বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫০ বছরের সম্পর্কের ভিত্তিতে আগামী দিনগুলোতে কীভাবে আরও সম্পর্কোন্নয়ন করা যায়Íতা নিয়ে ঢাকা সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে আলোচনা করেছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। গতকাল মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস অ্যাকাডেমিতে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন দুই প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্র সচিব। কোভিড পরিস্থিতি যৌথভাবে মোকাবিলার ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ কখনোই নিরাপদ থাকবে না, যদি ভারত নিরাপদ না থাকে এবং একই কথা ভারতের জন্যও প্রযোজ্য।’
মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বহুমাত্রিক ইস্যু রয়েছে এবং পেন্ডিং ইস্যুগুলো কীভাবে দ্রুত সমাধান করা যায়Íতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি চলতি বছর মার্চে ঢাকা সফর করেছেন এবং ভারতের রাষ্ট্রপতিও এ মাসেই ঢাকা সফর করবেন। এটি (একই বছরে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কোনও দেশে সফর) একটি ‘রেকর্ড’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সোমবার বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী দিবস যৌথভাবে পালন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এখন স্বর্ণযুগ চলছে। সামনের দিনগুলোতে কানেক্টিভিটি, গ্রিন এনার্জি, টেকনোলজিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে কীভাবে অগ্রসর হতে পারি সেটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ সীমান্ত কীভাবে করা যায় এবং বাণিজ্য কীভাবে বাড়ানো যায় সেটি নিয়েও আলোচনা হয়েছে।’ এসময় ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রীংলা বলেন, ‘আমার সঙ্গে পররাষ্ট্র সচিবের কথা হয়েছে এবং আমি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে দেখা করবো। এছাড়া আগামীকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও দেখা করবো।’
শেখ হাসিনার ভারত সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মার্চ সফরের সময়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। আমরা ডিপ্লোমেটিক চ্যানেলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করছি। বর্তমানে চলাচলে বাধা, কোভিড পরিস্থিতি বা ওমিক্রন (আলোচনায়) রয়েছে, তবে আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সফরের জন্য অপেক্ষা করছি।’
তিনি বলেন, ‘ডিসেম্বর মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সৈন্য ও বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা একসঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। এ ধরনের ঘটনা সারা বিশ্বে বিরল ‘ শ্রিংলা বলেন, ‘আমরা আলোচনা করেছি এবং দেখেছি আমাদের মধ্যে তেমন মতবিরোধ নেই। আমরা যেসব বিষয়ে সহযোগিতা করতে পারি; যেমন গ্রিন এনার্জি, ডিজিটাল সহযোগিতাসহ অন্যান্য বিষয়Í যা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কর্মসংস্থানে কাজে আসবে। কানেক্টিভিটি নিয়ে এরইমধ্যে অনেক ভালো সহযোগিতা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, ইতোমধ্যে ভারতের সঙ্গে পুরনো ছয়টি রেল কানেক্টিভিটির মধ্যে পাঁচটি পুনঃস্থাপন করা হয়েছে এবং আরেকটি সামনের বছর হবে।
দু’দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা দু’দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন। মঙ্গলবার সকালে তিনি ঢাকায় পৌঁছান। সফরকালে তিনি পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আবদুল মোমেনের সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আগামী ১৫ থেকে ১৭ ডিসেম্বর ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোভিন্দের ঢাকা সফরের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হবে।
এ ছাড়া আগামী ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ দেয়ার সম্ভাবনা নিয়েও আলাপ হবে। প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির একটি আমন্ত্রণপত্র প্রধানমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করবেন শ্রিংলা। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের আমন্ত্রণে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাথ কোভিন্দ বাংলাদেশ সফরে আসছেন। এর আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গত ২৬ ও ২৭ মার্চ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঢাকা এসেছিলেন।
রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর রাম নাথ কোভিন্দের এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। এ ব্যাপারে গতকাল ভারতের পররাষ্ট্র দফতরের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বিজয় দিবসের উদযাপনে যোগ দিতে ভারতের রাষ্ট্রপতি ঢাকা যাচ্ছেন। এটা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের প্রতি দুই দেশের উচ্চ পর্যায়ের অগ্রাধিকারের প্রতিফলন। এটি বহুমুখী ও অপরিবর্তনীয় অংশীদারিত্বকে আরো শক্তিশালী করার দুই দেশের ইচ্ছার প্রতিফলন। ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বন্ধন, পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ওপর এই অংশীদারিত্বের ভিত্তি রচিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশ ও ভারত শীর্ষ পর্যায়ের সফর বিনিময় জোরদার করেছে। ১৯৭১ সালে স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি দেয়া উপলক্ষে ঢাকা ও দিল্লিসহ বিশ্বের ১৮টি শহরে যৌথভাবে ‘মৈত্রী দিবস’ পালন করা হচ্ছে।