সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:২৮ অপরাহ্ন

ঝুলন্ত ব্রীজ জিপ লাইনিং ও ক্যাবল কারে শেরপুর গজনী অবকাশে যোগ হলো নতুন সম্ভাবনা

জাহিদুল খান সৌরভ শেরপুর :
  • আপডেট সময় সোমবার, ২০ ডিসেম্বর, ২০২১

ভারত সীমান্ত ঘেষা উঁচু-নিচু পাহাড় বেষ্টিত  নৈসর্গিক সৌন্দর্যের অপরুপ লীলাভূমি গজনী অবকাশ। শীতকালে নতুন বছরের শুরুতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পরিবার নিয়ে গজনীতে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।  গারো পাহাড়ের গজনী অবকাশের পাদদেশে অবস্থিত সারি সারি শাল, গজারি, সেগুন, ছোট-বড় মাঝারি টিলা, লতাপাতার বিন্যাস যা প্রকৃতি ও পর্যটন প্রেমীদের মনে  দোলা দিয়ে যায়। শেরপুর জেলা শহর থেকে মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে ১৯৯৩ সালে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি গড়ে তোলা হয়। ঝিনাইগাতী উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের প্রায় ৯০ একর পাহাড়ি এলাকা জুড়ে এর অবস্থান। কিন্তু দীর্ঘদিন করোনা মহামারী কারনে থমকে গিয়েছিল বৃহত্তর ময়মনসিংহ এবং উত্তরাঞ্চলের প্রধান আকর্ষণীয় এই পর্যটনকেন্দ্রটি। এবার ভ্রমন পিপাসুদের নজর কাড়তে নানা পরিকল্পনা ও উদ্যেগ গ্রহন করেছে শেরপুর জেলা প্রশাসন। এরই ধারাবাহিকতায় ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে গজনী অবকাশে নির্মিত হয়েছে ঝুলন্ত ব্রীজ, জিপ লাইনিং ও ক্যাবল কার। যেখানে ঝুলন্ত ব্রীজ দিয়ে পাহাড়ের এক টিলা থেকে অপর টিলায় যাতায়াতের সুবিধা পাবে পর্যটনরা। ক্যাবল কারে চড়েও উপভোগ করতে পারবেন দুই পাহাড়ের মধ্যকার অনাবিল সৌন্দর্য।গত শনিবার (১৮ ডিসেম্বর) দুপুরে ওইসব স্থাপনার উদ্বোধন করেন শেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশিদ। ব্যবসায়ী আব্দুর রশীদ বলেন, ঝুলন্ত ব্রীজ, জিপ লাইনিং ও ক্যাবল কার গজনী অবকাশে নতুন মাত্রা যোগ হলো। নিচের লেক গুলো পাহাড়ী ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। জেলা প্রসাসন থেকে সেটাও ঠিক করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর করোনা কাটিয়ে উঠেছে দেশ। তাই আমরা আশাবাদী এবার গজনী অবকাশে বিপুল পর্যটক আসবে। আমরাও বিগত দুই বছরের ক্ষতি পুষিয়ে ভাল ব্যবসা করতে পারবো।গজনী অবকাশে ঘুরতে আসা রহিমা খাতুন জানান, অনেক মজা করলাম। পাহড়ে ঘুরলাম, কেনাকাটা করলাম। এখন গজনী অবকাশে নতুন কিছু যোগ হয়েছে। নতুর রুপে ফিরেছে গজনী।এবিষয়ে জেলা প্রশাসকের সহধর্মীনি জান্নাতুল ফেরদৌস প্রিয়া জানান, মাত্র ৬ মাসের মধ্যে ৩ টি রাইডের কাজ শেষ হয়েছে। এবার গজনীতে আন্তর্জাতিক মানের জিপ লাইনিং ও ক্যাবল কার নির্মিত হয়েছে। পার্বত্য জেলা রাঙামাটির আদলে তৈরি করা হয়েছে ঝুলন্ত ব্রীজ। আমার মনে হয় এবার পর্যটনপ্রেমীরা গজনীতে আসতে কার্পন্য করবে না। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জেলা প্রশাসককে ধন্যবাদ জানাই।এব্যাপারে জেলা প্রশাসক মো. মোমিনুর রশিদ জানান, মাত্র ৬ মা আগে শেরপুর জেলয় দায়ীত্ব গ্রহন করেছি। ভারত সীমান্তবর্তী গারো পাহাড়ে গজনী অবকাশ কেন্দ্রটি করোনার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সংস্কারের অভাবে বিভিন্ন স্থাপনা ছিল বেহাল অবস্থায়। বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবার জন্য টিকার ব্যবস্থা করেছেন। তাই এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে অন্য দেশের অনুকরনে ৩ টি রাইড নির্মানের প্রস্তুতি গ্রহন করি।