রবিবার, ২৬ মে ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের নিচে নেমে গেছে চালের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি উপকূলের উন্নয়নে জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দের দাবি চিকিৎসা শেষে সস্ত্রীক দেশে ফিরলেন আব্বাস ডিসি-ইউএনওদের দামি গাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয় : অধ্যাপক ড. ওয়াহিদউদ্দিন সরকারের ক্ষমতার পেরেক যেকোনো সময় ভেঙে যাবে : রিজভী কুমিল্লায় ডা. আবু নাঈমের বাগানের কচুরিপানা দর্শনার্থীকে বিমোহিত করে কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীকে জেলে পাঠানোর এজেন্ডা নেই: ওবায়দুল কাদের সরকারি চাকরি নিয়ে এখন সামাজিকমাধ্যমে ট্রল হয়: শিক্ষামন্ত্রী ত্রিভুজ-চতুর্ভুজ বাদ: নতুন কারিকুলামে ৭ ধাপে মূল্যায়ন, সবচেয়ে ভালো ‘অনন্য’ কুমিল্লার দৌলতপুরেই ১৬০টি গান ও ১২০টি কবিতা লিখেছেন কবি নজরুল

স্বাধীনতার মুক্তাঞ্চল রৌমারী

শওকত আলী মন্ডল রৌমারী (কুড়িগ্রাম) :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১

এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম। প্রত্যেক গ্রামে পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলো। এর পর আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি, তোমাদের যার যা আছে তাই দিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে প্রস্তত হও। ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিবো। তবু বাংলাকে স্বাধীন করে ছারবো ইনশাআল্লাহ। ২৫ মার্চের রাতে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ছিলেন। এ দেশের সারা বাংলার মানুষ যখন বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষনা পাওয়ার পর থেকেই বাঙালীর প্রান জেগে উঠলো। সেই থেকেই রৌমারীর কৃষক, শ্রমীকসহ বিভিন্ন শ্রেণীর পেশার মানুষ রৌমারী মুক্তাঞ্চল রেখে এবং সারা বাঙলা স্বাধীন করার লক্ষে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। সেই থেকেই শুরু হয় ৫ টি ইউনিয়নে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করে রৌমারী, চিলমারী থানার নির্বাচিত এমএলএ সাদাকাৎ হোসেন ছক্কু মিয়া, এমএনএ নূরুল ইসলাম পাপু মিয়ার নেতৃত্বে একটি সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। এতে নেতৃত্বদেন নূরুল ইসলাম পাপু মিয়া, সাদাকাৎ হোসেন চক্কু মিয়া, আজিজুল হক সরকার, সরকার নূরুল ইসলাম, ফজলুল হক খাঁন, নিবারন সাহা, নওশের আলী আকন্দ, দিদার মোল্লাহ, চেয়ারম্যান মতিউর রহমান ভাষা সৈনিক রুস্তম আলী দেওয়ানসহ আরো নাম না জানা অনেকেই। রৌমারী, রাজিবপুর ও চিলমারী মুক্তিযুদ্ধের ১১ নং সেক্টর ছিল। ১১ নং সেক্টরের খন্ড কালিন নেতৃত্বে ছিলেন জেডফোর্স কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান ও সেক্টর কমান্ডার হামিদুল্লাহ খাঁন। পরে আরো ছিলেন, সুবেদার আলতাফ হোসেন, সুবেদার করম আলী প্রমুখ। সংগ্রাম পরিষদ নেতৃত্বে রৌমারী সিজি জামান উচ্চ বিদ্যালয়, যাদুরচর উচ্চ বিদ্যালয় ও টাপুরচর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রায় ৬৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে ট্রেনিং গ্রহন করে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যুদ্ধে অংশ গ্রহন করেন। ঐ সময় পাক হানাদার বাহিনী গানবোর্ড নিয়ে কয়েক দফা চেষ্টা করেছেন রৌমারী, রাজিবপুর, সানন্দবাড়ী দখল করে নেওয়ার জন্য এবং আর্টিলারি ফায়ার থেকে শুরু করে এমন কোন প্রচেষ্টাবাদ দেয়নি এ মুক্তাঞ্চল দখলে নেয়ার জন্য। কিন্তু রৌমারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের দুর্বার প্রতিরোধের মুখে পাক হানাদার বাহিনী ঢুকতেই পারেনি। বীরমুক্তিযোদ্ধাগণ রৌমারী রাজিবপুরকে মুক্তই রেখে ছিল যুদ্ধের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং এর জন্য একটি চাঁনমারী নির্মান করা হয় যা কালের স্বাক্ষী হিসাবে এখনো দাড়িয়ে আছে। পরবর্তীতে যার বক্ষতে একটি শহীদ মিনার নির্মান করা হয়েছে। মুক্তাঞ্চল হিসাবে রৌমারীতে মুজিব নগর সরকারের সকল প্রকার কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। এখানে কাস্টমস অফিস, থানা, সিও অফিস, সাব-রেজিষ্ট্রার অফিস, খাদ্য অফিস, শিক্ষা অফিস, হাসপাতাল, সমবায় ও পল্লী উন্নয়ন অফিসসহ সকল অফিসের কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছিল। এ অঞ্চলের সর্বস্তরের মানুষ বীরমুক্তিযোদ্ধাদের সকল প্রকার সহযোগীতা করেছেন। এখানে পুরুষদের সাথে তাল মিলিয়ে যুদ্ধ করে ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সহীয়সী নারী তারামন বিবি বীর প্রতীক। মুক্তিযুদ্ধের সময় রৌমারী ৯ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন শহীদ আবু আসাদ, শহীদ আবুল হোসেন, শহীদ আব্দুল বারী, শহীদ আব্দুল লতিফ, শহীদ আব্দুল হামিদ, শহীদ আব্দুল মজিদ, শহীদ কছিবর রহমান, আব্দুল আজিজ খন্দকার ও শহীদ বদিউজ্জামান। স্বাধীনতার যুদ্ধকালীন সময় স্বাধীন বাংলার পতাকা এখানে কখনোই নমিত হয়নি। এ মাটিতে সর্ব প্রথম স্বাধীন বাংলার বেসামরিক প্রশাসন চালু করা হয়েছিল এবং রৌমারীতে অবস্থান নিয়ে আমেরিকার টেলিভিশন এনবিসি এর টিম ঃযব পড়ঁহঃৎু সধফব ভড়ৎ ফরংধৎঃবৎ ধহফ ফধঃব ষরহব নধহমষধফবংয নামক দুটি সম্প্রচার প্রামান্য চিত্র তৈরী করেছিল, যা বিভিন্ন দেশে সম্প্রচারের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধকে বেগবান করেছিল। এ মাটিতেই স্বাধীন বাংলার প্রথম মুক্তিফৌজ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছিল। রৌমারী থেকেই স্বাধীন বাংলার সাপ্তাহিক মুখপত্র অগ্রদূত আজিজুল হক সরকারের সম্পাদনায় সাদাকাৎ হোসেন ছক্কু মিয়া এমএলএ ও নুরুল ইসলাম পাপু মিয়া এমসিএর ব্যবস্থাপনায় পৃষ্ঠপোষকতায় প্রকাশিত হতো। যার ফলশ্রুতিতে গত ৩১ আগষ্ট ২০২১ অর্ধ শতাব্দী উপলক্ষে একটি ভ্রাম্যমান প্রদর্শনীও হয়েছে। রৌমারীতে সিও অফিসে বসে প্রথম শ্রেণীর মেজিষ্ট্রেড (এসডিও) আব্দুল লতিফের মাধ্যমে কুড়িগ্রাম মহুকুমা চালু করা হয়েছিল এবং সেই সিও হলরুমটিতে বিচারকার্য পরিচালনার জন্য কোর্টে রূপান্তর করা হয়েছিল। আগষ্টের দিকে মেজর আবু তাহের মুজিব নগর সরকার কর্তৃক ১১ নং সেক্টরের কমান্ডার হিসাবে ভারপ্রপ্ত দায়িত্ব নিয়ে রৌমারী বেসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থাকে জোরদার করেন। ইউনিয়ন কাউন্সিল গুলিতে রিলিফ কমিটি হিসাবে চেয়ারম্যান মেম্বার মনোনয়ন পুনরুজ্জীবিত করে প্রশাসনকে সাহায্য করার জন্য উপদেষ্টা পরিষদ গঠন এবং চালু করা হয়েছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়, চিঠি পত্র আদান প্রদানের জন্য চালু হয়েছিল পোষ্ট অফিস। বেসামরিক প্রশাসন ও মুক্তিফৌজের অর্থের প্রয়োজন মেটানোর জন্য হাট-বাজার থেকে টোল আদায়, আমদানী রফতানির কর আদায়, জমির খাজনা আদায় ও জমি বিক্রয় রেজিষ্ট্রেশন ফি করার ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। এ জেলায় প্রথম শহীদ মিনার নির্মিত হয়েছিল শহীদ স্মৃতি ক্লাবের সামনে, তা আজোও চেয়ে আছে স্বাধীনতার স্মৃতি হিসাবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, রৌমারী অঞ্চলটি অদ্যবধি মুক্তাঞ্চল হিসাবে সরকারী স্বীকৃতি পায়নি। মুক্তাঞ্চল হিসাবে রৌমারী রাজিবপুর উপজেলাবসী দীর্ঘদিন থেকেই বিভিন্ন ভাবে জোরালো দাবী জানিয়ে আসছে। স্বীকৃতি পেলে একদিকে ইতিহাসে যেমন কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে অন্যদিকে শহীদ ও জীবিত মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মা শান্তি পাবে। স্বাধীন বাংলার সার্বক্ষণিক মুক্তাঞ্চল রৌমারী রাজিবপুর উপজেলার জনগণ সকল বিষয়ের উপর শ্রম দিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে জয়ের জন্য এগিয়ে দিয়েছিল সেই মুক্তাঞ্চলটি আজও অবহেলিত। উন্নয়নের ছোয়া থেকে অনেকদুর পিছিয়ে। এই বিশাল মুক্তাঞ্চল এলাকাটি আনুমানিক ১ হাজার বর্গমাইল। লোক সংখ্যা প্রায় ৬ লক্ষাধীক। একজন জীবন বাজির সম্মুখ মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে একাত্তুরের বঙ্গবন্ধু বর্তমান জাতির পিতা শেখ মুজিবুরের যোগ্য উত্তরাধিকারী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে মুক্তঞ্চল রৌমারীবাসীর ত্যাগের স্বীকৃতি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে মুক্তাঞ্চল রৌমারীর একটি অধ্যায় সংযোজন করে মৌলিক অধিকারসহ মুজিব নগরের সমমর্যাদা প্রদানের মধ্যদিয়ে মুক্তাঞ্চলটিকে মুক্তাঞ্চলের স্বীকৃতিসহ রৌমারী রাজিবপুর, চিলমারী, উলিপুর উপজেলার পূর্বাংশ, দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার উত্তরাংশ সানন্দবাড়ী এবং গাইবান্দার পূর্বাংশ মিলে রৌমারীকে জেলায় রুপান্তরিত করে উন্নয়নের সকল পথকে সুগোম করে পুরন করার দাবী এলাকাবাসীর।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com