বাংলাদেশ নেভাল একাডেমীতে প্রশিক্ষণ শেষে নতুন কমিশন অর্জন করা নৌবাহিনীর অফিসারদের দেশের প্রয়োজনে সদা প্রস্তুত থাকতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ‘মিডশিপম্যান-২০১৯ আলফা’ ও ‘ডিরেক্ট এন্ট্রি অফিসার-২০২১ ব্রাভো’ ব্যাচের রাষ্ট্রপতি কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সততা, সঠিক নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে সেনা ও বিমানবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের প্রয়োজনে তোমাদের সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তোমাদের চমৎকার কুচকাওয়াজ উপভোগ করতে পেরে আমি অত্যন্ত মুগ্ধ। তোমরা তোমাদের অদম্য আগ্রহ, দৃঢ় মনোবল ও সাহসী মানসিকতার পরিচয় দিয়েছো। আমি আশা করি, চাকরি বা ব্যক্তিগত জীবনের যেকোনো সংকটে তোমরা এ ধরনের সুবিবেচনা ও নেতৃত্ব সুলভ গুণাবলীর পরিচয় দেবে। কর্মজীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে দেশমাতৃকার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে তোমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। তোমাদের মনে রাখতে হবে, যে কঠোর প্রশিক্ষণ তোমরা শেষ করলে তা তোমাদের উৎকর্ষ অর্জনের সূচনা মাত্র।’
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী আজ শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিম-লেও অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, দক্ষ ও পেশাদার বাহিনী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের যুব সমাজ থেকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর জন্য যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুগোপযোগী একাডেমি গড়ে তোলা ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। সেটি বাস্তবায়নে ২০১৮ সালে বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স উদ্বোধন করা হয়। এই কমপ্লেক্সের মাধ্যমেই নেভাল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ সুবিধা আজ বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এবারের শীতকালীন কুচকাওয়াজে বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে প্রশিক্ষণ শেষ করে ৪৪ জন নবীন কর্মকর্তা নৌবাহিনীর কমিশন্ড অফিসার হিসেবে সাব লেফট্যানেন্ট পদমর্যাদায় উন্নীত হন।
বিভিন্ন ধরনের নৌযানের ক্রেতা থেকে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী প্রতিষ্ঠা পাবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘নৌ বাহিনীর ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড ইতিমধ্যে প্যাট্রল ক্রাফট ও লার্জ প্যাট্রল ক্রাফট নির্মাণের সক্ষমতা অর্জন করেছে। এছাড়াও বাংলাদেশ নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডে আধুনিক যুদ্ধ জাহাজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। যার মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ক্রেতা থেকে নির্মাতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমার বিশ্বাস।
প্রধানমন্ত্রী জানান, গত নভেম্বর ২০২১ জার্মানি থেকে নতুন একটি এমপিএ (মেরিটাইম প্যাট্রল এয়ারক্রাফ্ট) বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর এভিয়েশন উইংয়ে যুক্ত হয়েছে এবং অপরটি আগামী ২০২২ সালের মে মাসে যুক্ত হবে। হেলিকপ্টার এবং এমপিএ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আধুনিক সকল সুবিধা সম্বলিত দ্বিতীয় হ্যাঙ্গারের নির্মাণ কাজও চলমান রয়েছে।
নৌ বাহিনীর সক্ষমতা আরও বৃদ্ধির লক্ষ্যে ভবিষ্যতে আরও অধিক উন্নত জাহাজ এবং আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাবমেরিন ও যুদ্ধ জাহাজগুলোকে পোতাশ্রয়ে নিরাপদ জেটি সুবিধা প্রদানের লক্ষ্যে কক্সবাজারের পেকুয়াতে আধুনিক বেসিন সুবিধা সম্বলিত স্থায়ী সাবমেরিন ঘাঁটি ‘বানৌজা শেখ হাসিনা’ নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমা লে উপকূলবর্তী এলাকায় নৌ বাহিনীর জাহাজসমূহের অপারেশানাল ও যোগাযোগ সুবিধা বৃদ্ধির জন্য ‘শের-ই-বাংলা ঘাঁটি’র নির্মাণ কার্যক্রম অনেক দূর এগিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক ও আর্থ- সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেশের জলসীমার সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সমুদ্রসম্পদের গুরুত্ব অনুধাবন করে ঐতিহাসিক ৬ দফায় নৌ বাহিনী সদর দফতর চট্টগ্রামে স্থানান্তরের দাবি জানিয়েছিলেন।
স্বাধীনতা পরবর্তীতে নৌ বাহিনীর সক্ষমতা বাড়াতে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে ‘টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস এন্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট’ প্রণয়ন করেন যা ছিল বাংলাদেশের সমুদ্র নীতির ভিত্তি। এরই ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যেই প্রতিবেশী দেশসমূহের সঙ্গে আমাদের সমুদ্রসীমা সুনির্দিষ্টকরণ সম্ভব হয়েছে এবং ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কিলোমিটার বিশাল সমুদ্র এলাকায় আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
১৯৯৬ সালে গঠিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নৌ বাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির কর্মকা- তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পরে নৌ বাহিনীর জন্য আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম ও প্রযুক্তি সংযোজনের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা গর্বের সঙ্গে বলতে চাই যে, ২০১৭ সালে নৌ বহরে ‘বানৌজা নবযাত্রা’ এবং ‘বানৌজা জয়যাত্রা’ নামক দুটি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীকে একটি সত্যিকারের পূর্ণাঙ্গ ত্রিমাত্রিক নৌ বাহিনী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। এর ফলে প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ আমাদের বিশাল সমুদ্রের নিরাপত্তা বিধানের পাশাপাশি মানব পাচার ও চোরাচালান রোধ, জেলেদের নিরাপত্তা বিধান, বাণিজ্যিক জাহাজের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতকরণে নৌ বাহিনী আরও বলিষ্ট ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে বলে আমি মনে করি।
সরকার প্রধান বলেন, নতুন নতুন জাহাজ এবং সমরাস্ত্র সংযোজনের পাশাপাশি এসব অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌ বাহিনীর সাংগঠনিক কাঠামো বৃদ্ধি এবং সময়োপযোগী করার ক্ষেত্রেও আমাদের সরকার কাজ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি নৌ প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ঢাকা’র পদনাম পরিবর্তন করে ‘কমান্ডার ঢাকা নৌ অ ল’ করা হয়েছে এবং একই সঙ্গে পদবি কমডোর থেকে রিয়ার এডমিরালে উন্নীত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নে আমাদের সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্য থেকে উন্নত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামরিক বাহিনীর জন্য যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলার লক্ষ্যে যুগোপযোগী একাডেমি প্রতিষ্ঠা ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। তার সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত ‘বঙ্গবন্ধু কমপ্লেক্স’ উদ্বোধন করা হয়ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নৌ বাহিনী আজ শুধু দেশেই নয়, আন্তর্জাতিক পরিম-লেও অত্যন্ত সুশৃঙ্খল, দক্ষ এবং পেশাদার বাহিনী হিসেবে মর্যাদা লাভ করেছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনসহ সকলক্ষেত্রে তাদের আত্মত্যাগ ও কর্তব্যনিষ্ঠা বাংলাদেশের জন্য বয়ে এনেছে বিরল সম্মান ও মর্যাদা, যা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিও অত্যন্ত উজ্জ্বল করেছে।
তরুণ নৌ কর্মকর্তাদের প্রতি প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ নেভাল একাডেমিতে চলমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ করে ভবিষ্যত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তোমরা তোমাদের অদম্য আগ্রহ, দৃঢ় মনোবল ও সাহসী মানসিকতার পরিচয় দিয়েছ। আমি আশা করি, চাকরি বা ব্যক্তিগত জীবনের যে কোন সংকটে তোমরা এ ধরনের সুবিবেচনা ও নেতৃত্বসুলভ গুণাবলীর পরিচয় দেবে।
তিনি বলেন, কর্মজীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বলীয়ান হয়ে দেশ মাতৃকার সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তা রক্ষার্থে তোমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাবে বলে আমার বিশ্বাস। তোমাদের মনে রাখতে হবে, যে কঠোর প্রশিক্ষণ তোমরা শেষ করলে তা তোমাদের উৎকর্ষ অর্জনের সূচনা মাত্র। সততা, সঠিক নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগের মন্ত্রে বলীয়ান হয়ে সেনা ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দেশের প্রয়োজনে তোমাদের সদাপ্রস্তুত থাকতে হবে। আমি আশা করবো তোমাদের দেশপ্রেম, শৃঙ্খলাবোধ ও কর্তব্যনিষ্ঠা তোমাদের অধিনস্তদেরও একইভাবে দেশের প্রয়োজনে আত্মনিবেদনে অনুপ্রাণিত করবে।
প্রধানমন্ত্রী আসছেন, উচ্ছ্বসিত মালদ্বীপ প্রবাসীরা
মালদ্বীপে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আলোচনায় এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফর। মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ও উপ রাষ্ট্রপতির বাংলাদেশ সফরের পর, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাচ্ছেন মালদ্বীপে। এ নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। প্রধানমন্ত্রীর সফরের মধ্য দিয়ে দুদেশের সম্পর্ক আরও জোরদার হওয়ার মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীদের নানান সমস্যার সমধান হবেÍএমনই প্রত্যাশা তাদের। মালদ্বীপে প্রায় এক লাখ বাংলাদেশি আছেন। এর মধ্যে প্রায় ৫০ হাজারই ‘অনিয়মিত’। প্রবাসীদের বেশিরভাগই কাজ করছেন পর্যটন খাতে। এ ছাড়া সেলসম্যান, সিকিউরিটি গার্ড, নির্মাণ শ্রমিক হিসেবেও কাজ করছেন অনেকে। এর বাইরে মাছ ধরার কাজেও অনেক বাংলাদেশি নিয়োজিত।
মালদ্বীপে জনশক্তির চাহিদা থাকলেও নতুন করে বাংলাদেশি কর্মী নিচ্ছে না দেশটি। পুরনো অনেক কর্মীও চুক্তি নবায়ন করতে না পেরে অবৈধ হয়ে পড়েছেন। ২২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মালদ্বীপ সফরে যাওয়ার কথা। এতে দেশটিতে নতুন করে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার আশা দেখছেন বাংলাদেশিরা।
মালদ্বীপে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে শিক্ষকতা করছেন মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি মালদ্বীপে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সংগঠন বাংলাদেশ কমিউনিটি ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বললেন, ‘মালদ্বীপ বাংলাদেশের শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে যে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে সেটি প্রত্যাহার হওয়া জরুরি। এটি আমাদের জন্য অমর্যাদার। আমাদের দেশের কর্মীরা এখানে ভালোভাবেই কাজ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিষয়টির সমাধান হলে আমাদের দেশের অনিয়মিত কর্মীরা নিয়মিত হতে পারবেন। নতুন কর্মী পাঠানোর সুযোগও তৈরি হবে।’ শুধু অদক্ষ কর্মী নয়, মালদ্বীপে প্রশিক্ষিত জনবল পাঠানো সম্ভব বলেও মনে করেন সেখানকার প্রবাসীরা। সাইফুল ইসলাম জানালেন, পর্যটনের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষিত লোকজনকে এদেশে পাঠালে তারা বেশি বেতনে কাজ করতে পারবেন। এ ছাড়া, মালদ্বীপে ডাক্তার-নার্সের চাহিদাও আছে।
মালদ্বীপে বেশি খারাপ সময় পার করছেন অনিয়মিত হওয়া প্রবাসীরা। যে কারণে তারা ন্যায্য মজুরি ও চিকিৎসা সুবিধা পাচ্ছেন না। দেশে টাকা পাঠাতে তাদের নির্ভর করতে হয় হুন্ডির ওপর। মালেতে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেডের (এনবিএল) অধীনে একটি মানি ট্রান্সফার এজেন্ট থাকলেও পূর্ণাঙ্গ ব্যাংকিং সুবিধা নেই সেখানে। ছুটি নিয়ে দেশে আসারও সুযোগ নেই অনিয়মিতদের। এমনকি অনিয়মিত কেউ মারা গেলেও তার মরদেহ চাঁদা তুলে দেশে পাঠাতে হয়। মালদ্বীপ প্রবাসী জনকল্যাণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি মো. আব্দুল কাদের বলেন, ‘এখানকার পুলিশ ধরপাকড় করে না ঠিকই, তবে অনিয়মিতরা অনেক সুযোগ-সুবিধা পান না। আমরা আশা করছি, প্রধানমন্ত্রীর সফরে একটা সমাধান আসবে। প্রবাসীদের অনেকেই স্থায়ী কোনও কাজ পাচ্ছেন না। প্রতিদিনিই কাজের সন্ধান করতে হচ্ছে তাদের। কাজ পেলেও ন্যায্য মজুরি পান না অনেকে। বেতনও নিয়মিত পান না।’
মো. রবিউল আলম দীর্ঘ সময় মালদ্বীপে অবস্থান করছেন। অবৈধ শ্রমিকদের প্রসঙ্গে বলেন, মালদ্বীপে অনিয়মিতরা বেতন পান স্থানীয় মুদ্রা রুফিয়ায়। কিন্তু দেশে টাকা পাঠাতে প্রয়োজন হয় ডলারের। কোনও ব্যাংকে লেনদেন করার সুযোগ নেই অনিয়মিতদের। তাদের ব্যাংক একাউন্ট খোলারও সুযোগ নেই। ফলে তাদের ডলার সংগ্রহ করতে হয় কালোবাজার থেকে। এরপর সেটা পাঠাতে হয় হুন্ডির মাধ্যমে।
বৈধ কর্মীদের টাকা পাঠানো নিয়েও জটিলতা রয়েছে বলে জানান রবিউল আলম। তিনি বলেন, ‘মালদ্বীপ থেকে দেশে টাকা পাঠাতে খরচ পড়ে অনেক। সরকারিভাবে ১ ডলারে বিপরীতে ১৫ রুফিয়া নির্ধারিত। কিন্তু এই দামে ডলার পাওয়া যায় না। ১ ডলার দেশে পাঠাতে ১৬-২০ টাকা খরচ হয়ে যায়। বাংলাদেশি কোনও এজেন্ট এখানে থাকলে আমাদের এ জটিলতা হতো না। আশা করি প্রধানমন্ত্রীর সফরে বিষয়টি আলোচনায় আসবে।’ মালদ্বীপে দীর্ঘদিন ব্যবসা করছেন বাবুল হোসেন। ঢাকা ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করেন তিনি। তবে পরিবহন ব্যয় বেশি হওয়ায় ব্যবসা কঠিন হয়ে পড়ছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, কার্গো সার্ভিস চালু করা গেলে এখানে বাংলাদেশের বাণিজ্য আরও বাড়বে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফরে বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি প্রবাসীদের সমস্যাও আলোচনায় আসবে বলে জানালেন মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাই কমিশনার রিয়ার অ্যাডমিরাল নাজমুল হাসান।
তিনি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফরে দ্বিপক্ষীয় নানা বিষয়ে আলোচনা হবে। অনিয়মিত কর্মীদের নিয়মিত করার বিষয়েও আলোচনা হবে। এ ছাড়া বাণিজ্য বৃদ্ধি ও নতুন কর্মীর ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারও থাকবে এজেন্ডায়।’