এরই ধারাবাহিকতায় দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত ব্রিজ, ক্যাবল কার ও জিপ লাইনিং চালু করা হয়েছে। মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্নজয়ন্তীতে এসব রাইডের উদ্বোধন করতে পেরে আমি আনন্দিত ও গর্বিত। গজনীর লেকে কটেজ, ফিশিং ও কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে, এগুলোর প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তা বাড়াতে ইতিমধ্যে উর্ধ্বতন মহলে টুরিস্ট পুলিশ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। আপাতত আমরা স্থানীয়ভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রেখেছি। এগুলোর মাধ্যমে শেরপুরের পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ হবে। এর ফলে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে অনেক পর্যটকদের আগমনও বাড়বে বলে আমি বিশ্বাস করি।এছাড়া গজনীতে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীদের জন্য একটি কালচারাল সেন্টার গড়ে তুলতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যারা গরীব অসহায় সাংস্কৃতিমনা। যেসব আদিবাসী সংস্কৃতিকে ধারন করে, লালন করে। তারা কালচারাল সেন্টার থেকে আয় করতে পারবে। সেইসাথে ঝিনাইগাতি উপজেলার রাংটিয়া এলাকায় পর্যটকদের রাত্রিযাপনের জন্য একটি মোটেল নির্মাণ করা হবে। জামালপুরের বকশিগঞ্জ, শেরপুরের শ্রীবরদি, ঝিনাইগাতি, নাকুগাঁও সীমান্ত সড়ক দিয়ে যারা যাতায়াত করেন তারা এই মোটেলে রাত্রিযাপন করতে পারবেন। ইতিমধ্যে এই বিষয়ে পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানের সাথে আমি কথা বলেছি।উল্লেখ্যে পাহাড়, বনানী, ঝর্ণা, হ্রদ এসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মধ্যেও কৃত্রিম সৌন্দর্যের অনেক সংযোজনই রয়েছে গজনীতে। বিভিন্ন সময় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বেশ কিছু স্থাপনা ও ভাস্কর্য তৈরি করা হয়েছে। গজনীর প্রবেশমুখে মৎস্যকন্যা (জলপরী) আপনাকে স্বাগত জানাবে, তারপর রয়েছে ডাইনোসরের বিশাল প্রতিকৃতি, ড্রাগন ট্যানেল, দ-ায়মান জিরাফ, পদ্ম সিঁড়ি, লেক ভিউ পেন্টাগন, হাতির প্রতিকৃতি, স্মৃতিসৌধ, গারো মা ভিলেজ, ওয়াচ টাওয়ার, নিকুঞ্জ বন ও আলোকের ঝর্নাধারা। পূর্বে ছোট পরিসরে একটি চিড়িয়াখানা থাকলেও নতুন করে এতে সংযুক্ত করা হয়েছে মেছো বাঘ, অজগর সাপ, হরিণ, হনুমান, গন্ধগোকুল,সজারু,কচ্ছপ, বাজপাখি, খরগোশ এবং ভাল্লুকসহ প্রায় ৪০ প্রজাতির প্রাণী। শেরপুর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে পাহাড়ের বুক জুড়ে তৈরি হয়েছে সুদীর্ঘ ওয়াকওয়ে যেখানে পায়ে হেঁটে পাহাড়ের স্পর্শ নিয়ে লেকের পাড় ধরে হেঁটে যাওয়া যাবে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে। উঁচু পাহাড় কেঁটে তৈরি হয়েছে মনোমুগ্ধকর জলপ্রপাত। এছাড়াও রয়েছে আগত শিশু দর্শনার্থীদের জন্য চুকুলুপি চিলড্রেনস পার্ক, সেখানে ফ্লাইওভার গজনী এক্সপ্রেস ট্রেনের পাশাপাশি নতুন করে যুক্ত হয়েছে শিশু কর্নার, সুপার চেয়ার, নাগরদোলা ও মেরিগো। এছাড়াও গজনী অবকাশ কেন্দ্রে রয়েছে ক্রিসেন্ট লেক, লেকের ওপর রংধনু ব্রিজ, কাজী নজরুল ইসলাম ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিফলক, মাটির নিচে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাতায়াতের জন্য ড্রাগন ট্যানেল।অবকাশকেন্দ্রের অন্যতম আকর্ষণ সাইট ভিউ টাওয়ার। ৮০ বর্গফুট উচ্চ এ টাওয়ারে উঠলে দেখা যাবে পুরো গজনী অবকাশের পাহাড়ি টিলার অপরূপ সৌন্দর্যময় সবুজ দৃশ্য।




শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর









© All rights reserved © 2020 khoborpatrabd.com
Theme Developed BY ThemesBazar.Com