ঋতু বৈচিত্রের এই দেশে ‘ঋতুর বৈচিত্র্য’ অনুভব করতে গ্রামবাংলার প্রকৃতির কোনো বিকল্প নেই। যদিও দিন দিন সেই বৈচিত্র্য কমে যাচ্ছে।শীত এবং বর্ষাকাল স্পষ্টভাবে বোঝা গেলেও অন্যান্য ঋতুর বৈচিত্র্য খুব একটা দেখা যায় না। তবে নদ-নদীর চর এলাকা, বিরানভূমিতে কাশফুল ফুটলেই বোঝা যায় শরৎ এসেছে! নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও ও বন্দর উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে চরাঞ্চল। এসব চরাঞ্চলে বছরের এই সময়টায় কাশফুলের শুভ্রতায় ছেয়ে যায়। কাশফুল ফুটলেই বোঝা যায় ঋতুর পরিবর্তন ও শরতের সৌন্দর্য। এ সময় আকাশে ভাসতে থাকে খ- খ- সাদা মেঘ। কখনো দেখা যায় ঝকঝকে নীলাকাশে ছোপ ছোপ সাদা মেঘের ভেসে বেড়ানো। শরতে কাশফুলের পাশাপাশি ফোটে ছাতিম ফুল। শম্ভূপুরা ইউনিয়নের হোসেনপুর ও দুর্গাপ্রসাদ হতে সড়কের পাশে থাকা ছাতিম গাছ ভরে উঠেছে সাদা সাদা ফুলে। সন্ধ্যা নামলেই ফুল থেকে ছড়িয়ে পড়ে তীব্র সুগন্ধ, পথচারীদের মুগ্ধ করে সেই সুগন্ধ। কাশফুল এবং ছাতিম এখনো মনে করিয়ে দেয় ঋতুর বৈচিত্র্য। সরেজমিনে সোনারগাঁও উপজেলার দুর্গাপ্রসাদ গ্রামের পাশে বালুভূমিতে ও উপজেলার সোনারগাঁ এলাকার স্বপন জানান লাঙ্গলবন্দ নদীর কোল ঘেঁষে চরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়-নদ-নদীর পাড়জুড়ে সাদা মেঘ যেন মাটি স্পর্শ করছে। বাতাসে ঢেউ তুলছে কাশফুল। নদ-নদীর দুই পাড়ের দীর্ঘ এলাকা শুধু কাশফুলের শুভ্রতা। এদিকে কাশফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে এই সময়ে অনেকেই ঘুরতে আসে নদীর পাড়ে। কাশফুলের সঙ্গে ছবি তুলতে ব্যস্ত সময় কাটাতে দেখা যায় অনেককেই। সোনারগাঁও উপজেলার নদ তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা মাসুম মাহমুদ বলেন, প্রতিবছর শরৎতে আমাদের এই নদীর পাড়ে প্রচুর কাশফুল ফোটে। কাশফুলের সাদা রঙে চারপাশ ছেয়ে যায়, চমৎকার লাগে দেখতে। নদীর পাড়ে অনেক লোকজন আসে ঘুরতে। তিনি আরও বলেন-প্রকৃতির সৌন্দর্যের কোনো তুলনা হয় না।এই কাশফুল প্রকৃতির বুকে ভিন্ন রকম সৌন্দর্য এনে দেয়। কাশফুল দেখলেই বোঝা যায় শরৎ। তাছাড়া বাণিজ্যিকভাবেও এগুলো বিক্রি হচ্ছে। সোনারগাঁও সরকারি ডিগ্রী কলেজের অনার্স পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী সুস্মিতা সাহা বলেন-কাশফুল বালু মিশ্রিত মাটিতে প্রচুর জন্মে, ভাটিটিবন্দর মেঘনা নদীর পাড়ে, দুর্গাপ্রসাদ এলাকায় বালুর বিশাল মাঠে, বন্দরের লাঙ্গলবন্ধ চরাঞ্চল এলাকায় প্রচুর জন্মে। যদিও এই কাশফুলের সুগন্ধ নেই তারপরও গ্রাম বাংলার মানুষ বিকালে কাশফুরের ছায়াতলের সামনে এসে বসে গল্প আড্ডায় মেতে উঠেন। বিশেষকরে কাশফুলে শরৎ ঋতুতেই বেশি হয়ে থাকে। শীত কালেও কিছু কিছু ফুটে থাকে। এই কাশফুলকে নিয়ে শিল্পীদের গানের ভাষায় উচ্চারিত হয়ে থাকে, কাশফুল কাশফুল আকাঁ আনমনে বাকা ছবিগুলে ছুঁয়ে থাকে প্রিয়া তুমি আমারি. প্রিয়া তুমি আসবে কখন বল আমারে। আজিই আমার অভিলাশ নীলচরে এসো হৃদয় খুলে কাশফুলে.. নিশিবেলা হলো তরে দেখা সমিরন রহে উড়ে উড়ে কাশবন দেবে ওগো. অন্তরে গুরু হে খোদা বলিযে সাদা বাচি যত দিন নিল চরে যেন মরে। রহি আমি ক্ষন তাছাড়াও হিন্দ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে থাকা নৃগোষ্ঠীও পালন করে নানাব্রত ও আচার। ভাদ্ররের ভাপসা গরমে পাকে তাল গ্রাম বাংলার বাড়িতে বাড়িতে হবে তালের পিঠা আর এই পিঠা উপলক্ষ করে উৎসবে মাতবে গ্রাম বাসি। শরৎতের মন মাতানো পকৃতে যেন মন যে কি চায় তা বুঝাভার। শরৎতের সৌন্দর্যই যেন এই কাশফুল। কাশফুল বন দেখতে আসা রাসেল মাহমুদ সহ আরো অনেক দর্শনার্থীদের সাথে আলাপকালে তারা জানান-গ্রামবাংলার প্রকৃতি পাল্টে যাচ্ছে দিন দিন, উজার হচ্ছে গাছপালা, ভরাট হচ্ছে জলাশয়। নদ নদীর পাড়ের মাটি বিলীন হয়ে যাচ্ছে ‘বালুখেকোদের’কবলে পড়ে। প্রতিবছরই শুকনো মৌসুমে নদ-নদীর পাড়ে মাটি কেটে নিয়ে বিক্রি করছে অনেকেই।এতে করে নদীপাড়ের ভারসাম্য হারাচ্ছে। উজার হচ্ছে সমতল চরাঞ্চল। এদের কবলে পড়ে কাশফুলও হারিয়ে যেতে বসেছে। অতীতের মতো কাশফুল চোখে পড়ে না এখন। প্রকৃতিতে শরৎ আসে নতুন রূপ নিয়ে। আর কাশফুল শরতের রূপের মধ্যে অন্যতম।এ সময় ছাতিমসহ নানা ধরনের সুগন্ধমুক্ত বুনো ফুল ফুটতে থাকে। আকাশে ভেসে বেড়ায় সাদা খ- খ- মেঘ। মেঘের ফাঁক গলে দেখা যায় স্বচ্ছ নীলাকাশ। আর ভোরে হালকা শিশির এবং মাঝেমধ্যে হালকা কুয়াশাভাব জানান দেয় দুয়ারে আসছে শীত। শরৎ উপভোগ করতে হলে তাকে দেখতে জানতে, অনুভোব করতে হলে যেতে হবে মাটির কাছাকাছি, নদীর কাছাকাছি, গ্রামের কাছাকাছি। কেননা সেখানেই যে সৌনর্যের সংসার পাতে নিরমল শরৎ। তাই শরৎকে সবাই উপলব্ধি করতে তার কাছে ছুটে যায়।