সোমবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪:২৯ অপরাহ্ন

২৭ মৃত্যু ও সিইসির ‘ভুলে যাওয়া’ দায়িত্ব

খবরপত্র ডেস্ক:
  • আপডেট সময় বৃহস্পতিবার, ১১ নভেম্বর, ২০২১

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আজ গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত সারা দেশে ২৭ জন মারা গেছেন। এই সংখ্যা প্রথম দুই ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনকেন্দ্রিক। পরিস্থিতি বলে দিচ্ছে, ইউপি নির্বাচন ঘিরে সহিংসতা আর মৃত্যুর সংখ্যা হয়তো সামনে আরও বাড়বে। গতকাল দ্বিতীয় ধাপের ভোটের দিন নরসিংদীতে তিনজন, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে একজন করে মারা গেছেন। দিনব্যাপী সহিংসতা ছড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
নির্বাচন ঘিরে যখন সহিংসতা সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে, তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নূরুল হুদা সহিংসতা দূর করার ‘উপায়’ বলতে গিয়ে বললেন, পাড়া-মহল্লায় পুলিশ দিয়ে, পাহারা দিয়ে নির্বাচনী সহিংসতা থামানো যায় না। এ ক্ষেত্রে প্রার্থী, ভোটার ও সংশ্লিষ্টরা সহনশীল ও নির্বাচনসুলভ আচরণ দেখালেই এ সমস্যা থাকবে না। তিনি এ–ও বলে দিলেন, সহিংসতার দায় প্রশাসন, পুলিশ ও নির্বাচন কমিশনকে দিলে হবে না। তারা যে এটা বলারও নাকি সুযোগ নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন সার্চ কমিটির দ্বারা খুঁজে পাওয়া দেশের দ্বিতীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার নূরুল হুদা।
এখন পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন চার ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ইউনিয়ন পরিষদের ভোট শেষ করতে আরও দুই ধাপে তফসিল ঘোষণা হতে পারে। দুই ধাপের ভোট শেষ হয়েছে। সামনে আর চার ধাপের ভোট বাকি আছে। সহিংসতার মাত্রাও বেড়ে চলেছে। প্রথম ধাপের ভোটে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৫ জন। আজ দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরুর আগেই মারা গেছেন ১৬ জন। আর ভোটের দিন প্রাণ গেছে আরও ৫ জনের। প্রশ্ন হচ্ছে, সহিংসতার জন্য নিজেদের এবং ভোটের সময় ইসির নিয়ন্ত্রণে থাকা পুলিশ প্রশাসনের দায় নেই এ কথা সিইসি কোথায় পেলেন। আর সংশ্লিষ্টদের সহনশীল হতে বলে সিইসি কি নিজের দায়িত্ব এড়াতে চাইলেন। বাংলাদেশের সংবিধান ও আইন বলা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবেন। আর নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনে সহায়তা করা নির্বাহী বিভাগের কর্তব্য। আর নির্বাহী বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ অংশটি হলো প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর বাইরে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ওপর দায়িত্ব পড়লে তাদেরও একইভাবে কমিশনকে সহায়তা করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের কাজ শুরু তফসিল ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। নির্বাচন কমিশনকে সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে হয়। এটাই দায়িত্ব। আর সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। ভোট যদি শান্তিপূর্ণ না হয়, তাহলে সেটা গ্রহণযোগ্যও হয় না। শান্তিপূর্ণ ভোটের জন্য পরিবেশ তৈরি করাটা নির্বাচন কমিশনেরই কাজ। আর এখানেই সিইসি নূরুল হুদা সম্ভবত নিজের দায়িত্বের কথা ভুলে গেছেন। কেননা, তাঁর কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু-গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তেমন কোনো উদাহরণ নেই। কমিশন তফসিল ঘোষণা করেই যেন দায়িত্ব শেষ করেছে। মাঠে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিতে কমিশনের ভূমিকা তেমন ছিল না বললেই চলে। নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো ভোটার, প্রার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়া। একজন প্রার্থী নির্ভয়ে নির্বাচন করবেন, কোনো চাপ থাকবে না। প্রচার-প্রচারণায় বাধাহীন অংশ নেবেন। অন্য দিকে ভোটাররা নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে যাবেন এবং ভোট দিয়ে সুস্থ শরীরের বাসায় ফিরবেন। তাঁদের বাসায় হামলা হবে না। তাঁর ভোটও কেউ দিয়ে দেবে না। এই পরিবেশ নির্বাচন কমিশনকেই তৈরি করতে হয়। কিন্তু বলা যায় সেই পরিবেশ তৈরিতে ইসি ব্যর্থ হয়েছে।
দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে ৮১টি ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতে গেছেন। ৫টি ইউপিতে তো কোনো পদেই ভোট হয়নি। প্রথম ধাপের নির্বাচনেও ৬৪টি ইউপিতে বিনা ভোটে জয় পেয়েছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। বাংলাদেশের নির্বাচন সংস্কৃতি বলে এখানকার মানুষ ভোটে অংশ নিতে চায়। বিনা ভোটে জয়লাভের এই ‘সংস্কৃতি’ মূলত ভয় থেকেই। চাপের কারণে অনেকে প্রার্থী হন না। আবার অনেকেই ভাবেন ভোট করে লাভ কি। জিতবে কে সেটা তো জানাই। আর ভোটাররা ভোট দিতে আগের মতো উৎসাহ পান না। অনেক ক্ষেত্রে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেন না। ভোট দিতে হয় ক্ষমতাবান প্রার্থীর সমর্থকদের সামনে। ভোটাররা এখন ভোটকেন্দ্র বিমুখ হচ্ছেন। নির্বাচন কমিশন এখানে আচরণবিধি মানাতে প্রার্থীদের বাধ্য করতে পারেননি। সব প্রার্থীর জন্য সমান পরিবেশ দিতে পারেনি। ফলে মাঠে হুমকি-ধমকি, সহিংসতার ঘটনা ঘটেই চলছে। নির্বাচন কমিশন চাইলে অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারত, ভোট স্থগিত করতে পারত, ভোট হয়ে যাওয়ার পর যেসব জায়গায় গুরুতর অনিয়ম ছিল, সেখানের ভোট বাতিল করতে পারত। কিন্তু কোনো ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভোটের পরিবেশ তৈরি হয়নি। সহিংসতাও বেড়েই চলেছে। নির্বাচন কমিশন এই দায়িত্বগুলো ভুলে গিয়ে কেবল নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে নিজেদের দায়িত্ব শেষ করেছে। মাঠের পরিবেশ সুন্দর করতে পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সাংবিধানিক ও সাংবিধান অনুযায়ী স্বাধীন এই প্রতিষ্ঠানটি। নির্বাচন নিয়ে কাজ করা সুশাসনের জন্য নাগরিকেরÍসুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের ভাষায় বলতে গেলে বলতে হয়, ‘নির্বাচন নির্বাসনে চলে গেছে। নির্বাচন কমিশনও ভুলে গেছে তাদের কাজটা কী?’ ( প্রথমআলো অন লাইনের সৌজন্যে)




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com