বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ০১:১৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম ::
দীঘিনালায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত ভ্যান-ঠেলাগাড়ি দিয়ে এইচএসসি কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীরা বরিশালে নদীতে চলছে ‘বিমান’ বেনাপোলে ভারতীয় ট্রাক থেকে ফেনসিডিলসহ চালক গ্রেফতার কিডনি বিকল হতে যাওয়া রিকশাচালক সিরাজুলকে বাঁচাতে সাহায্যের আবেদন ডোমারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল আলম (বিপিএএ)’র বিদায় সংবর্ধনা নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক পেলেন শুদ্ধাচার পুরস্কার বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল হাসপাতালের ১০ লিফটের ৮টিই অচল মাদারগঞ্জে বিক্ষোভ ও হরতাল ঘোষণা : চেয়ারে বসার একদিন আগে উপজেলা চেয়ারম্যান কারাগারে মাইজভান্ডারী গাউছিয়া হক কমিটি কেন্দ্রীয় পর্ষদের সাংগঠনিক সংলাপ উপলক্ষে প্রস্তুতি সভা দুর্গাপুরে বঙ্গববন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা

ভালুকায় শিল্পবর্জ্য ও বালু উত্তোলন করায় খিরু নদী যেনো মরা খাল

বিল্লাল হোসেন ভালুকা (ময়মনসিংহ) :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২১

ময়মনসিংহের ভালুকা পৌরএলাকায় নদীর পাড়ে অবস্থিত শেফার্ড ও গ্লোরী ডায়িং ফ্যাক্টরীসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠা শতাধিক কারখানার বিষাক্ত ও দূষিত বর্জ্যের কারণে এবং বালু ব্যবসায়ীদের তান্ডবে খিরু নদীটি বর্তমানে মরা খালে পরিনত হয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তদারকি না থাকায় এবং তাদের রহস্যজনক নিরবতার কারণে অধিকাংশ কারখানার বিরুদ্ধে ইটিপি বন্ধ রাখার অভিযোগ উঠেছে। ফলে নদী ও খাল বিলের প্রবাহমান বজর্য আলকাতরার ন্যায় কালো বর্ণধারণ করে সর্বত্রই দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে মানুষ পেটের পিড়া ও চর্মরোগসহ নানা ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পাশাপাশি জনস্বাস্থ্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। খোজঁ নিয়ে খিরু নদী ও বিভিন্ন খাল-বিলপাড়ের লোকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ৯০ দশকের আগে পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহি খিরু নদীটি ছিল নাব্যতায় পরিপূর্ণ। এই নদী দিয়ে বড় বড় বর্জা নৌকা এমনকি বিশাল আকারের লঞ্চ চলাচল করতো। এলাকার হাজার হাজার লোক এই নদীতে মাছ শিকার করে তাদের পরিবার পরিজনের চাহিদা মিটিয়ে ও বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতো। আশপাশের কয়েক এলাকার জনসাধারণের চলাচলের একমাত্র পথ ছিল খিরু নদীতে নৌকার যান। ভাটি এলাকার শ্রীপুর উপজেলার কাওরাইদ ও বরমী বাজার থেকে অত্র এলাকার ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পণ্য কিনে এই নদী দিয়ে নৌকার মাধ্যমে মালামাল পরিবহণ করে এলাকার বিভিন্ন চাহিদা মিটিয়ে আসছিল। কিন্তু ৯০ দশকের পর থেকে ভালুকার বিভিন্ন এলাকায় অপরিকল্পিত মিল কারখানা স্থাপনের পর থেকে কারখানার বিষাক্ত বজর্য ও পলি জমে এমনকি বর্তমানে এক শ্রেণীর কতিপয় বালু ব্যবসায়ীর তান্ডবে ঐতিহ্যবাহি এই খিরু নদীটি ভড়াট হয়ে সরু খালে পরিনত হয়েছে। বর্তমানে এ অঞ্চলে প্রায় অর্ধশতাধিক ডায়িং ফ্যাক্টরীর বর্জ্য শোধন যন্ত্র (ইটিপি) বন্ধ রেখে তাদের বিষাক্ত বর্জর‌্য লাউতি ও বিলাইজুড়িসহ বিভিন্ন খাল বিল হয়ে এই খিরু নদীতে এসে পড়ছে। তাছাড়া বেশ কয়েক বছর ধরে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নদীর দু’পাড়ে বালু স্তুপাকারে রেখে ব্যবসা করার কারণেও নদীটি ভরাট হচ্ছে। ভালুকা খিরু ব্রীজের দক্ষিণ পাড়ে প্রায় ১৫ বছর আগে গড়ে উঠা শেফার্ড গ্রুপের শেফার্ড ডায়িং ফ্যাক্টরীর বিষাক্ত বজর্য দিয়ে দূষণ শুরু করে খিরু নদীর পানি। আর সম্প্রতি পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড খারুয়ালী গ্রামের গজারীয়া খালপাড়ে গড়ে উঠা গ্লোরী ডায়িং ফ্যাক্টরীটি বজর্য শোধন যন্ত্র থাকলেও তা শুধুই যে লোক দেখানো, তা এখন সকলেরই জানা। পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে ফ্যাক্টরী কৃর্তপক্ষের সুসম্পর্ক থাকায় কারখানার বিষাক্ত বজর্য খিরু নদিতে ফেলতে তাদের কোন সমস্যা হচ্ছেনা। তারা সরাসরি মোটা পাইপের মাধ্যমে বর্জ্য খিরু নদীতে ফেললেও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের লোকজন যেনো দেখেও না দেখার ভান করছেন বছরের পর বছর। আর এসব ব্যাপারে এলাকার কেউ প্রতিবাদ করলে কারখানার পালিত গুন্ডা দিয়ে মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্ন ধরণের ভয়ভীতি দেখানোর ঘটনাও রয়েছে। এভাবে চলছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা অর্ধশতাধিক ডায়িং ফ্যাক্টরী। উপজেলার কাঠালী গ্রামে অবস্থিত আরটি ডায়িং ফ্যাক্টরীটির ইটিপি প্ল্যান্টের ড্রেনগুলো শুকিয়ে চৌচির হয়ে থাকলেও পরিবেশ অধিদপ্তর ছাড়পত্র দিয়েছে ইটিপি কার্যক্রম সচল বলে। তাছাড়া কালার মাস্টার (এসকিউ), বেলী ডায়িং, পিএনীট, স্কয়ার নীট ফেব্রিক্স, স্কয়ার নীট ফ্যাশন, হাওয়াওয়েল টেক্সটাইল, এনআরজি কম্পোজিট, এফএম ইয়ার্ণ ডায়িং, শাহাব ফেব্রিক্স, টিএম টেক্সটাইলস, এক্সপেরিয়েন্স টেক্সটাইলস, এনভয় টেক্সটাইলস, কনজিউমার নিটেক্স, এমএল ডায়িং, প্যাসিফিক কটন, গ্রীন টেক্সটাইলস, এসমেসিসহ উপজেলার ভালুকা হবিরবাড়ি, ভরাডোবা, মেদুয়ারী ও মল্লিকবাড়ী ইউনিয়নে প্রায় শতাধিক ডায়িং, ক্যামিক্যাল, ও কীটনাশক ঔষধের ফ্যাক্টরী রয়েছে যা থেকে নির্গত বিষাক্ত কালো বজর্য লাউতি খালসহ বিভিন্ন খাল বিল হয়ে প্রতিনিয়ত খীরু নদীতে নামছে। বেশ কিছু ফ্যাক্টরীতে ইটিপি থাকা সত্বেও তা বন্ধ থাকে বলে এলাকার লোকজন জানায়। ছোট ছোট খাল দিয়ে বর্জ্য পানি নামায় মাটি পুড়ে কালোবর্ণ হয়ে গেছে। এছাড়া কিছু কিছু এলাকায় যেমন ভরাডোবা গ্রামে কয়েকটি মিলের দূষিত বজর্য ভূগর্ভস্থ পানির স্তরে মিশে যাওয়ায় টিউবওয়েলের পানির সাথে প্রায় বিষাক্ত ময়লা পানি বের হচ্ছে। যে পানি খেয়ে ওই গ্রামে অসংখ্য মানুষ ডায়ারিয়া ও চর্মরোগসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এদিকে বেশ কয়েক বছর ধরে এলাকার কতিপয় বালু ব্যবসায়ী বষার্ এলেই শত শত ট্রলার যোগে ভ্রহ্মপুত্র ও শীতলক্ষা নদী হতে বালি আমদানী করেন। আর সেই বালু উত্তোলন করে রাখা হয় ভালুকা থানা সংলগ্ন খিরু নদীর চড়াসহ ব্রীজের দুই পাড়ে। এসব বালু পাহাড়ের মতো স্তুপীকৃত করে রাখা হয়। আস্তে আস্তে বালু নদীতে নেমে ভরাট হয়ে নাব্যতা হারিয়ে ফেলছে। এতে সেচ কাজ ব্যহত হওয়ায় চাষাবাদে এলাকার কৃষকরা বেকায়দায় পড়েছেন। এতদ সত্বেও স্থানীয় প্রশাসন এর প্রতিকারে কোনরুপ কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেননা। ভালুকা শেফার্ড গ্রুপের ডিজিএম মো: মোখলেছুর রহমান জানান, আমরা সার্বক্ষনিক ইটিপি প্ল্যান্ট চালু রেখে আসছি। তিনি আরো বলেন, তাদের রয়েছে বায়োলজিক্যাল ইটিপি, ফলে তাদের মিলের বজের্যর কারণে নদির পানি নষ্ট হওয়ার কোন কারণ নেই। গ্লোরী ডায়িং মিলের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) মো: আফছার উদ্দিন ও প্রজেক্ট ম্যানেজার অনিক দাস জানান, তাদের ফ্যাক্টরীটি ইটিপি রয়েছে এবং তা দিয়ে বজর্য শোধনের পর খিরু নদীতে ফেলা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকতার কৃষিবিদ জেসমিন জাহান জানান, “ডাইং মিল হতে র্নিগত গাঢ়ো বজর্যপানিতে এ্যামুনিয়া বেশী থাকে অথার্ৎ ইউরিয়ার পরিমান অত্যধিক থাকে। যে কারনে, ধান গাছ খুব তারাতারি বেড়ে যায়, আর তাতে পাতাপঁচা রোগ বিস্তার হয়ে ফলন নষ্ট হয়, এছাড়া ফ্যাক্টরী হতে নির্গত বজর্য পানিতে কেমিক্যাল ও ধাতব পদার্থ থাকে যা গাছের খাদ্য হিসেবে ধানে মিশে যায় আর ওই ধানের চাল ভাত হিসেবে খেলে তা মানবদেহে স্লোপয়জন হিসেবে ক্ষতি করে, কারখানার বজর্য মিশ্রিত পানি খাল বিল নদী নালায় ফেলা বন্ধ করা প্রয়োজন ”। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ভালুকা আঞ্চলিক শাখার সদস্য সচিব কামরুল হাসান পাঠান কামাল জানান, পরিবেশ অধিদপ্তরের অসাধূ কর্মকতার্দের রহস্যজনক নিরবতার কারণে ডায়িং ফ্যাক্টরীগুলো ইটিপি ব্যবহার না করে তাদের বিষাক্ত বজর্য আশপাশের খাল বিল ও খিরু নদীতে ফেলে পরিবেশের চরম ক্ষতি করছে। পরিবেশ রক্ষায় আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে মানববন্ধন ও স্বারকলিপিসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ জানান, মিল কারখানার বিষাক্ত ধোয়া ও দূষিত বজের্যর কারণে যে ভাবে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ভালুকার পরিবেশ রক্ষায় নাগরিক আন্দোলন গড়ে তুলা প্রয়োজন। তাছাড়া উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সব সময়েই বিভিন্ন ধরণের প্রদক্ষেপ গ্রহণ করে চলেছে। উপজেলা নিবার্হী কর্মকতার্ সালমা খাতুন জানান, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠা মিল কারখানার বিষাক্ত বজর্য খিরু নদীসহ আশপাশ এলাকার খাল-বিল বা জলাশয়ে পড়ে অসহনীয় ভাবে পরিবেশ দূষণের ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বিভিন্ন ধরণের প্রদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পরিবেশ রক্ষায় যা যা করনীয় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা করা হবে।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com