মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে পুলিশ প্রধান, র্যাব প্রধানসহ সাতজনের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ঘটনা দেশের জন্য চরম লজ্জার বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘কী লজ্জা; আমাদের পুলিশ প্রধান, আমাদের র্যাব প্রধান তাঁদের যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটা দেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। কী কারণে এই নিষেধাজ্ঞা, তাঁরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছেন। বেআইনিভাবে মানুষকে হত্যা করেছেন। সুতরাং জনগণের কাছে এর জবাব তো দিতেই হবে।’ গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) নামের একটি রাজনৈতিক সংগঠনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা জানান।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে র্যাবের সাবেক ও বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট (রাজস্ব বিভাগ) ও পররাষ্ট্র দপ্তর। গতকাল শুক্রবার পৃথকভাবে এই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে মার্কিন এই নিষেধাজ্ঞার খবরে ‘বিস্মিত হননি’ বলে জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুলিশ প্রধান ও র্যাব প্রধানের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এটাকে আমি চমক মনে করি না। আমি মনে করি, এটি অবশ্যম্ভাবী পরিণতি। এটাই তাঁদের পরিণতি। এই ধরনের যাঁরা মানবাধিকার লঙ্ঘন করেন, যাঁরা মানুষের অধিকার কেড়ে নেন, যাঁরা জনগণকে হত্যা করেন, তাঁদের পরিণতি এমনই হয়।’ যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে না ডাকা লজ্জার বলে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এত দিন ধরে বলে আসছি, বাংলাদেশে মানবাধিকার হরণ করা হচ্ছে। আমরা বলেছি, এখনো বলছি, এই সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে, পুলিশকে ব্যবহার করছে। প্রশাসনকে ব্যবহার করে নির্মমভাবে মানুষকে হত্যা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে ডাকাও হয়নি। এটাও লজ্জার।’
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের মনে রাখা উচিত, তাঁরা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী–কর্মকর্তা। তাঁরা কোনো ব্যক্তি বা দলের কর্মকর্তা নন। সংবিধানের বাইরে গিয়ে দায়িত্ব পালন করা তাঁদের দায়িত্ব নয়। যদি কেউ সেই কাজ করেন, তাহলে একদিন না একদিন পরিণতি ভোগ করতে হবে। আমরা জানি, কারা হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে বেগম পাড়ায় বাড়ি বানাচ্ছে। একদিন ওই সম্পদ আপনারা ভোগ করতে পারবেন না।’ দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে সরকার পতনের হুঁশিয়ারি দিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমি আশা করব, সব রাজনৈতিক দল ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হবে। ঐক্যবদ্ধভাবে এই সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভয়াবহ দানবীয় সরকারকে পরাজিত করতে হবে।’
খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের প্রতীক অভিহিত করে মির্জা ফখরুল জানান, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া একা নন, সমস্ত জাতি তাঁর সঙ্গে আছে। তিনি হচ্ছেন সার্বভৌমত্বের প্রতীক, গণতন্ত্রের প্রতীক। এই সরকারকে পরাজিত করতে হবে। খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে সুচিকিৎসা করিয়ে আনতে হবে।
আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম (বীর প্রতীক), ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক, এনপিপির মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ।