পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগ পরীক্ষায় চতুর্থ ও সব ধাপ উত্তীর্ণ হয়েও চাকরি পেতে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে বরগুনার বেতাগী উপজেলার সজল চন্দ্র কর্মকার অন্তরের। পরিবারের দাবি, ভূমিহীন হওয়ায় চাকরিটা হচ্ছে না। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মূলত পটুয়াখালীর বাসিন্দা হলেও তথ্য গোপন করায় সজলের চাকরি নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। বরগুনা জেলা পুলিশ ও সজলের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সজল চন্দ্র কর্মকার অন্তর বরগুনার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ হোসনাবাদ গ্রামের অমল কর্মকারের সন্তান। আদি নিবাস পটুয়াখালী হলেও ২৮ বছর ধরে বেতাগীর এই ঠিকানাতে বসবাস করছে পরিবারটি। তবে অর্থাভাবে জমি কিনতে না পারায় ভূমিহীন রয়ে গেছেন তারা। সম্প্রতি কনস্টেবল পদে আবেদন করেন সজল। গত ১৪ নভেম্বর বরগুনা পুলিশ লাইন্সে শারীরিক যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। এরপর ১৭ ও ২৪ নভেম্বর লিখিত পরীক্ষা, মৌখিক ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষাতেও পাশ করেন। ২৫ নভেম্বর সাধারণ মেডিক্যাল পরীক্ষা ও ফিঙ্গার প্রিন্টের পর ৪ ডিসেম্বর সকালে ঢাকায় রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স হাসপাতালেও মেডিক্যাল পরীক্ষা করানো হয়। এরপর পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু হয়। বেতাগী থানা ও ডিএসবি থেকে সজলের ভাড়া বাড়িতে তদন্তে যায় পুলিশ। তাদের কাছে ভূমিহীনের সনদ জমা দিলেও স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় তাকে চাকরির জন্য সুপারিশ করা হয়নি।
সজল বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখে আসছি, পুলিশে চাকরি করে দেশসেবা করবো। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে পরীক্ষা দেই। সব কিছুতে পাস করেছি। এরপর পুলিশ ভেরিফিকেশন শুরু হয়। বেতাগী থানা ও ডিএসবি থেকে আমার ভাড়া বাড়িতে তদন্তে আসে। তাদের কাছে ভূমিহীন সার্টিফিকেট জমা দিয়েছি। যারা ফিঙ্গার দিয়ে এসেছিল, তাদের ফোন দিয়ে চাকরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। রবিবার (১২ ডিসেম্বর) বরগুনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে গিয়ে এসপি স্যারকে পাইনি। অনেকক্ষণ পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম স্যার এসে জানান, ‘তোমার সব ঠিক থাকলেও স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় তোমার চাকরিটা আমরা দিতে পারছি না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করে দেখো কিছু করতে পারো কি-না।’’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মহরম হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সজলের পৈতৃক বাড়ি পটুয়াখালীর লাউকাঠি গ্রামে। তারা বরগুনার বেতাগীতে থাকে। অথচ আবেদনপত্রে তারা সে তথ্য দেয়নি। সে পটুয়াখালী থেকে আবেদন করতে পারতো, কিন্তু তা করেনি।’
সজলের বাবা অমল কর্মকার বলেন, ‘আমার পরিবারের সবার বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা বরগুনার বেতাগীতে। তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধন সবকিছুই বেতাগীতে, তাই এখান থেকেই আবেদন করেছে।’ তবে ভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, ‘সজল সবদিক দিয়েই পারফেক্ট (স্বয়ংসম্পূর্ণ)। মেধা তালিকায় চতুর্থ হয়েছে। পুলিশে নিয়োগ পেতে হলে জেলার স্থায়ী বাসিন্দা হতে হয়। শুধু জন্ম সনদ বা এনআইডি এখানে থাকলেই হবে না। তার স্থায়ী ঠিকানা লাগবে। সেটি সজলের নেই। পটুয়াখালীতে তার চাচা ও বাবার কিছুটা জমি রয়েছে। সে যদি পটুয়াখালী জেলা থেকে আবেদন করতো তবে সেটি ঠিক ছিল।’
সজলের বাবা অমল কর্মকার বলেন, ‘১৯৯২ সাল থেকে বরগুনায় বসবাস করছি। ছেলেমেয়ের জন্মও বরগুনায়। পটুয়াখালী জেলার লাউকাঠি গ্রামে বাবার নামে পৈতৃক ভিটে রয়েছে তবে সেখানে আমার নামে আধা শতাংশ জমি থাকতে পারে। এ ছাড়া আমার নামে কোথাও কোনও জমি নেই। পুলিশি তদন্তের সময় আমরা সেটা জানিয়েছি। শুধু জমি না থাকার কারণে আমার ছেলেটার চাকরি হচ্ছে না। আমি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। তিনি যেন আসপিয়ার মতো আমার ছেলেটার দিকেও তাকায়।’
বরগুনা পাবলিক পলিসি ফোরামের আহ্বায়ক মো. হাসানুর রহমান ঝন্টু বলেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগের বিষয়ে বেশ কয়েকটি ঘটনা আলোচনায় এসেছে। জাতীয় পরিচয়পত্র থাকার পরও ভূমিহীন হলে তার চাকরি হবে না, এটা খুবই অমানবিক ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উচিত বিষয়টির সমাধান করা।’ বরগুনা পুলিশ সুপার মুহম্মদ জাহাঙ্গীর মল্লিক বলেন, ‘স্থায়ীভাবে জমি না থাকার কারণে আমরা কিছু করতে পারছি না। তবে সজলের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, যে নির্দেশ পাবো সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বরগুনা জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সজল ভূমিহীন হলে তাকে জমি দেওয়ার বিষয়টি জেলা প্রশাসন দেখবে। এদিকে, সম্প্রতি পুলিশের কনস্টেবল পদে নিয়োগে ভূমি না থাকায় জটিলতায় পড়েন বরিশালের আসপিয়া ইসলাম ও খুলনার মীম আক্তার। তবে তারা দুজনই পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর।