শ্রমিক মৃত্যুর খবরটি গুজব হিসেবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিরপুর ১৩ নম্বর সেক্টরে মঙ্গলবার কয়েকজন পোশাক শ্রমিককে স্থানীয় দোকানিরা মারধর করে। এতে দুজন আহত হন। আহত একজন মারা গেছেন শুনে বিক্ষোভে নামে অন্য শ্রমিকেরা। প্রকৃত অর্থে দুজনই চিকিৎসাধীন। কেউ মারা যাননি। এক পোশাক শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পেয়ে রাজধানীর মিরপুরে রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে কয়েকটি গার্মেন্টের শ্রমিকেরা। এ সময় পল্লবীর ট্রাফিক জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় ও একটি পুলিশ বক্সে ভাঙচুর চালায় তারা। তবে শ্রমিক মৃত্যুর খবরটি গুজব হিসেবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তাদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মিরপুর ১৩ নম্বর সেক্টরে মঙ্গলবার কয়েকজন পোশাক শ্রমিককে স্থানীয় দোকানিরা মারধর করে। এতে দুজন আহত হন। আহত একজন মারা গেছেন শুনে বিক্ষোভে নামে অন্য শ্রমিকেরা। প্রকৃত অর্থে দুজনই চিকিৎসাধীন। কেউ মারা যাননি। গতকাল বুধবার সকাল থেকে মিরপুর ১০ থেকে কাফরুল থানা সড়কে বিক্ষোভে নামে পোশাক শ্রমিকরা। কাফরুল থানায় ইট পাটকেল ছুড়ে তারা। ভাঙচুর চালানো হয় মিরপুর ১০ ট্রাফিক পুলিশ বক্সে। দুপুর ১টার দিকে দেখা যায়, মিরপুর ১০ থেকে ১৩ নম্বর সেক্টর হয়ে ক্যান্টনমেন্টে প্রবেশের আগ পর্যন্ত পুরো সড়কজুড়েই ইটের টুকরা ছড়িয়ে আছে। মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থান। শ্রমিকরা অবস্থান নিয়ে আছেন ১৩ নম্বর সেক্টরের সামনে। দুপাশে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। লাঠি, কাঠের টুকরা, লোহার পাইপ নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে অন্তত পাঁচটি পয়েন্টে শ্রমিকদের অবস্থান ছিল। পুলিশ দেখলেই ঢিল ছুড়েছে। তবে পুলিশ লাঠিচার্জ বা কোনো একশনে যায়নি। রাজন নামে ভিশন গার্মেন্টের একজন শ্রমিক বলেন, ‘বেতন ১০ শতাংশ বাড়ানোর দাবিতে আমরা তিনদিন ধরে আন্দোলন করছিলাম। কালকে বিকেলে আমাদের দাবি মেনে নেয়ার আস্বাস দেন মালিকরা। এরপর আমাদের ওপর হামলা করছে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা। হামলায় আমাদের শ্রমিক মারা গেছে।’ কে মারা গেছে, তা নাম কি? জানকে চাইলে রাজন নাম বলেন, ‘লালন নামে একজন।’ তখন পাশ থেকে একজন নারী শ্রমিক বলেন, ‘লালন মারা যায়নি। ও বাসায় আছে।’ তাহলে কে মারা গেছে এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি মিরপুর ১৩ সেক্টরের সামনে বিক্ষোভে থাকা শ্রমিকরা। শ্রমিক হত্যার তথ্য জানাতে না পারলেও পুলিশের ওপর চড়াও হওয়া এবং স্থাপনায় ভাঙচুরের বিষয়ে শ্রমিকরা জানান, গতকাল ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা যখন শ্রমিকদের মারধর করে তখন পুলিশ চুপ ছিল, ফেরায়নি। এর জেরে আজ ভাঙচুর। এমডিএম গার্মেন্টের এক নারী শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘কালকে মালিকরা আমাদের দাবি পুরো মানেনি। বলছে, আশপাশের গার্মেন্টগুলো বেতন বাড়ালে তারাও বাড়াবে। এই কথা শুনে অনেক শ্রমিক রাস্তা থেকে সড়ে যাচ্ছিল। তখন একদল সন্ত্রাসী লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। শ্রমিকদের কয়েকজনকে মেরে গুরুতর আহত করে। এর প্রতিবাদে আজকে তারা রাস্তা অবরোধ করেছেন।’ তবে পুলিশ বলছে, ভাড়াটে সন্ত্রাসী নয় স্থানীয় দোকানিরা শ্রমিকদের মঙ্গলবার মারধর করেছে। কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরেই শ্রমিকরা তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে সড়ক অবরোধ করছিল। আমরা কোনো ধরনের অ্যাকশনে যাইনি। বুঝিয়ে সড়ানোর চেষ্টা করেছি। আজকেও রাস্তা অবরোধ করেছে। শ্রমিকদের একজন নাকি মারা গেছে। আমরা দুজন আহতের খবর পেয়েছি। গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে তাদের চিকিৎসা হচ্ছে। মৃত্যুর খবরটি গুজব।’ এই গুজব রাজনৈতিক ইন্দনে ছড়ানো হয়েছে বলে মনে করছেন পুলিশ কর্মকর্তা হাফিজুর। তিনি বলেন, ‘গুজব ছড়িয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চলছে। গার্মেন্টেসের শ্রমিক নয় এমন অনেক লোক লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় নামতে দেখা গেছে। ‘আমার মনে হয় এর পেছনে রাজনৈতিক ইন্দন থাকতে পারে। নয়তো কেন বিনা উসকানিতে থানা ও পুলিশ বক্সে হামলা হবে। কাফরুল থানায় ইট ছোড়া হয়েছে। ভাঙা হয়ে ১০ নম্বর ট্রাফিক বক্স। আমরা খুব সহনীয় থেকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।’