উত্তরাঞ্চলের শস্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায় এখন রোপা আমন ধান কাটার ভরা মৌসুম। কাস্তের কচাকচ শব্দে মুখর মাঠের পর মাঠ। কোথাও ধান কাটছেন জমির মালিক, বাপ বেটা, নাতি পুতি, স্বামী স্ত্রী। কোথাও স্থানীয় কৃষি শ্রমিক। আবার কোথাও চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে আসা মৌসুমী শ্রমিকের দল। সমতলের অবহেলিত আদিবাসী সাওতাল সম্প্রদায়ের মেয়েরা আদি থেকেই কৃষি কাজ করে আসছেন। হররোজ হাটুঅব্দি শাড়ি পড়ে দলবেঁধে খেতের আইল বেয়ে হেঁটে চলা, পুরুষ শ্রমিকদের সাথে ধান কাটা, আঁটি বাঁধা, মাথায় করে বোঝা বওয়া, মাড়াই করা সব কাজই করেন তারা। একজন পুরুষের সমান তো বটেই, অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের চেয়ে তাড়াতাড়ি বেশি কাজ করেন তারা। কিন্তু আদি থেকেই মজুরি বঞ্চনার শিকার হয়েছেন কৃষিতে অবদান রাখা এই নারী শ্রমিকেরা। চোখের সামনেই একই সমান কাজ করেও বেশি টাকা নিয়ে যাচ্ছেন পুরুষেরা। এটা দেখেও কোন প্রতিবাদ করতে পারেননা তারা। ইদানিং অনেক এনজিও কাজ করছেন আদিবাসীদের উন্নয়নে। কিন্তু তাদের এ বৈষম্যের অবসানে এগিয়ে আসেনি কেউ। মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের দেবীপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, মহাদেবপুর-সরাইগাছী পাকা সড়কের পাশেই খেতে ধান কাটায় ব্যস্ত একদল নারী-পুরুষ। কাছে যেতেই বেশভূষায় চেনা গেল আদিবাসী সাওতাল নারীদের। জানতে চাইলে একে একে তারা তাদের নাম বললেন তিলতি কর্মকার, গিতা, মিনতি, রামন্তি ও লাকি। দেবীপুর গ্রামেই বাড়ি তাদের। সকাল থেকেই ধান কাটার কাজ করছেন তারা। সারাদিনের কাজের জন্য প্রত্যেকে মজুরি পান রোজ তিনশ’ টাকা। তাদের সাথে কাজ করছিলেন কয়েকজন শ্রমিক। রেজাউল, শরিফুল, মোস্তফা, সাগর ও হাসান। আদিবাসী নারীদের হাত পুরুষদের চেয়ে জোরে চলে, জানালেন রেজাউল। কিন্তু তারা একই কাজ করে মজুরি পান রোজ তিন’শ টাকা আর পুরুষ পায় চার’শ টাকা। কেন? মেয়ে মানুষ, তাই? জমির মালিক আল মামুন শ্রমিকদের সাথে ধান কাটছিলেন। জানালেন, তিন বিঘা জমিতে স্বর্ণা-৫ জাতের ধান লাগিয়েছেন। তেমন পোকা লাগেনি। ফলন হবে বিঘাপ্রতি ১৯/২০ মণ। কিন্তু মেয়েদের মজুরি কম কেন, এপ্রশ্নের কোন উত্তর তিনি দিতে পারেননি।