ধানের জেলা হিসেবে সারাদেশে পরিচিত দিনাজপুরে এবার অর্জিত ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৭৫ হেক্টর আমন ধানের মধ্যে ৮৩ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে কাটারী ভোগ সুগন্ধি ব্রি-৩৪ ধানের বাম্পার ফলন অর্জিত হয়েছে। অর্জিত আমন ধান থেকে সাড়ে ৭ টন চাল উৎপাদন হবে বলে কৃষি অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক প্রদীপ কুমার গুহ তার কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংএ এ তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সারা দেশে খাদ্যের জেলা হিসেবে দিনাজপুর পরিচিতি পেয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ হলো এই জেলায় সুগন্ধি কাটারী ভোগ চাল আন্তর্জাতিক বাজারে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশের প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতিনিধি হিসেবে কাটারীভোগ চাল সনদ পেয়েছে। ভৌগলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য হিসেবে এই সনদ দেয়া হয়েছে।
কৃষি বিভাগের সূত্রটি নিশ্চিত করেন, সুগন্ধি কাটারী ভোগ চাল বিশ্ব দরবারে জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার তথ্যটি সারাদেশে কৃষি বিভাগ প্রশংসিত হয়েছে। গত ১৭ জুন শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান পেটেন্ট ডিজাইন ও ট্রেড মার্ক অধিদপ্তর (ডিপিডিটি) কাটারী ভোগ চালের জন্য বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট জিআই সদন হস্তান্তর করেন।
সূত্রটি জানায়, দেশে এখন চালের সংকট কেটে গেছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদার বেশী সুগন্ধি চালের উৎপাদন হচ্ছে। এবারে জেলায় আমন ধান ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে হাইব্রিড ১০ হাজার ২৭৭ হেক্টর, উবশী ২ লাখ ৪৮ হাজার ১৯৫ হেক্টর এবং স্থানীয় জাতের ধান ২ হাজার ৪০৩ হেক্টর। এর মধ্যে উবশী জাতের ধানে কাটারী ভোগ সুগন্ধি ব্রি-৩৪ ৮৩ হাজার ২০ হেক্টরে অর্জিত হয়েছে। সব মিলিয়ে সাড়ে ৭ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেন।
সূত্রটি জানান, কাটারী ভোগ ব্রি-৩৪ ধানের ফলন এবার ২ দশমিক ৪ টন পার হেক্টরে অর্জিত হয়েছে বলে তিনি জানান। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবারে সুগন্ধি চালের নতুন ভ্যারাটি ব্রি ধান ৯০ একটি ভ্যারাইটি বের করেছে। এই ভ্যারাইটি ধান এবারে পরীক্ষামূলকভাবে দিনাজপুর ধান ও গম গবেশণা কেন্দ্রে ৫ হেক্টর জমিতে অর্জিত হয়েছে। অর্জিত ধানের ফলনও ভাল হয়েছে। এই ব্রি ধান ৩৪ সুগন্ধি ধান হলেও এর সুগন্ধি একটু কম তবে পোলাও ও ভাত খেতে খুবই সুস্বাদু বলে তিনি নিশ্চিত করেন।
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট রেজিস্ট্রর অতিরিক্ত সচিব আব্দুস সাত্তার নিশ্চিত করে জানান, এখন থেকে অন্য দেশে কাটারী ভোগ নিজের বলে দাবী করতে পারবে না। এসব জাত কোন দেশে চাষাবাদ ও সম্প্রসারণের জন্য উৎপাদিত হয় তা নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে। সেই সাথে স্বীকৃতির মাধ্যমে বিশ্ববাজারে কাটারী ভোগ চালের চাহিদা ও রপ্তানি বেড়ে গেছে। দেশের বাইরে থেকে কাটারী ভোগ চালের দাম এবারে গত বছরগুলোর তুলনায় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর বাড়ছে কাটারী ভোগসহ সুগন্ধি চালের চাহিদা।
জেলার অঞ্চল ভিত্তিক উপজেলাগুলোতে সুগন্ধি চালের অন্যান্য জাতও রয়েছে। জাতগুলোর মধ্যে চিনিগুড়া, কালোজিরা, কাটারী ভোগ অন্যতম। আমন মৌসুমে সুগন্ধি ধানের চাষ ব্যাপকভাবে হয়। এই মৌসুমে উৎপাদিত ধানের প্রায় ১০ শতাংশ সুগন্ধি জাতের ধান। প্রকৃতির কারনে এই অঞ্চলে কাটারী ভোগের ফলন ও গন্ধ বেশী হয়। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দিনাজপুর জেলায় সুগন্ধি ধানের আবাদ গত ১০ বছর ব্যবধানে ৩ গুণ বেড়ে গেছে। গত ২০১২-১৩ অর্থ বছরে জেলায় ৪১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সুগন্ধি ধানের আবাদ হয়েছে। তখন ফলন হয়েছিল ৮৭ হাজার টন চাল। এই ধারাবাহিকতায় এবারে জেলায় ৮৩ হাজার ২০ হেক্টর জমিতেত কাটারী ভোগের ধান অর্জিত হয়েছে। তিনি জানান, গত বছরে কাটারী ভোগে উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৬২১ হেক্টর জমিতে।
বিশ্ববাজারে কাটারী ভোগের চাল করোনার কারনে রপ্তানী বন্ধ থাকায় বাজারে কাটারী ভোগের চাল কৃষকেরা সঠিকভাবে মূল্য না পাওয়ায় চলতি বছর কাটারী ভোগের আবাদ ২৭ হাজার হেক্টর জমিতে কম হয়েছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকলে আগামী অর্থ বছরে এই জেলা দেড় লাখ হেক্টর জমিতে কাটারী ধানের আবাদ হবে বলে কৃষি অধিদপ্তর নিশ্চিত করেছে।
তিনি জানান, দিনাজপুরে ১০৪টি অটো রাইস মিলে কাটারী ভোগ ধানের মারাই কাজ বেশী হয়ে থাকে। এই চাল ব্যবসা করে অটোরাইস মিল মালিকরা প্রতিবছর অধিক মুনাফা অর্জন করে থাকে। এবারে মিল মালিকেরা কাটারী ভোগ মৌসুমের শুরু থেকেই ক্রয় করতে শুরু করেছে। ধানের মালিকের তাদের অর্জিত ধানের ভাল মূল্য পাচ্ছে বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।