মহান বিজয় দিবস বাঙালী জাতির ইতিহাসে এক অনন্য গৌরব উজ্জ্বল দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে অর্জিত হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের চূড়ান্ত বিজয়, বিশ্বমানচিত্রে জন্ম নেয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।
৩০ লাখ শহীদের আত্মদান আর দুই লক্ষ মা-বোনের ত্যাগ-তিতিক্ষা এবং কোটি বাঙালির আত্মনিবেদন ও গৌরবগাঁথা গণবীরত্বে পরাধীনতার অভিশাপ থেকে মুক্তি পায় বাঙালি জাতি।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস ও বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন এবং মুজিববর্ষের শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনের গ্রহনের লক্ষ্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। কর্মসূচিতে মন্ত্রণালয়ের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী অংশ নেন।
সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রণালয় প্রাঙ্গণে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। অতঃপর “জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ ও ডিজিটাল প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার” শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভায় বক্তারা ৭১’র বীর শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রাম শেষে ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) হানাদার পাকিস্তানী বাহিনী যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে নতুন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এবং যে প্রত্যয় ও অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশের বিজয় অর্জিত হয়েছে সেই প্রত্যয় ও অঙ্গীকার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ গঠনে কাজ করে যেতে হবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অগ্রগতি, জনগণের জীবন মান বৃদ্ধি পেয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার তথ্য ও প্রযুক্তি খাতে আয় করেছে।
তিনি বলেন, এছাড়া, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় ও বিচক্ষণ নেতৃত্বের কারণে জাতিসংঘে আমাদের অবস্থান আজ অত্যন্ত সম্মানের আসনে। বিশ্বদরবারে বাংলাদেশ একটি দায়িত্বশীল ও প্রগতিশীল রাষ্ট্র এবং উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে পরিচিত।
প্রতিরক্ষা সচিব বলেন, বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা ইতিহাসের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতিকে মুক্তির মহামন্ত্রে উজ্জীবিত করে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের পথে এগিয়ে নিয়ে যান।
তিনি বলেন, ৪৮-এ বাংলা ভাষার দাবীতে গড়ে ওঠা আন্দোলনের পথ বেয়ে ৫২-এর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, ৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ৫৬’র সংবিধান প্রণয়নের আন্দোলন, ৫৮’র সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ৬২’র শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ৬৬’র বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার আন্দোলন, ৬৮’র আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ৬৯’র রক্তঝরা গণঅভ্যুত্থান, ৬-দফা ভিত্তিক ৭০’র ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ খ্যাত কালজয়ী ঐতিহাসিক ভাষণ ও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন ও প্রভূত ঘটনা প্রবাহের মধ্য স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি।
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ও আদর্শকে লালন করে দেশকে সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মহান ম্কু্িতযুদ্ধের চেতনায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে সকলের প্রতি তিনি আহ্বান জানান।
আলোচনা সভা শেষে মন্ত্রণালয়ের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীর উপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্য চিত্র প্রর্দশন করা হয়।
পরে মন্ত্রণালয়ের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারী জাতীয় পতাকাযুক্ত পতাকা দন্ড হাতে বিকাল সাড়ে চারটায় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পরিচালিত সুবর্ণজয়ন্তী ও মুজিববর্ষের শপথ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এরপর মোনাজাতের মধ্যে দিয়ে দিনের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।