের শুরুর দিকে তৈরি করা হয়। এটি বেশ পুরনো। এখনকার কাজের ধরন আগের মতো নয়। এতে কাজের অসুবিধা হচ্ছে। এখন নতুন অনেক কিছু যুক্ত হচ্ছে। তাই অর্গানোগ্রাম পরিবর্তনের জন্য উদ্যোগ নিয়েছি।’ তিনি বলেন, ‘বিতরণ থেকে এখনই পিডিবি সরে আসবে না। অন্য কোম্পানিগুলোর তুলনায় পিডিবি ভালো করছে। নেসকোর চেয়ে পিডিবির সিস্টেম লস এখনও কম। কোম্পানি করে খুব বেশি লাভ হয়নি। বর্তমান চাহিদার কথা চিন্তা করে যুগোপযোগী একটি অর্গানোগ্রাম করতে চাচ্ছি।’ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) অর্গানোগ্রাম (জনবল কাঠামো) সংশোধন করা হচ্ছে। পিডিবি বলছে, ইতোমধ্যে সংশোধনের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির প্রতিবেদনের পর পরামর্শকের সুপারিশও নেবে তারা। হুট করে কেন পিডিবির জনবল কাঠামো সংশোধনের প্রয়োজন পড়লো তা জানতে চাইলে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আগে যেখানে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হতো, সেখানে বিপুল পরিমাণ জমি অধিগ্রহণ করে বড় আকারের অবকাঠামো নির্মাণ করা হতো। একটি ২০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনার জন্য কয়েক শ’ মানুষকে নিয়োগ দেওয়া হতো। এতে প্রতিষ্ঠানের খরচ বাড়তো। অন্যদিকে দেশের বাইরে দেখা যায়, একটি ৬০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্রে ১৪ থেকে ১৫ জন মানুষ কাজ করে। তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সামঞ্জস্য থাকে। আমাদের এখানে যা একেবারেই নেই। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানালো, সিরাজগঞ্জে নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং সিঙ্গাপুরের সেম্বকর্পের দুটি পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। সেম্বকর্পে কাজ করে ১৪ জন। অন্যদিকে এনডব্লিউপিজিসিএল-এ কয়েক শ’ কর্মী রয়েছে।
পিডিবি সূত্র বলছে, এখন তাদের অর্গানোগ্রামে ১৮ হাজার ৩৯৪ জনের কাঠামো রয়েছে। এরমধ্যে কাজ করছেন ১২ হাজার ৩১৬ জন। অন্যদিকে ছয় হাজার ৭৮ জনের শূন্যপদ রয়েছে। পিডিবি বলছে সহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। সহকারী পরিচালক এবং হিসাব সহকারী পদে আবেদনপত্র গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়া উপসহকারী প্রকৌশলী, চিকিৎসক, ফার্মাসিস্ট, নিরাপত্তা পরিদর্শক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন।
পিডিবি সূত্র বলছে, সরকার অনেক দিন থেকেই দেশে পিডিবির অধীনে থাকা বিতরণ এলাকাগুলো ভেঙে নতুন কোম্পানি করার পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু পিডিবির শ্রমিক কর্মকর্তাদের আন্দোলনে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। এরমধ্যে উত্তরাঞ্চলে বিতরণের জন্য নেসকো গঠন করা হলেও এখনও ময়মনসিংহ, সিলেট, কুমিল্লা এবং চট্টগ্রামের শহরাঞ্চল পিডিবির হাতে রয়ে গেছে। সরকার চাইছে পিডিবিকে শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেখে বিতরণ জোনগুলোতে পৃথক কোম্পানি করতে। পিডিবি সূত্র বলছে, গত ২৪ জুন জনবল কাঠামো সংশোধনে কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৯ আগস্ট ওই কমিটি বৈঠক করেছে। বৈঠকে অর্গানোগ্রাম নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অভিজ্ঞ পরামর্শক নিয়োগের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। প্রসঙ্গত, দেশে স্বাধীনতার পর পিডিবি এককভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ করতো। কিন্তু পরে আরইবি গঠনের ফলে দেশের গ্রামীণ জনপদে বিদ্যুৎ বিতরণে পরিবর্তন আসে। এরপর ১৯৯৬ সালে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের সুযোগ দেওয়া হয়। দেশের মোট বিদ্যুতের অর্ধেকই এখন বেসরকারি উৎপাদনকারীদের কাছ থেকে পাওয়া যায়। সরকারও নিজস্ব বিনিয়োগে কোম্পানি করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এ ছাড়া পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি (পিজিসিবি) গঠন করে সঞ্চালনের কাজও পিডিবির কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।