আন্দোলনের মধ্য দিয়েই এই সরকারকে বিদায় করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ হোন। মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধারের জন্য, দেশনেত্রীকে মুক্তির জন্য তরুণ-যুবকদের জেগে উঠতে হবে। তরুণ ও যুবকদের ছাড়া এদেশে কোনো আন্দোলন হয়নি। অবশ্যই এই সরকারকে সরাতে হবে। একটি নিরেপক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে এই সরকাকে বাধ্য করা হবে। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার দাবিতে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারকে বিভিন্ন দেশ থেকে চাপ দিয়েছে। সরকার মিথ্যা কথা বলছে। আপনারা জনগণের সাথে প্রতারণা করছেন। আপনারা বলছেন আইনের কারণে বেগম জিয়াকে বিদেশে যেতে দেয়া হচ্ছে না। আপনারা মিথ্যা কথা বলছেন। আইন অনুযায়ী বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানো যায়। বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে আপনাদের (সরকার) কোনো দিনও মাফ করবে না দেশের জনগণ। তিনি বলেন, এক হাজার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়েছে। অর্ধেক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ হেরে গেছে। পতন শুরু হয়ে গেছে। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বাক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাজাহান ওমর, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তৈমুর আলম খন্দকার, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকন প্রমুখ।
আইন নয়, খালেদার বিদেশে চিকিৎসায় বাধা সরকার: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, উন্নত চিকিৎসার জন্য বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে আইনি কোনো বাধা নেই। বাধা হচ্ছে বর্তমান সরকার। গতকাল মঙ্গলবার ( ৩০ নভেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রামের বাকলিয়া কালামিয়া বাজারের কে বি কনভেনশন হল সংলগ্ন মাঠে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশ নিয়ে সুচিকিৎসার দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। আমাদের নেত্রীকে যে কোনো সময় বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারে সরকার। চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে আইন নয় প্রকৃত বাধা এ সরকার। মোশাররফ হোসেন বলেন, সরকার খালেদার জিয়ার জনপ্রিয়তায় ভীত হয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে একটি বানোয়াট মামলায় কারাগারে রেখেছে। খালেদা জিয়ার সাজা অস্থায়ীভাবে স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত করার ব্যাপারেও সরকার শর্ত দিয়েছে। শর্ত হচ্ছে, খালেদা জিয়া বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন না। এই শর্ত মানবাধিকার বিরোধী শর্ত। এ শর্ত সংবিধান মোতাবেক মৌলিক অধিকার খর্ব করার শর্ত।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে একটি বানোয়াট মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। অনেক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, খালেদা জিয়ার বিদেশ যাত্রা আইনে নেই। আবার কেউ কেউ বলেন রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন কারা করে, এটা বিএনপির সাধারণ একজন কর্মীও জানে। আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকে সবক দিতে হবে না। সত্যিকারের কেউ দোষী হলে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা চায়। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়া কোনো দোষ করেননি। তিনি দোষী নয়। তাকে গায়ের জোরে সরকারের নির্দেশে ভুয়া মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে। দোষী না হয়ে, দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে কেন ক্ষমা প্রার্থনা করবেন? অপরাধ না করে অপরাধ স্বীকার করার নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নন।
মোশররফ বলেন, বেগম খালেদা জিয়া কখনো অপস করেননি। তাই রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করার কোনো প্রশ্নই উঠে না। বেগম খালেদা জিয়া এ দেশে আপসহীন নেত্রী। আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো দিনও তার মুক্তির জন্য আবেদন করব না। আমরা আইনি লড়াইয়ে আছি। তাকে শর্ত দিয়ে সাজা স্থগিত করেছে সরকার। শর্ত বাতিল করে খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা করুক সরকার।
তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার ক্ষেত্রে সরকার বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেই বাধা দূর করেন। কোনো রকমের অনুকম্পা, দয়ার দরকার নেই। আপনারা যে বাধা সৃষ্টি করে রেখেছেন তা অপসারণ করেন। খালেদা জিয়াকে বিনাশর্তে মুক্তি দেন। আর যদি মুক্তি না দেন সারাদেশে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
তিনি বলেন, ঐক্যবদ্ধভাবে সরকারকে একটা ধাক্কা দিতে হবে। একটা ধাক্কা দিতে পারলেই এ সরকারের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। কারণ এই সরকারের কোনো ভিত্তি নেই। তাই সরকারকে বলতে চাই, খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার ব্যাপারে যে বাধা সৃষ্টি করে রেখেছেন তা অপসারণ করেন। সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মো. নাছির উদ্দীন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খন্দকার, কেন্দ্রীয় বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেনের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়।