আজ ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর একটি ঘটনাবহুল দিন। ক্যু-পাল্টা ক্যুসহ অনেক নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে ১৯৭৫ সালের এ দিনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন। বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো ৭ নভেম্বরকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ দিবসটিকে সৈনিক হত্যা ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সিপাহী-জনতার অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে দিনটি পালন করে।
৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপির অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী-সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কর্মসূচি: ৭ নভেম্বর মহান জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে ঐ দিন সকাল ৬ টায় নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে দলীয় কার্যালয়গুলোতে দলীয় প্রতাকা উত্তোলন করা হবে। ৭ নভেম্বর সকাল ১১ টায় মহান স্বাধীনতার ঘোষক সাবেক রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তম এর মাজারে বিএনপি’র পক্ষ থেকে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দের পুস্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া। ৬ নভেম্বর বেলা ২-০০টায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে মহানগর নাট্যমঞ্চে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দসহ দেশের বরেণ্য বুদ্ধিজীবীগণ আলোচনা করবেন। জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে দলের পক্ষ থেকে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হবে। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে পোষ্টার প্রকাশ করা হয়েছে। এছাড়াও দলের অঙ্গ, সহযোগী এবং পেশাজীবী সংগঠনগুলি দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।অনুরুপভাবে দেশব্যাপী জেলা, মহানগর ও উপজেলা বিএনপি’র উদ্যোগে স্থানীয় সুবিধানুযায়ী যথাযোগ্য মর্যাদায় ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বর : বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক ঘটনাবহুল ৭ নভেম্বরের ঘটনা প্রবাহ সম্পর্কে বলেন,১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে শুরু হওয়া প্রায় আড়াই-তিন মাসের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির শেষে এক অগ্নিগর্ভ মুহূর্তে, জিয়াউর রহমান বীর উত্তম সেনাবাহিনীর দায়িত্বের অতিরিক্ত, কিন্তু অবশ্যই পরোক্ষভাবে, পুরো দেশ ও জাতির নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। বিভক্ত জাতিকে সংহত করার কঠিন প্রক্রিয়া শুরু করেন। ৭ নভেম্বরের বিকাল বেলা থেকেই পরবর্তী দেড়-দুদিনের চ্যালেঞ্জ ছিল, সৈনিকদের হাতে হাতে ঘুরছিল যেই অস্ত্র, সেই অস্ত্রকে অস্ত্রাগারে ফেরত আনা; পথে পথে ঘুরছিল যেই সৈনিক, সেই সৈনিকগণকে নিজেদের ব্যারাকে ফেরত আনা। জিয়াউর রহমান অত্যন্ত শান্ত কিন্তু দৃঢ় মনোভাব ও বক্তব্যের মাধ্যমে, সৈনিকদের ওপর অফিসারদের নিয়ন্ত্রণ পুনঃস্থাপনের কাজটি শুরু করেন। সৈনিকরা যেন অস্ত্র জমা দেয় সেটি নিশ্চিত করেন। সৈনিকদের মনের ভেতরে পুঞ্জিভূত কষ্টগুলো দূর করার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। দুই দিনের পুরানো একজন প্রেসিডেন্ট ছিল যথা ৫ নভেম্বর তারিখ সকালে নিযুক্ত প্রেসিডেন্ট আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম। কোনো মন্ত্রীসভা ছিল না। ওই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট সায়েম বাংলাদেশ কীভাবে পরিচালনা করতেন সেটা একটি গবেষণার বিষয়। সেই মুহূর্তে প্রেসিডেন্ট সায়েম, জিয়াউর রহমান এবং অন্য তিনজন বাহিনী প্রধানের সহায়তা গ্রহণ করেন এবং বাস্তবসম্মত এবং যৌক্তিক কারণেই বৃহত্তম বাহিনী তথা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর যিনি প্রধান, সেই মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের সহায়তা তিনি সবচেয়ে বেশি গ্রহণ করেন। অনেকদিন ধরে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট তথা প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক সায়েম এবং মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানসহ মোট তিনজন উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক মিলেই, সরকারের নীতি নির্ধারণী দায়িত্ব পালন করেন। একটি কঠোর ও গভীর গভর্নান্সে ক্রাইসিস থেকে বাংলাদেশকে উদ্ধার করেছিলেন জিয়াউর রহমান ও তার সহকর্মীরা। উদারভাবে মূল্যায়ন করলে, এটা বলাই যায় যে, একান্তভাবেই হারিয়ে যাওয়ার মুহূর্তে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল বীর উত্তম জিয়াউর রহমানের নেতৃত্ব। সেই কারণে অভিনন্দন পাবেন জিয়াউর রহমান এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। ৭ নভেম্বর ১৯৭৫। জাসদপন্থি সৈনিকদের ও জাসদ কর্মীদের বিপ্লব সূর্য উদয়ের ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই, পানিতে যেমন চিনি গলে যায় ওইরকমভাবে বিলীন হয়ে যায়। জীবিত থাকে এবং শক্তিশালী হয়ে ওঠে জিয়া অনুরাগী হাজার হাজার সৈনিকের এবং হাজার হাজার জনগণের সম্মিলিত বিপ্লব। সেই অবধি এই দিনের নাম হয়েছে সৈনিক জনতার বিপ্লব বা সিপাহী জনতার বিপ্লব তথা বিপ্লব ও সংহতি দিবস।’ জাতীয় বিপ্লব এবং সংহতি দিবস উপলক্ষে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন দল ও বিভিন্ন সামাজিক- সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।