করোনা ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্কিত (প্যানিক) না হয়ে প্রস্তুতি নেয়ার পরামর্শ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। শুক্রবার এর শীর্ষ বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথান এক সংবাদ সম্মেলনে এমন আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এক বছর আগের চেয়ে পরিস্থিতি এখন অনেক ভিন্ন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৪০টি দেশে শনাক্ত হয়েছে ওমিক্রন সংক্রমণ। প্রাথমিকভাবে একে অধিক মাত্রায় সংক্রামক বলা হয়েছে। আরও বলা হয়েছে টিকার কর্যকারিতাকে অতিক্রম করে আক্রমণ করতে পারে ওমিক্রন। তবে এ বিষয়ে সর্বজন স্বীকৃত তথ্য এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। উপরন্তু এ বিষয়ে তথ্য দিতে বিজ্ঞানীরা দু’সপ্তাহের মতো সময় চেয়েছেন। এ অবস্থায় ড. সৌম্য স্বামীনাথান দক্ষিণ আফ্রিকার ডাটার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছেন, এই ভ্যারিয়েন্ট উচ্চ মাত্রায় সংক্রামক। এমনও হতে পারে যে, বিশ্বজুড়ে প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে এই ভ্যারিয়েন্ট। তবে এ বিষয়ে পূর্বাভাস দেয়া কঠিন। বর্তমান বিশ্বে যে পরিমাণ মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত তার মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট।
ড. সৌম্য স্বামীনাথান বলেন, আমাদের কতটা উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত? এ প্রশ্নের উত্তরে বলতে হয়- আতঙ্কিত নয়, আমাদের উচিত প্রস্তুতি ও পূর্ব সতর্কতা অবলম্বন করা। অন্যদিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইমার্জেন্সি বিষয়ক পরিচালক মাইক রায়ান বলেছেন, কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে উচ্চ মাত্রায় কার্যকর টিকা বর্তমানে বিশ্বে আছে। এখন দৃষ্টি দিতে হবে তা আরো ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দেয়ার দিকে। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের ক্ষেত্রে এই টিকা দেয়ার নীতি পরিবর্তনের কোনো প্রয়োজন নেই এখনও।
ওদিকে দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম শনাক্ত হওয়া ভ্যারিয়েন্টের কারণে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে যেকোনো বিদেশির সফরের ক্ষেত্রে ভ্রমণ শুরুর সর্বোচ্চ একদিন আগে করোনা পরীক্ষা করার বাধ্যবাধকতা দিয়েছেন কর্মকর্তারা। ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে কর্তৃপক্ষ যুক্তরাষ্ট্রে যে বিধিনিষেধ দিয়েছে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এই নির্দেশনা তারই অংশ। এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের কমপক্ষে ৬টি রাজ্যে শনাক্ত হয়েছে ওমিক্রন। এর মধ্যে হাওয়াইতে যাদের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে তাদের সা¤প্রতিক সময়ে বিদেশ সফরের ইতিহাস নেই। ভারতে ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন দু’জন। কর্তৃপক্ষ বলেছে, তাদের একজন ৬৬ বছর বয়স্ক। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার নাগরিক। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে তিনি সফরে এসেছিলেন। এরই মধ্যে তিনি ভারত ত্যাগ করেছেন। অন্যজন দক্ষিণের রাজ্য ব্যাঙ্গালুরুর ৪৬ বছর বয়সী একজন চিকিৎসক। বিদেশ সফরের কোনো সা¤প্রতিক ইতিহাস নেই তার। এ বছর এপ্রিল, মে মাসে ভারতে দ্বিতীয় ঢেউ সংক্রমণ দেখা দেয়। তখন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভয়াবহভাবে ভেঙে পড়ে। হাসপাতালগুলোতে বেড, অক্সিজেন ও ওষুধের তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়। মানুষ বেড না পেয়ে হাসপাতালের বাইরে গাড়িতে, তাঁবুতে অবস্থান নিয়ে চিকিৎসা নিতে থাকেন। ওদিকে ইউরোপেও দেখা দিয়েছিল মারাত্মক সংক্রমণ। এবারও ইউরোপের অনেক দেশে সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। ক্রমশ বাড়ছে তা। তার মধ্যে ওমিক্রন এসে চোখ রাঙাচ্ছে। যারা টিকা নেননি তাদের বিরুদ্ধে বড় রকমের বিধিনিষেধ বৃহস্পতিবার ঘোষণা করেছে জার্মানি। বলা হয়েছে, যারা পূর্ণ ডোজ টিকা নিয়েছেন অথবা ভাইরাস সংক্রমণ থেকে স¤প্রতি মুক্তি পেয়েছেন, শুধু তারাই রেস্তোরাঁ, সিনেমা এবং শপিংয়ে যেতে পারবেন। চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মারকেল বলেছেন, ফেব্রুয়ারির মধ্যে টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করা হবে। প্রতিবেশী অস্ট্রিয়া ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা নেয়া বাধ্যতামূলক করেছে অধিবাসীদের জন্য।